ঢাকা ০৩:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভিডিও প্রচারের অভিযোগে সোনাগাজীর সাবেক ওসির বিরুদ্ধে মামলা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:১৭:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ এপ্রিল ২০১৯
  • ২৭৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আইনবহির্ভূতভাবে ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে জেরা করে তার ভিডিও প্রচারের অভিযোগে ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আদালত আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে এই মামলার তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) প্রতিবেদন দিতে বলেছেন। ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন আজ সোমবার এ আদেশ দেন।

বিষয়টি সাংবাদিককে নিশ্চিত করেছেন ওই আদালতের পেশকার শামীম আল মামুন। এর আগে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বাদী হয়ে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ার আবেদন করেন। মামলার আরজিতে বলা হয়, আইনবহির্ভূতভাবে ভুক্তভোগী নুসরাতের বক্তব্য রেকর্ড করেন পুলিশ কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম।

সাইবার ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) নজরুল ইসলাম শামীম সাংবাদিককে বলেন, মামলায় ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তিনি (ওসি) খাস কামরায় নুসরাত জাহান রাফির ভিডিও ধারণ করেন। পরে সেই ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল করা হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় মামলা নেওয়ার আবেদন করা হয়।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬ ধারায় বলা হয়, আইনগত কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে অপর কোনো ব্যক্তির পরিচিতি তথ্য সংগ্রহ, বিক্রয়, দখল, সরবরাহ বা ব্যবহার করা একটি অপরাধ। এর শাস্তি পাঁচ বছর কারাদণ্ড। আর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৯ ধারায় বলা হয়, মানহানিকর তথ্য প্রকাশের শাস্তি তিন বছর কারাদণ্ড।

আর এই আইনের ৩১ ধারায় বলা হয়, ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করা যা বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে বা অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অথবা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় বা ঘটিবার উপক্রম হয়, তা একটি অপরাধ।

৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। কয়েকজন তাঁকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে করা যৌন হয়রানির অভিযোগে করা মামলা তুলে নিতে চাপ দেন। তিনি অস্বীকৃতি জানালে তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা, পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলমসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান অগ্নিদগ্ধ নুসরাত।

এর আগে ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সে ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে আছেন। যৌন নিপীড়নের ঘটনায় নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। ওই মামলা তুলে নিতে অস্বীকৃতি জানানোয় নুসরাতের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে গড়িমসির অভিযোগ ওঠার পর গত ১০ এপ্রিল পুলিশ কর্মকর্তা মোয়াজ্জেমকে সোনাগাজী থানার ওসির দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। নুসরাত হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ভিডিও প্রচারের অভিযোগে সোনাগাজীর সাবেক ওসির বিরুদ্ধে মামলা

আপডেট টাইম : ০৭:১৭:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ এপ্রিল ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আইনবহির্ভূতভাবে ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে জেরা করে তার ভিডিও প্রচারের অভিযোগে ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আদালত আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে এই মামলার তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) প্রতিবেদন দিতে বলেছেন। ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন আজ সোমবার এ আদেশ দেন।

বিষয়টি সাংবাদিককে নিশ্চিত করেছেন ওই আদালতের পেশকার শামীম আল মামুন। এর আগে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বাদী হয়ে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ার আবেদন করেন। মামলার আরজিতে বলা হয়, আইনবহির্ভূতভাবে ভুক্তভোগী নুসরাতের বক্তব্য রেকর্ড করেন পুলিশ কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম।

সাইবার ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) নজরুল ইসলাম শামীম সাংবাদিককে বলেন, মামলায় ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তিনি (ওসি) খাস কামরায় নুসরাত জাহান রাফির ভিডিও ধারণ করেন। পরে সেই ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল করা হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় মামলা নেওয়ার আবেদন করা হয়।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬ ধারায় বলা হয়, আইনগত কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে অপর কোনো ব্যক্তির পরিচিতি তথ্য সংগ্রহ, বিক্রয়, দখল, সরবরাহ বা ব্যবহার করা একটি অপরাধ। এর শাস্তি পাঁচ বছর কারাদণ্ড। আর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৯ ধারায় বলা হয়, মানহানিকর তথ্য প্রকাশের শাস্তি তিন বছর কারাদণ্ড।

আর এই আইনের ৩১ ধারায় বলা হয়, ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করা যা বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে বা অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অথবা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় বা ঘটিবার উপক্রম হয়, তা একটি অপরাধ।

৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। কয়েকজন তাঁকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে করা যৌন হয়রানির অভিযোগে করা মামলা তুলে নিতে চাপ দেন। তিনি অস্বীকৃতি জানালে তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা, পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলমসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান অগ্নিদগ্ধ নুসরাত।

এর আগে ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সে ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে আছেন। যৌন নিপীড়নের ঘটনায় নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। ওই মামলা তুলে নিতে অস্বীকৃতি জানানোয় নুসরাতের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে গড়িমসির অভিযোগ ওঠার পর গত ১০ এপ্রিল পুলিশ কর্মকর্তা মোয়াজ্জেমকে সোনাগাজী থানার ওসির দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। নুসরাত হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।