ঢাকা ০৪:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হারিয়ে যাচ্ছে, তালগাছে বাবুই পাখির বাসা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:৫৯:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০১৯
  • ২৪৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দিনাজপুরের হিলিসহ উত্তর জনপদে তালগাছে ঝুলছে না আর বাবুই পাখির বাসা। বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়েঘরে থেকে করো শিল্পের বড়াই। আমি থাকি মহাসুখে অট্রালিকা পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে’ কবি রজনীকান্ত সেনের এই অমর কবিতাটি এখন এদেশে তৃতীয় শ্রেণীর বাংলা বইয়ে পাঠ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত।
শুধুমাত্র পাঠ্যপুস্তকের কবিতা পড়েই এখনকার শিক্ষার্থীরা বাবুই পাখির শিল্পনিপুণতা কথা জানতে পারে।এখন আর চোখে পড়ে না বাবুই পাখি ও তার তৈরি দৃষ্টিনন্দন সেই ছোট্র বাসা এবং বাসা তৈরির নৈসর্গিক দৃশ্য।

হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির বয়নশিল্পী, স্থপতি এবং সামাজিক বন্ধনের কারিগর বাবুই পাখি ও তার বাসা। খড়, তালপাতা, ঝাউ ও কাশবনের লতাপাতা দিয়ে বাবুই পাখি উঁঁচু তালগাছে বাসা বাঁধে। সেই বাসা দেখতে যেমন আকর্ষনীয়, তেমনি মজবুত। প্রবল ঝড়েও তাদের বাসা পড়ে যেত না।

বাবুই পাখির শক্ত বুননের এবাসাটি শিল্পের এক অনন্য দৃষ্টি যা টেনেও ছেঁড়া সম্ভব নয। এক সময় বাংলাদেশের বিবিন্ন গ্রামঞ্চলে সারি সারি উঁচু তালগাছ বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা দেখা যেত। এখন তা আর সচরাচর চোখে পড়ে না। কালের বিবর্তনে ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে সেই দৃষ্টি ভোলানো পাখিটিকেও তার নিজের তৈরি বাসা যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও ফুটিয়ে তুলতে, তা আজ আমরা হারাতে বসেছি। বাবুই পাখি বাসা তৈরির পর সঙ্গী খুঁতে যায় অন্য বাসায়। সঙ্গী পছন্দ হলে স্ত্রী বাবুইকে সাথী বানানোর জন্য নানা ভাবে ভাব-ভালবাসা নিবেদন করে এরা। বাসা তৈরির কাজ অর্ধেক হলে কাঙ্খিত স্ত্রী বাবুইকে সে বাসা দেখায়।

বাসা পছন্দ হলে কেবল সম্পকৃ গড়ে উঠে। স্ত্রী বাবুই পাখির বাসা পছন্দ হলে বাকি কাজ শেষ করতে পুরুষ বাবুই পাখির সময় লাগে চারদিন। স্ত্রী বাবুই পাখির প্রেরণা পেয়ে পুরুষ বাবুই মনের আনন্দে শিল্পসম্মত ও নিপুণভাবে বিরামহীন ভাবে বাসা তৈরির কাজ শেষ করে। ক্ষেতে ধান পাকার সময় হলো বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হবার পরপরই বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য স্ত্রী বাবুই ক্ষেত থেকে দুধ ধান সংগ্রহ করে। বর্তমানে প্রাকৃতিক বিপর্য়য়ে কারনে গ্রামঞ্চল থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে প্রকৃতির এব অপরুপ সুষ্টি বাবুই পাখি। প্রকৃতির বয়নশিল্পী, স্থপতি ও সামজিক বন্ধনের কারিগার নামে সমধিক পরিচিত বাবুই ও তার অপরুপ শিল্পসম্মত বাসা এখন আর চোখে পড়ে না।

দিনাজপুর সামাজিক বন বিভাগের অধিনে চরকাই ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা নিশিকান্ত মালাকার জানান, বাবুই পাখি নিপুন কারিগর। এ পাখি অত্যন্ত সৌন্দর্যসচেতনা। তারা রেঞ্জ অফিসের বিভিন্ন গাছে বাসা বেঁধে রয়েছে।তারা শালবনের গাছে গাছে পাখিদের জন্য এরই মধ্যে ২ হাজার বাসা তৈরি করে দিয়েছে। এতে বনে নিরাপদে যেমন পাখিরা থূাকতে পারবে তেমনি শালবনেরও সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

