স্মার্ট সিটি মাথায় রেখে কাজ করছি: লাকসাম পৌরসভার মেয়র

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কুমিল্লা জেলার লাকসাম পৌরসভা ঘিরে জড়িয়ে আছে নারীশিক্ষার অগ্রদূত নবাব ফয়জুন্নেছা ও হিন্দু জমিদার বাবু অমূল্য কৃষ্ণ রায় চৌধুরীর নাম। রেলওয়ে জংশন ও ব্যবসার প্রাণকেন্দ্রের জন্যও এটি বিখ্যাত।

উপজেলা সদরের ৭ নম্বর ইউনিয়ন নিয়ে ১৯৮৪ সালে লাকসাম পৌরসভার যাত্রা শুরু হয়। ‘গ’ শ্রেণির পৌরসভা মর্যাদা নিয়ে এর যাত্রা শুরু হলেও ২০০২ সালে ‘খ’ শ্রেণিতে এবং ২০০৩ সালে এটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভার মর্যাদা লাভ করে। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এই পৌরসভার আয়তন ১৯ দশমিক ৪২ বর্গকিলোমিটার। দেড় লাখ লোকের এই লাকসাম পৌরসভায় ভোটার সংখ্যা ৪৬ হাজার ৯১৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২৩ হাজার ৬০০ জন। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বরের ভোটে নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক অধ্যাপক আবুল খায়ের।

তার আমলে লাকসাম পৌরসভায় অনেক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড হলেও এখনও অনেক কাজ বাকি। বর্তমানে প্রায় ২০০ কোটি টাকার কাজ চলছে। আরও নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।

সড়কে বিদ্যমান বিশৃঙ্খলা দূর করে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য আরও অনেক কাজ বাকি আছে। এছাড়া পৌরসভাকে স্মার্ট সিটি ও মডেল পৌরসভা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।

নাগরিক সুবিধা নিয়ে কথা হয় সাংস্কৃতিক কর্মী অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম হিরার সঙ্গে। তিনি বলেন, উন্নয়ন যদি পরিকল্পিত না হয়, তাহলে উন্নয়নের সুফল মানুষ পাবে না। আর যেসব উন্নয়নমূলক কাজ এখন বাস্তবায়িত হচ্ছে তা কঠোর তদারকির মাধ্যমে এর গুণগত মান নিশ্চিত করা দরকার। এছাড়া পৌরসভায় মিশুক, অটোরিকশার ছড়াছড়ি। অপরিকল্পিত যানবাহনের আধিক্যে সড়কে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও এখানে নেই কোনো ঈদগাহ, কবরস্থান ও বিনোদনমূলক পার্ক। পরিকল্পিত জীবনযাপনের জন্য এগুলো খুবই জরুরি।

সাংবাদিক নাছির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, লাকসামে বিগত সময়ে তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি, বর্তমানে বেশকিছু উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে। সুষ্ঠু জীবনযাপনের জন্য বিনোদন পার্ক, এমনকি কবরস্থান পর্যন্ত নেই।

লাকসাম জুয়েলারি সমিতির সভাপতি প্রবীর সাহা জানান, লাকসাম বাজারে আগে যানজট এবং বেহাল রাস্তাঘাটের কারণে মানুষকে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগে পড়তে হতো, এখন সে অবস্থা থেকে কিছুটা বের হতে পেরেছি।

জানতে চাইলে মেয়র অধ্যাপক আবুল খায়ের বলেন, সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছি। অবকাঠামো উন্নয়নে প্রযুক্তির ব্যবহার, যতটুকু সম্ভব অনলাইনে সেবা দেয়া, নারী কর্নার চালু, যোগাযোগ ও সেবা প্রদানের লক্ষ্যে অভিযোগ সেল গঠন এবং তাৎক্ষণিক নিষ্পত্তিকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।

তিনি যুগান্তরকে বলেন, দায়িত্ব পালনে কোনো ব্যর্থতা দেখি না। তিনি বলেন, দায়িত্ব নেয়ার আগে সড়ক, ব্রিজ-কালভার্ট, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ছিল খুবই নাজুক। এসব জায়গাসহ জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করেছি।

দৌলতগঞ্জের যানজট নিরসনে অনেক কাজ হয়েছে, যার সুফল মানুষ পাচ্ছে। নাগরিক সেবা নিতে এখন আর সাধারণ মানুষকে হয়রানির মুখে পড়তে হয় না। লাকসাম পৌরসভাকে দুর্নীতিমুক্ত আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, মানুষের কল্যাণ করতে পারলেই আমি সার্থক।

মেয়র বলেন, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মাথায় রেখে স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় কাজ করে যাচ্ছি। লাকসাম পৌরসভাকে স্মার্ট সিটি ও মডেল পৌরসভা হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অধ্যাপক খায়ের বলেন, দায়িত্ব নেয়ার পর আমি যে কাজ করেছি, আশা করি, আমার ওপর মানুষের আস্থা রয়েছে। আগামী দিনেও মানুষ এর মূল্য দেবে। ঘুষ ও দুর্নীতি নিয়ে তিনি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে এসেছি। পৌরসভাকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে।

জলাবদ্ধতা, খাল ও ফুটপাত, খাসজমি উদ্ধার এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন নিয়ে মেয়র বলেন, এ ব্যাপারে কমিটি গঠন করা হয়েছে। বর্তমানে নদী ও খালের সীমানা নির্ধারণে জরিপ চলছে। ফুটপাত দখলমুক্ত করে হকার্স মার্কেটে হকারদের পুনর্বাসন করা হয়েছে। মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন হচ্ছে। চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক বিক্রি, যৌন হয়রানি রোধে প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।

প্রতি মহল্লায় টিকাদান কেন্দ্রে নিজস্ব ডাক্তার রয়েছে। এখানে গরিব ও দুস্থ রোগীদের ফ্রি চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

এছাড়া আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, অত্যাধুনিক সম্মেলন কক্ষ, সভাকক্ষ, ২টি কমিউনিটি সেন্টার, বাস-ট্রাক টার্মিনাল, ঈদগাহ মাঠ, কবরস্থান, পৌরপার্ক, সুপার মার্কেট নির্মাণ, আধুনিক জবাইখানা, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ডাকাতিয়া নদীর উপর ৪টি সেতু নির্মাণ, নদী ও খাল উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযান, ডাকাতিয়া নদীর তীরে ওয়াকওয়ে নির্মাণ ও সৌন্দর্যবর্ধন, জগন্নাথ দীঘির পাড়, গাজীমুড়া মাদ্রাসা দীঘি, নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর চারঘাটলা পুকুরপাড়ের সৌন্দর্যবর্ধন কাজ এবং পানি দূষণমুক্ত রাখার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে পৌরসভাকে ঘিরে পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত নির্বাচনের প্রতিশ্রুতিগুলো অনেকাংশে বাস্তবায়ন করেছি, বাকি প্রকল্পগুলোও মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী বাস্তবায়নে নাগরিকদের চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি প্রযুক্তিনির্ভর সেবা প্রদানের মাধ্যমে ডিজিটাল ও স্মার্ট সেভ সিটি করতে সফল হব। সর্বোপরি লাকসাম পৌরসভার উন্নয়নের রূপকার এ অঞ্চল থেকে বারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য তাজুল ইসলামের উন্নয়ন ভাবনা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী মডেল পৌরসভা হিসেবে রূপান্তর করাই আমার প্রতিশ্রুতি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর