ঢাকা ০১:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশী খলিল মসজিদে নববির খাদেম

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২৮:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০১৯
  • ২৮২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কত মানুষ কত রকমের পেশা বেছে নেন। এর মধ্যে কেউ কেউ আছেন অনেকটাই ব্যতিক্রম। তেমনই এক খেদমতের পেশায় নিয়োজিত মো: খলিলুর রহমান। পবিত্র মদিনা শরিফের মসজিদে নববিতে প্রায় ১৭ বছর ধরে তিনি খাদেম হিসেবে কর্মরত আছেন।

আমার আদি ঢাকার বাল্যবন্ধু হাজী মো: শাহ আলমের দেয়া ফোন নম্বরের সূত্র ধরে তার সাথে সাক্ষাৎ হয় মসজিদে নববিতে। তারপর পরিচয়। প্রথম দিন তিনি আমাকে বিশেষ ব্যবস্থায় রিয়াজুল জান্নাতে নামাজ পড়ার সুযোগ করে দেন। সেই থেকে আলাপচারিতা।

ভদ্রলোকের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী উপজেলার ভুকতা গ্রামে। দুই মেয়ের জনক খলিলুর রহমান সদা হাস্যোজ্জ্বল। দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি হাজীদের মসজিদে নববির বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য স্থাপনা এবং ইতিহাস তুলে ধরেন, যা হাজীদের জন্য পরম পাওয়া। কারণ, না জেনে আমল করার চেয়ে জেনে আমল করার মধ্যে অনেক বেশি তৃপ্তি বোধ করা যায়। হাজীদের জানার স্বার্থে তিনি এ কাজটা বেশ খুশিমনেই করে থাকেন।

খলিলুর রহমানকে যখন জিজ্ঞাসা করলাম, দেশ ছেড়ে এ বিদেশের বাড়িতে এতটা বছর আছেন-এতে করে কি খারাপ লাগে না? তিনি জানালেন কিছুটা তো খারাপ লাগেই, তবে এখন নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি। নববিতে চাকরি করতে কেমন লাগে?

তিনি অকপটে জানালেন বেশ ভালো লাগে। পবিত্র মদিনার মাটিতে তাও আবার মসজিদে নববিতে খাদেম হিসেবে থাকতে পেরে নিজেকে বেশ সৌভাগ্যবান মনে হয়। আসলেই সৌভাগ্যের বিষয়। কারণ ইসলাম ধর্মের দ্বিতীয় পবিত্রতম স্থান হলো মসজিদে নববি।

এখানেই আখেরি নবী হজরত মোহাম্মদ সা: পবিত্র রওজা শরিফ। তা ছাড়া মুসলিম ধর্মমতে মসজিদের খাদেমদের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। আর এ মর্যাদাবান মানুষগুলোর ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া থেকে যায় অনেকটা অবহেলিত।

বাংলাদেশী খলিলুর রহমান দুই বছর পরপর দেশে আসার জন্য ছুটি পান, যা সত্যিই অমানবিক। এর পরেও তার কোনো ক্ষোভ নেই। মসজিদ নববির ভেতর একটা অংশ আছে রিয়াজুল জান্নাহ বা জান্নাতের বাগান নামক একটা বরকতময় স্থান রয়েছে। সেখানে সাতটি স্তম্ভ আছে। উস্তওয়ানা হান্নানা, ছারির, উফুদ, হারছ, ওস্তওয়ানা আয়েশা (রাজি:), আবু লুবাবা (রাজি:) ও ওস্তওয়ানা জিব্রিল (আ:)।

প্রতিটি স্তম্ভের পাশে এবাদতের পৃথক পৃথক বিশেষ ফজিলত রয়েছে। বই পড়ে স্তম্ভগুলোর নাম জানা যায়; কিন্তু বেশির ভাগ মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয় কোনোটির কোনো নাম তা নির্ধারণ করার।

এগুলো চিনতে হলে চাই বিজ্ঞ খাদেমদের সহযোগিতা। বাংলাদেশী হাজীদের জন্য খলিলুর রহমান খুশিমনেই সহযোগিতা করে থাকেন। তবে কেউ কেউ আছেন আবার সহযোগিতার সুযোগটা মাত্রার অতিরিক্ত নিতে চান। তখন তার চাকরির দায়িত্ব পালনে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটে।

এর জন্য তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যদি সৌদি সরকার খাদেমদের নির্দিষ্ট সময়ের দায়িত্ব শেষে যদি বাড়তি কিছু সময় হাজীদের গাইড করার সুযোগ দিত, তাহলে আগত হাজীদের সেবা করার সুযোগ পেতাম।

আমি নিজেই যখন একেকটা স্থানের ভিন্ন ভিন্ন ইতিহাস জানতে পেরেছি, তখন এবাদত করার মানসিকতা ও আল্লাহ-ভীরু এবং রাসূলের প্রতি প্রেম বহু গুণে বেড়ে গিয়েছিল।

মসজিদের খাদেমরা তাচ্ছিল্যের পাত্র নন, তাদের মানমর্যাদা মুসলিম ধর্মে বিশাল গুরুত্ব বহন করে। ভাবুন তো একবার মসজিদে যদি খাদেমরা কাজ না করতেন তাহলে যত পবিত্রতম স্থানই হোক, সেসব স্থানের অবস্থা কী হতো।

জীবিকার তাগিদে মানুষ দেশ ছেড়ে বিদেশ যান। যাদের পরম সৌভাগ্য তারাই মসজিদের খাদেম হিসেবে নিজেদের নিয়োজিত করতে পারেন। তাই তাদের ব্যক্তিগত চাহিদা, চাওয়া-পাওয়ার প্রতিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া উচিত।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

