হাওর বার্তা ডেস্কঃ অক্টোবর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে অক্টোবরে। এবার আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে দলকে ঢেলে সাজানোর কথা শোনা যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দফায় দফায় বৈঠক করছেন।
প্রতি সপ্তাহেই তিনি হয় উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক, নাহলে সভাপতি মণ্ডলীর বৈঠক, বিভিন্ন যৌথসভা করছেন, সম্পাদক মণ্ডলীরাও বৈঠক করছেন।
এই সমস্ত বৈঠক থেকে আলোচনায় যেসব বিষয় ফুটে উঠছে তা হলো আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের ব্যাপক পরিবর্তন হতে পারে।
বিশেষ করে কাউন্সিলের মাধ্যমে আওয়ামী লীগে এবার তারুণ্যের জয়জয়কার হতে পারে।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভাপতির পরে সবচেয়ে ক্ষমতাবান জায়গা হলো সভাপতিমণ্ডলী বা প্রেসিডিয়াম।
আওয়ামী লীগের সিদ্দান্ত গ্রহণের কেন্দ্রবিন্দু হলো প্রেসিডিয়াম।
কিন্তু গত ২০১০ সালের পরে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম কার্যকর নয়।
বরং প্রেসিডিয়ামের ক্ষমতা থাকলেও প্রেসিডিয়ামকে খুব বেশি সক্রিয় দেখা যায়নি।
আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে এবার প্রেসিডিয়ামকে ঢেলে সাজানো হতে পারে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র ইঙ্গিত দিয়েছে।
প্রেসিডিয়ামে যারা অপেক্ষাকৃত বয়সে প্রবীণ তাদেরকে প্রেসিডিয়াম থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে।
ইতিমধ্যেই ওয়ান-ইলেভেনের কলংকের কারণে আওয়ামী লীগের তোফায়েল আহমেদ, আমীর হোসেন আমুর মতো হেভিওয়েট নেতারা প্রেসিডিয়াম থেকে ছিটকে পড়েছেন।
তারা এখন উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য হিসেবে কাজ করছেন। কাজেই তাদের ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা বা লক্ষণ নেই।
বরং প্রেসিডিয়ামের যারা অপেক্ষাকৃত বয়ঃপ্রবীণ তারাও প্রেসিডিয়াম থেকে বাদ পড়তে পারেন এবং তাদের বদলে নতুনরা জায়গা পেতে পারেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং দলের প্রবীণ নেতা, বর্তমান সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী খুবই অসুস্থ।
তিনি শুধুমাত্র প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে উপস্থিত থাকেন। দলের সাংগঠনিক তৎপরতায় তিনি তেমন একটা সক্রিয় থাকতে পারেন না।
দলের সভাপতির তার প্রতি প্রচণ্ড ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা রয়েছে।
তা সত্ত্বেও তিনি এবার প্রেসিডিয়াম থেকে বাদ পড়তে পারেন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
একইভাবে অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, তিনিও বার্ধক্যের কারণে এখন আগের মতো কর্ম উদ্দীপ্ত নন, এজন্য তিনিও প্রেসিডিয়াম থেকে বাদ পড়তে পারেন।
২০০৯ থেকে পালাক্রমে আওয়ামী লীগ স্থানীয়দের অন্তর্ভূক্ত করার একটা রেওয়াজ চালু করেছে।
শ্রী পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হয়েছিলেন।
এবার হয়তো তিনি বাদ পড়বেন। তার বদলে স্থানীয় পর্যায়ের অন্যকোন প্রবীন নেতাকে হয়তো প্রেসিডিয়ামে অন্তর্ভূক্ত করা হতে পারে।
এভাবে প্রেসিডিয়াম থেকে বাদ পড়তে পারেন অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান খান।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে গৃহায়ন ও পূর্ত মন্ত্রী ছিলেন আব্দুল মান্নান খান।
নানা রকম দুর্নীতির অভিযোগে তিনি অভিযুক্ত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন।
এবার তিনি মনোনয়ন পাননি। তার এলাকায় মনোনয়ন পেয়েছেন সালমান এফ রহমান। যদিও তিনি প্রেসিডিয়ামের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এবার তিনিও প্রেসিডিয়াম থেকে বাদ পড়তে পারেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এরা ছাড়াও আওয়ামী লীগের আরো কয়েকজন আছেন যারা দলের প্রেসিডিয়ামের সদস্য হিসেবে সক্রিয় নন।
দলীয় কর্মকাণ্ডে তাদের তেমন গতিশীলে দেখা যায় না। তাদের বদলে প্রেসিডিয়ামে অপেক্ষাকৃত তরুণ ও সক্রিয়দের আনা হতে পারে বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের একটি তরুণ প্রজন্ম আস্তে আস্তে প্রৌঢ় হয়েছে।
তাদেরকে আস্তে আস্তে প্রেসিডিয়ামে আনার সম্ভাবনা অত্যন্ত প্রবল বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিশেষ করে আব্দুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানকের মতো তারুণ্য শেষ করা নেতারা এবার আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামে জায়গা পেতে পারেন বলে জানা গেছে।
তবে এ ব্যপারে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একটি সূত্র বলছে যে, একটা সময় ছিলো আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম খুব সক্রিয়।
প্রেসিডিয়ামের নেতারাই দল পরিচালনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন। কিন্তু এটা পরিবর্তন হয়ে গেছে।
এখন প্রেসিডিয়াম আগের মতো সক্রিয় নয়। বরং দলের সম্পাদক মন্ডলী। বিশেষ করে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদকের মাধ্যমে দল পরিচালনা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ এবার কাউন্সিলে সেই ধারণা পরিবর্তন করে আবার কার্যকর ও দায়িত্বশীল একটা জায়গায় দলকে নিয়ে আসতে চায় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোতে আভাষ পাওয়া গেছে।
এই লক্ষেই প্রেসিডিয়ামে ব্যাপক পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে এখন থেকেই।