হারিয়ে যাচ্ছে, তালগাছে বাবুই পাখির বাসা

আপডেট টাইম : ০১:৫৯:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দিনাজপুরের হিলিসহ উত্তর জনপদে তালগাছে ঝুলছে না আর বাবুই পাখির বাসা। বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়েঘরে থেকে করো শিল্পের বড়াই। আমি থাকি মহাসুখে অট্রালিকা পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে’ কবি রজনীকান্ত সেনের এই অমর কবিতাটি এখন এদেশে তৃতীয় শ্রেণীর বাংলা বইয়ে পাঠ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত।
শুধুমাত্র পাঠ্যপুস্তকের কবিতা পড়েই এখনকার শিক্ষার্থীরা বাবুই পাখির শিল্পনিপুণতা কথা জানতে পারে।এখন আর চোখে পড়ে না বাবুই পাখি ও তার তৈরি দৃষ্টিনন্দন সেই ছোট্র বাসা এবং বাসা তৈরির নৈসর্গিক দৃশ্য।

হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির বয়নশিল্পী, স্থপতি এবং সামাজিক বন্ধনের কারিগর বাবুই পাখি ও তার বাসা। খড়, তালপাতা, ঝাউ ও কাশবনের লতাপাতা দিয়ে বাবুই পাখি উঁঁচু তালগাছে বাসা বাঁধে। সেই বাসা দেখতে যেমন আকর্ষনীয়, তেমনি মজবুত। প্রবল ঝড়েও তাদের বাসা পড়ে যেত না।

বাবুই পাখির শক্ত বুননের এবাসাটি শিল্পের এক অনন্য দৃষ্টি যা টেনেও ছেঁড়া সম্ভব নয। এক সময় বাংলাদেশের বিবিন্ন গ্রামঞ্চলে সারি সারি উঁচু তালগাছ বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা দেখা যেত। এখন তা আর সচরাচর চোখে পড়ে না। কালের বিবর্তনে ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে সেই দৃষ্টি ভোলানো পাখিটিকেও তার নিজের তৈরি বাসা যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও ফুটিয়ে তুলতে, তা আজ আমরা হারাতে বসেছি। বাবুই পাখি বাসা তৈরির পর সঙ্গী খুঁতে যায় অন্য বাসায়। সঙ্গী পছন্দ হলে স্ত্রী বাবুইকে সাথী বানানোর জন্য নানা ভাবে ভাব-ভালবাসা নিবেদন করে এরা। বাসা তৈরির কাজ অর্ধেক হলে কাঙ্খিত স্ত্রী বাবুইকে সে বাসা দেখায়।

বাসা পছন্দ হলে কেবল সম্পকৃ গড়ে উঠে। স্ত্রী বাবুই পাখির বাসা পছন্দ হলে বাকি কাজ শেষ করতে পুরুষ বাবুই পাখির সময় লাগে চারদিন। স্ত্রী বাবুই পাখির প্রেরণা পেয়ে পুরুষ বাবুই মনের আনন্দে শিল্পসম্মত ও নিপুণভাবে বিরামহীন ভাবে বাসা তৈরির কাজ শেষ করে। ক্ষেতে ধান পাকার সময় হলো বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হবার পরপরই বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য স্ত্রী বাবুই ক্ষেত থেকে দুধ ধান সংগ্রহ করে। বর্তমানে প্রাকৃতিক বিপর্য়য়ে কারনে গ্রামঞ্চল থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে প্রকৃতির এব অপরুপ সুষ্টি বাবুই পাখি। প্রকৃতির বয়নশিল্পী, স্থপতি ও সামজিক বন্ধনের কারিগার নামে সমধিক পরিচিত বাবুই ও তার অপরুপ শিল্পসম্মত বাসা এখন আর চোখে পড়ে না।

দিনাজপুর সামাজিক বন বিভাগের অধিনে চরকাই ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা নিশিকান্ত মালাকার জানান, বাবুই পাখি নিপুন কারিগর। এ পাখি অত্যন্ত সৌন্দর্যসচেতনা। তারা রেঞ্জ অফিসের বিভিন্ন গাছে বাসা বেঁধে রয়েছে।তারা শালবনের গাছে গাছে পাখিদের জন্য এরই মধ্যে ২ হাজার বাসা তৈরি করে দিয়েছে। এতে বনে নিরাপদে যেমন পাখিরা থূাকতে পারবে তেমনি শালবনেরও সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে।