সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল ১৬ বছর আগে, শেষ হয়নি এখনো

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সেতুর জন্য আমাদের অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় নদী পারাপার করতে হয়। সড়কপথে রামপুরা যেতে সময় লাগে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। দিনে যাতায়াত করা সম্ভব হলেও রাতে ট্রলার বা নৌকা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। প্রায়ই রোগী নিয়ে হাসপাতালে যেতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অথচ সেতুটির কাজ শেষ হলে রামপুরা যেতে সময় লাগবে মাত্র ১০ মিনিট।’ সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নগরপাড়া এলাকায় নৌকাযোগে বালু নদ পার হওয়ার সময় এসব কথা বলেন এলাকার বাসিন্দা সেলিম মিয়া। সেতু না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের দীর্ঘ পথ ঘুরে রাজধানীতে যাতায়াত করতে হয়। অথচ নগরপাড়া এলাকায় বালু নদে একটি সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল ১৬ বছর আগে।

কায়েতপাড়া এলাকার বাসিন্দা কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, চারটি খুঁটি নির্মাণের পর কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। সেতুর কাজ শেষ করার দাবিতে এলাকাবাসী বহু আন্দোলন করেছে। কিন্তু কাজ হয়নি। এই সেতুর বহু পরে শীতলক্ষ্যা নদীতে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। সেটির কাজও শেষও হয়ে গেছে। অথচ এই সেতুর নির্মাণকাজ ঝুলে আছে অজ্ঞাত কারণে। সেতুটি নির্মিত হলে কায়েতপাড়াসহ আশপাশের এলাকার মানুষের রামপুরা যেতে সময় লাগবে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট। ৪ মার্চ দেখা যায়, নগরপাড়া এলাকায় বালু নদে তৃতীয় সেতুর (রামপুরা-রূপগঞ্জ সড়কে) চারটি খুঁটি দাঁড়িয়ে আছে। ওই চারটি খুঁটি ছাড়াও কায়েতপাড়া অংশে নির্মাণাধীন দুটি খুঁটির রডে জং ধরেছে। সেতুর সংযোগ সড়কে বিভিন্ন ধরনের গাছ জন্মেছে। নগরপাড়া খেয়াঘাট দিয়ে নৌকা বা ট্রলারে লোকজন বালু নদ পার হয়ে রামপুরায় যাওয়া–আসা করছে।

কায়েতপাড়া এলাকার বাসিন্দা ফারুক মিয়া বলেন, সেতু না থাকায় এলাকার মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বিশেষ করে বর্ষাকালে জনভোগান্তি চরমে পৌঁছায়। সেতুটির কাজ শেষ হলে রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হবে। নগরপাড়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মো. ওসমান বলেন, গুরুতর অসুস্থ রোগীদের ঢাকার হাসপাতালে নিতে স্বজনদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়তে হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০১ সালে প্রস্তাবিত রামপুরা-রূপগঞ্জ সড়কের বালু নদে তৃতীয় সেতু প্রকল্প অনুমোদন হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৬ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০০৩ সালে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের তত্ত্বাবধানে এক বছরের মধ্যে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু ২০০৪-২০০৫ অর্থবছরে বরাদ্দ মেলে মাত্র ৫০ লাখ টাকা। এরপর আর কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। এতে চারটি খুঁটি নির্মাণের পর সেতুর কাজ থমকে যায়।

এলাকার লোকজন বলেন, সেতুটি নির্মিত হলে রূপগঞ্জসহ রাজধানীর খিলগাঁও, সবুজবাগ, ডেমরা ও আশপাশের কয়েক লাখ মানুষ সুফল পাবে। ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা বাইপাস সড়ক দিয়ে বিভিন্ন যানবাহন সহজেই রাজধানীতে যাতায়াত করতে পারবে। এতে ভুলতা, সুলতানা কামাল সেতুর যানজট অনেকাংশে কমে যাবে। গড়ে উঠবে নতুন শিল্পকারখানা, সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাজান ভূঁইয়া সাংবাদিককে বলেন, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। এ কারণে সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়।

সওজের নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আলীউল হোসেন বলেন, বালু নদের সেতু নির্মাণের জন্য নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। তবে এখনো ঠিকাদার নিয়োগ হয়নি। এ বিষয়ে স্থানীয় সাংসদ এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী সাংবাদিককে বলেন, মামলা জটিলতার কারণে সেতুটির নির্মাণকাজ বন্ধ ছিল। সম্প্রতি সব জটিলতা কেটে গেছে। সেতুর নির্মাণে ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। শিগগিরই সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হবে।

সূত্র- প্রথম আলো

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর