ঢাকা ০১:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাঁধ রক্ষার বনে নোনার থাবা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৫৪:১৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ অক্টোবর ২০১৫
  • ৩৩৬ বার

ঝড় জলোচ্ছাস, জোয়ারের পানির অতিরিক্ত চাপ থেকে বসতবাড়ি, ফসলের ক্ষেত, জনবসতি রক্ষায় নদীর পাড়ে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করা হয়েছে। রোপণকৃত গাছ রক্ষা করা নিয়ে শঙ্কিত এলাকাবাসী।

সংশ্লিষ্ট এলাকার মধ্যে এখনও বেড়ি বাঁধের অভ্যন্তরে নোনা পানি প্রবেশ করানো হচ্ছে। তবে এর ধরণ পাল্টেছে। আগে বেড়িবাঁধের তলদেশ কেটে পাইপ বসিয়ে বিলে নোনা পানি প্রবেশ করানো হত আর এখন বেড়ি বাঁধের উপরে পাম্প বসিয়ে নোনা পানি প্রবেশ করানো হচ্ছে।

সাতক্ষীরা জেলার কপোতাক্ষ পাড়ের গাবুরা এলাকার কমপক্ষে ৪০টি স্থানে এরকম পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। যা দিয়ে জোয়ারের সময়ে বিল এলাকায় বিশেষ পদ্ধতিতে পানি প্রবেশ করানো হচ্ছে। যে স্থানে পাম্প বসানো হয়েছে সেখানে বেড়িবাঁধের তলদেশ কেটে পাইপ বসানো না হলেও বেড়িবাঁধের উপরিঅংশ কেটে পাইপ বসানো হয়েছে।

এই পাইপ স্থাপন করে বিল এলাকায় দেদার চিংড়ি চাষ করা হচ্ছে। শুধু গাবুরাতে নয় পুরো শ্যামনগর এলাকায় দেড় হাজার স্থানে বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে পাম্প বসিয়ে নোনা পানি প্রবেশ করানো হচ্ছে।

আবার কোন কোন স্থানে বাঁধের সামান্য অংশ কেটে স্যালোমেশিন দিয়ে পানি তোলা হয়। যা পরে ছোট ছোট নালা দিয়ে চিংড়ি ঘেরে নোনা পানি প্রবেশ করানো হচ্ছে। এতে কতিপয় মানুষ লাভবান হলেও বেশিরভাগ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সাথে আলাপকালে তারা জানান, বিলে নোনা পানি থাকায় বসতবাড়ির গাছ গাছালি মারা গেছে। নতুন গাছ লাগানো যাচ্ছে না। মিষ্টি পানির উৎস্য নষ্ট হওয়ায় গরু, মহিষ, ছাগল পালন করতে পারছি না।

Gaburaএদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আইলার সময়ে মুন্সিগঞ্জের শ্যামনগর এলাকার গাবুরা ইউনিয়ন কপোতাক্ষ নদের লেবুবুনয়া থেকে গাগড়াবারি পর্যন্ত বিস্তৃর্ণ এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে যায়। লোকালয় জোয়ারের পানির হাত থেকে রক্ষা করতে বিভিন্ন স্থানে বিকল্প বাঁধ দেয়া হয়। আবার সেই বাঁধ যাতে ভেঙ্গে না যায় সে জন্য বাঁধের বাইরে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সংরক্ষণ কার্যক্রমের আওতায় বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপন করা হয়েছে।ক্রেল(ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ইকোসিস্টেমস এ্যান্ড লাইভলীহুড প্রকল্প) এর আওতায় রোপনকৃত গাছের প্রজাতির মধ্যে রয়েছে, কেওড়া, বাইন, কাঁকড়া, সুন্দরী, গোলপাতা অন্যতম।

লেবুনিয়া গ্রামের একটি অংশ থেকে গাগড়ামারী এলাকা পর্যন্ত প্রায় ১১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গাছের চারা রোপন করা হলেও তা বেশিরভাগ স্থানে অস্তিত্ব নেই। আবার কোন কোন স্থানে রোপনকৃত স্থানে নদীর কাছাকাছি বাঁধ দিয়ে চিংড়ি চাষ করা হচ্ছে।

কোন কোন স্থানের রোপনকৃত গাছ মারাও গেছে। আবার ভেঙ্গে যাওয়া বেঁড়িবাধের স্থানে বিকল্প বেড়িবাধের উপর দিয়ে পাইপ স্থাপন করে পাম্পের সাহায্যে বিলে নোনা পানি উঠানো হচ্ছে। এতে বিকল্প বেড়ি বাঁধও যে কোন মুহূর্তে ভেঙ্গে বিবস্তৃণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

প্রকল্প এলাকার পাহারাদার খলিশাবুনিয়া গ্রামের মো: মোকছেদ আলী গাজীর স্ত্রী পচী বিবি (৫৫) জানান, এই বাগান পাহারা দেয়ার জন্য তিনি দিনে মাত্র ১০০ টাকা পান। অথচ দিনমজুরী করলে কমপক্ষে ২০০ টাকা পাওয়া যেত। তারপর এ কাজ করছি। যাতে রেপণকৃত গাছগুলি বাঁিচয়ে রাখা যায়। যাতে বাঁধটি রক্ষা পায়।

স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, বাঁধের নীচ দিয়ে যখন পাইপ বসানো হত তখন বাঁধের অবস্থা নড়বড়ে হয়ে যেত। সেটি ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু বাঁধের উপর দিয়ে পাইপ বসিয়ে পানি ঊঠালে বাঁধের কোন ক্ষতি হওয়ার কথা নয়।

Gaburaক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ইকোসিস্টেমস এ্যান্ড লাইভলিহুড প্রকল্প মুন্সীগঞ্জ এলাকার (সাইট অফিসার) আবুল হাশেম জানান, মুন্সিগঞ্জের লেবুনিয়া, পারসেমারী ও গাগড়ামারী এলাকায় ৫৪ হাজার ২০০ চারা রোপন করা হয়েছে। সাড়ে ৯ কিলোমিটার বনাঞ্চলে পাহারাদার রয়েছে ১১জন। তিনি বলেন, রোপনকৃত চারা যাতে গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষে খেয়ে ফেলতে বা অন্যরা নষ্ট করতে না পারে এজন্য তারা ২৪ ঘন্টা পাহারা দেয়ার কথা রয়েছে।

তিনি বলেন, বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে পাইপ স্থাপন করে চিংড়ি ঘেরে পানি তোলা হচ্ছে। তারা খুবই প্রভাবশালী তাদেও বিরুদ্ধে আমরা কোন ব্যবস্থা নিতে পারি না।

পানি উন্নয়ন বোর্ডে সাতক্ষীরা-১ অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আব্দুল হামিদ জানান, পোল্ডার এলাকার বেড়িবাঁধের তলদেশ ছিদ্র করে পাইপ বা কাঠের তৈরি চৌকোনা বাক্স বসিয়ে বিল এলাকায় জোয়ারের পানি তোলা বেআইনি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তৎপরতা ও কঠোরতার কারণে বর্তমানে বাঁধ কাটার প্রবণতা কমেছে। তবে এখন বেড়িবাধের উপর দিয়ে পাম্প বসিয়ে বেআইনিভাবে জোয়ারের পানি তোলা হচ্ছে। তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত অভিযোগে এই অঞ্চলে ৪ শতাধিক মামলা করা হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বাঁধ রক্ষার বনে নোনার থাবা

আপডেট টাইম : ১২:৫৪:১৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ অক্টোবর ২০১৫

ঝড় জলোচ্ছাস, জোয়ারের পানির অতিরিক্ত চাপ থেকে বসতবাড়ি, ফসলের ক্ষেত, জনবসতি রক্ষায় নদীর পাড়ে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করা হয়েছে। রোপণকৃত গাছ রক্ষা করা নিয়ে শঙ্কিত এলাকাবাসী।

