ঢাকা ০৭:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সব ক্ষমতা হারাচ্ছে ম্যানেজিং কমিটি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৫৩:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল ২০১৯
  • ২০৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের কোনো ক্ষমতাই আর থাকছে না প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির হাতে। এবার থেকে অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষকসহ সব পদেই নিয়োগের লক্ষ্যে প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব এনটিআরসিএকে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে এ সংক্রান্ত নিয়োগ বিধিমালার কয়েকটি বিষয় সংশোধন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গত ৫ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনুষ্ঠিত এক সভা শেষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ সব পদে নিয়োগে বিধিমালা সংশোধনের প্রস্তাব তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষকে (এনটিআরসিএ)।

এরপর গত বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) নিয়োগের বিধি সংশোধনের প্রস্তাব তৈরির লক্ষ্যে সভা করেছেন এনটিআরসিএর কর্মকর্তারা। আগামী বছর থেকে এ নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

এর আগে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর থেকে এন্ট্রি লেভেলের (প্রভাষক, সহকারি শিক্ষক, মৌলভি শিক্ষক) শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা পরিচালনা কমিটির হাত থেকে নিয়ে এনটিআরসিএকে দেয়া হয়। আর পরিচালনা কমিটির হাতে থাকে অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ ও সুপার এবং কর্মচারী নিয়োগের ক্ষমতা। তৎকালীন শিক্ষাসচিব মো. নজরুল ইসলাম খানের উদ্যোগে এই সিদ্ধান্ত হয়।

সংশোধন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে

বৃহস্পতিবারের সভা শেষে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এনটিআরসিএর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বিদ্যমান নিয়োগ বিধিমালায় কী ধরনের পরিবর্তন আনা প্রয়োজন, নতুন করে কী কী সংযোজন করা দরকার এবং কোন রূপরেখায় প্রতিষ্ঠান প্রধানদের পদগুলোতে নিয়োগ দেয়া হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

তবে, এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দ্রুত এ বিষয়ে আরও বৈঠক হবে বলে জানান তিনি।

তবে এ কার্যক্রম শুরু হতে আরও সময়ের প্রয়োজন এমন ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, ‘বিদ্যমান নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ সব পদে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব নয়। পাশাপাশি এ কার্যক্রম শুরু করতে বিধিমালার রূপরেখা কেমন হতে পারে সেসব নিয়ে প্রাথমিকভাবে আলোচনা হয়েছে। তবে এ বিষয়েও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এটি নিয়ে আরও অনেক আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।’

এনটিআরসিএ সূত্র জানায়, কর্মচারী পদগুলোতে নিয়োগ সুপারিশের বিষয়ে অনীহা প্রকাশ করেছেন কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বেসরকারি কলেজে গভর্নিং কমিটির মাধ্যমে অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ এবং স্কুলে ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। এসব নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নানা ধরনের অনিয়ম হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। কমিটির সদস্যরা আর্থিক সুবিধা নিয়ে তাদের মনোনীত প্রার্থীদের নিয়োগ দেন। ফলে যোগ্য প্রার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে এনটিআরসিএর মাধ্যমে প্রশাসনিক পদগুলোতে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

গত ৫ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন।

সভায় জানানো হয়েছে, প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ সব পদে নিয়োগ এনটিআরসিএর মাধ্যমে দেয়ার জন্য কী কী পরিবর্তন করতে হবে তার একটি প্রস্তাব আগামী ৩০ দিনের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানাতে হবে। একইসঙ্গে প্রস্তাব তৈরির দায়িত্ব বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষকে দেয়া হয়েছে।

এব ব্যাপারে বাংলাদেশ অ্যধক্ষ পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান বলেন, ‘অনেক দেরিতে হলেও নিয়োগের আংশিক ক্ষমতা পরিচালনা কমিটির হাত থেকে নিয়ে নেয়া হয়েছে। বাকিটুকু যত তাড়াতাড়ি নেয়া যায় ততই ভালো।’

তিনি আরও বলেন, ‘মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ না হলে শিক্ষাব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়বে। ঘুষ দিয়ে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা মানসিক ও নৈতিকভাবে অসৎ। তারা নৈতিকতাসম্পন্ন শিক্ষার্থী সৃষ্টি করতে পারবেন না। ফলে লাখ লাখ সাটিফিকেটধারী সৃষ্টি হবে, কিন্তু প্রকৃত শিক্ষিত জনসম্পদ হবে না।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