বাংলাদেশী খলিল মসজিদে নববির খাদেম

আপডেট টাইম : ১১:২৮:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কত মানুষ কত রকমের পেশা বেছে নেন। এর মধ্যে কেউ কেউ আছেন অনেকটাই ব্যতিক্রম। তেমনই এক খেদমতের পেশায় নিয়োজিত মো: খলিলুর রহমান। পবিত্র মদিনা শরিফের মসজিদে নববিতে প্রায় ১৭ বছর ধরে তিনি খাদেম হিসেবে কর্মরত আছেন।

আমার আদি ঢাকার বাল্যবন্ধু হাজী মো: শাহ আলমের দেয়া ফোন নম্বরের সূত্র ধরে তার সাথে সাক্ষাৎ হয় মসজিদে নববিতে। তারপর পরিচয়। প্রথম দিন তিনি আমাকে বিশেষ ব্যবস্থায় রিয়াজুল জান্নাতে নামাজ পড়ার সুযোগ করে দেন। সেই থেকে আলাপচারিতা।

ভদ্রলোকের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী উপজেলার ভুকতা গ্রামে। দুই মেয়ের জনক খলিলুর রহমান সদা হাস্যোজ্জ্বল। দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি হাজীদের মসজিদে নববির বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য স্থাপনা এবং ইতিহাস তুলে ধরেন, যা হাজীদের জন্য পরম পাওয়া। কারণ, না জেনে আমল করার চেয়ে জেনে আমল করার মধ্যে অনেক বেশি তৃপ্তি বোধ করা যায়। হাজীদের জানার স্বার্থে তিনি এ কাজটা বেশ খুশিমনেই করে থাকেন।

খলিলুর রহমানকে যখন জিজ্ঞাসা করলাম, দেশ ছেড়ে এ বিদেশের বাড়িতে এতটা বছর আছেন-এতে করে কি খারাপ লাগে না? তিনি জানালেন কিছুটা তো খারাপ লাগেই, তবে এখন নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি। নববিতে চাকরি করতে কেমন লাগে?

তিনি অকপটে জানালেন বেশ ভালো লাগে। পবিত্র মদিনার মাটিতে তাও আবার মসজিদে নববিতে খাদেম হিসেবে থাকতে পেরে নিজেকে বেশ সৌভাগ্যবান মনে হয়। আসলেই সৌভাগ্যের বিষয়। কারণ ইসলাম ধর্মের দ্বিতীয় পবিত্রতম স্থান হলো মসজিদে নববি।

এখানেই আখেরি নবী হজরত মোহাম্মদ সা: পবিত্র রওজা শরিফ। তা ছাড়া মুসলিম ধর্মমতে মসজিদের খাদেমদের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। আর এ মর্যাদাবান মানুষগুলোর ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া থেকে যায় অনেকটা অবহেলিত।

বাংলাদেশী খলিলুর রহমান দুই বছর পরপর দেশে আসার জন্য ছুটি পান, যা সত্যিই অমানবিক। এর পরেও তার কোনো ক্ষোভ নেই। মসজিদ নববির ভেতর একটা অংশ আছে রিয়াজুল জান্নাহ বা জান্নাতের বাগান নামক একটা বরকতময় স্থান রয়েছে। সেখানে সাতটি স্তম্ভ আছে। উস্তওয়ানা হান্নানা, ছারির, উফুদ, হারছ, ওস্তওয়ানা আয়েশা (রাজি:), আবু লুবাবা (রাজি:) ও ওস্তওয়ানা জিব্রিল (আ:)।

প্রতিটি স্তম্ভের পাশে এবাদতের পৃথক পৃথক বিশেষ ফজিলত রয়েছে। বই পড়ে স্তম্ভগুলোর নাম জানা যায়; কিন্তু বেশির ভাগ মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয় কোনোটির কোনো নাম তা নির্ধারণ করার।

এগুলো চিনতে হলে চাই বিজ্ঞ খাদেমদের সহযোগিতা। বাংলাদেশী হাজীদের জন্য খলিলুর রহমান খুশিমনেই সহযোগিতা করে থাকেন। তবে কেউ কেউ আছেন আবার সহযোগিতার সুযোগটা মাত্রার অতিরিক্ত নিতে চান। তখন তার চাকরির দায়িত্ব পালনে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটে।

এর জন্য তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যদি সৌদি সরকার খাদেমদের নির্দিষ্ট সময়ের দায়িত্ব শেষে যদি বাড়তি কিছু সময় হাজীদের গাইড করার সুযোগ দিত, তাহলে আগত হাজীদের সেবা করার সুযোগ পেতাম।

আমি নিজেই যখন একেকটা স্থানের ভিন্ন ভিন্ন ইতিহাস জানতে পেরেছি, তখন এবাদত করার মানসিকতা ও আল্লাহ-ভীরু এবং রাসূলের প্রতি প্রেম বহু গুণে বেড়ে গিয়েছিল।

মসজিদের খাদেমরা তাচ্ছিল্যের পাত্র নন, তাদের মানমর্যাদা মুসলিম ধর্মে বিশাল গুরুত্ব বহন করে। ভাবুন তো একবার মসজিদে যদি খাদেমরা কাজ না করতেন তাহলে যত পবিত্রতম স্থানই হোক, সেসব স্থানের অবস্থা কী হতো।

জীবিকার তাগিদে মানুষ দেশ ছেড়ে বিদেশ যান। যাদের পরম সৌভাগ্য তারাই মসজিদের খাদেম হিসেবে নিজেদের নিয়োজিত করতে পারেন। তাই তাদের ব্যক্তিগত চাহিদা, চাওয়া-পাওয়ার প্রতিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া উচিত।