সব ক্ষমতা হারাচ্ছে ম্যানেজিং কমিটি

আপডেট টাইম : ১২:৫৩:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের কোনো ক্ষমতাই আর থাকছে না প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির হাতে। এবার থেকে অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষকসহ সব পদেই নিয়োগের লক্ষ্যে প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব এনটিআরসিএকে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে এ সংক্রান্ত নিয়োগ বিধিমালার কয়েকটি বিষয় সংশোধন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গত ৫ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনুষ্ঠিত এক সভা শেষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ সব পদে নিয়োগে বিধিমালা সংশোধনের প্রস্তাব তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষকে (এনটিআরসিএ)।

এরপর গত বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) নিয়োগের বিধি সংশোধনের প্রস্তাব তৈরির লক্ষ্যে সভা করেছেন এনটিআরসিএর কর্মকর্তারা। আগামী বছর থেকে এ নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

এর আগে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর থেকে এন্ট্রি লেভেলের (প্রভাষক, সহকারি শিক্ষক, মৌলভি শিক্ষক) শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা পরিচালনা কমিটির হাত থেকে নিয়ে এনটিআরসিএকে দেয়া হয়। আর পরিচালনা কমিটির হাতে থাকে অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ ও সুপার এবং কর্মচারী নিয়োগের ক্ষমতা। তৎকালীন শিক্ষাসচিব মো. নজরুল ইসলাম খানের উদ্যোগে এই সিদ্ধান্ত হয়।

সংশোধন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে

বৃহস্পতিবারের সভা শেষে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এনটিআরসিএর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বিদ্যমান নিয়োগ বিধিমালায় কী ধরনের পরিবর্তন আনা প্রয়োজন, নতুন করে কী কী সংযোজন করা দরকার এবং কোন রূপরেখায় প্রতিষ্ঠান প্রধানদের পদগুলোতে নিয়োগ দেয়া হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

তবে, এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দ্রুত এ বিষয়ে আরও বৈঠক হবে বলে জানান তিনি।

তবে এ কার্যক্রম শুরু হতে আরও সময়ের প্রয়োজন এমন ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, ‘বিদ্যমান নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ সব পদে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব নয়। পাশাপাশি এ কার্যক্রম শুরু করতে বিধিমালার রূপরেখা কেমন হতে পারে সেসব নিয়ে প্রাথমিকভাবে আলোচনা হয়েছে। তবে এ বিষয়েও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এটি নিয়ে আরও অনেক আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।’

এনটিআরসিএ সূত্র জানায়, কর্মচারী পদগুলোতে নিয়োগ সুপারিশের বিষয়ে অনীহা প্রকাশ করেছেন কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বেসরকারি কলেজে গভর্নিং কমিটির মাধ্যমে অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ এবং স্কুলে ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। এসব নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নানা ধরনের অনিয়ম হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। কমিটির সদস্যরা আর্থিক সুবিধা নিয়ে তাদের মনোনীত প্রার্থীদের নিয়োগ দেন। ফলে যোগ্য প্রার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে এনটিআরসিএর মাধ্যমে প্রশাসনিক পদগুলোতে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

গত ৫ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন।

সভায় জানানো হয়েছে, প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ সব পদে নিয়োগ এনটিআরসিএর মাধ্যমে দেয়ার জন্য কী কী পরিবর্তন করতে হবে তার একটি প্রস্তাব আগামী ৩০ দিনের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানাতে হবে। একইসঙ্গে প্রস্তাব তৈরির দায়িত্ব বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষকে দেয়া হয়েছে।

এব ব্যাপারে বাংলাদেশ অ্যধক্ষ পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান বলেন, ‘অনেক দেরিতে হলেও নিয়োগের আংশিক ক্ষমতা পরিচালনা কমিটির হাত থেকে নিয়ে নেয়া হয়েছে। বাকিটুকু যত তাড়াতাড়ি নেয়া যায় ততই ভালো।’

তিনি আরও বলেন, ‘মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ না হলে শিক্ষাব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়বে। ঘুষ দিয়ে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা মানসিক ও নৈতিকভাবে অসৎ। তারা নৈতিকতাসম্পন্ন শিক্ষার্থী সৃষ্টি করতে পারবেন না। ফলে লাখ লাখ সাটিফিকেটধারী সৃষ্টি হবে, কিন্তু প্রকৃত শিক্ষিত জনসম্পদ হবে না।’