সংশ্লিষ্ট এলাকার মধ্যে এখনও বেড়ি বাঁধের অভ্যন্তরে নোনা পানি প্রবেশ করানো হচ্ছে। তবে এর ধরণ পাল্টেছে। আগে বেড়িবাঁধের তলদেশ কেটে পাইপ বসিয়ে বিলে নোনা পানি প্রবেশ করানো হত আর এখন বেড়ি বাঁধের উপরে পাম্প বসিয়ে নোনা পানি প্রবেশ করানো হচ্ছে।

সাতক্ষীরা জেলার কপোতাক্ষ পাড়ের গাবুরা এলাকার কমপক্ষে ৪০টি স্থানে এরকম পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। যা দিয়ে জোয়ারের সময়ে বিল এলাকায় বিশেষ পদ্ধতিতে পানি প্রবেশ করানো হচ্ছে। যে স্থানে পাম্প বসানো হয়েছে সেখানে বেড়িবাঁধের তলদেশ কেটে পাইপ বসানো না হলেও বেড়িবাঁধের উপরিঅংশ কেটে পাইপ বসানো হয়েছে।

এই পাইপ স্থাপন করে বিল এলাকায় দেদার চিংড়ি চাষ করা হচ্ছে। শুধু গাবুরাতে নয় পুরো শ্যামনগর এলাকায় দেড় হাজার স্থানে বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে পাম্প বসিয়ে নোনা পানি প্রবেশ করানো হচ্ছে।

আবার কোন কোন স্থানে বাঁধের সামান্য অংশ কেটে স্যালোমেশিন দিয়ে পানি তোলা হয়। যা পরে ছোট ছোট নালা দিয়ে চিংড়ি ঘেরে নোনা পানি প্রবেশ করানো হচ্ছে। এতে কতিপয় মানুষ লাভবান হলেও বেশিরভাগ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সাথে আলাপকালে তারা জানান, বিলে নোনা পানি থাকায় বসতবাড়ির গাছ গাছালি মারা গেছে। নতুন গাছ লাগানো যাচ্ছে না। মিষ্টি পানির উৎস্য নষ্ট হওয়ায় গরু, মহিষ, ছাগল পালন করতে পারছি না।

Gaburaএদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আইলার সময়ে মুন্সিগঞ্জের শ্যামনগর এলাকার গাবুরা ইউনিয়ন কপোতাক্ষ নদের লেবুবুনয়া থেকে গাগড়াবারি পর্যন্ত বিস্তৃর্ণ এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে যায়। লোকালয় জোয়ারের পানির হাত থেকে রক্ষা করতে বিভিন্ন স্থানে বিকল্প বাঁধ দেয়া হয়। আবার সেই বাঁধ যাতে ভেঙ্গে না যায় সে জন্য বাঁধের বাইরে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সংরক্ষণ কার্যক্রমের আওতায় বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপন করা হয়েছে।ক্রেল(ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ইকোসিস্টেমস এ্যান্ড লাইভলীহুড প্রকল্প) এর আওতায় রোপনকৃত গাছের প্রজাতির মধ্যে রয়েছে, কেওড়া, বাইন, কাঁকড়া, সুন্দরী, গোলপাতা অন্যতম।

লেবুনিয়া গ্রামের একটি অংশ থেকে গাগড়ামারী এলাকা পর্যন্ত প্রায় ১১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গাছের চারা রোপন করা হলেও তা বেশিরভাগ স্থানে অস্তিত্ব নেই। আবার কোন কোন স্থানে রোপনকৃত স্থানে নদীর কাছাকাছি বাঁধ দিয়ে চিংড়ি চাষ করা হচ্ছে।

কোন কোন স্থানের রোপনকৃত গাছ মারাও গেছে। আবার ভেঙ্গে যাওয়া বেঁড়িবাধের স্থানে বিকল্প বেড়িবাধের উপর দিয়ে পাইপ স্থাপন করে পাম্পের সাহায্যে বিলে নোনা পানি উঠানো হচ্ছে। এতে বিকল্প বেড়ি বাঁধও যে কোন মুহূর্তে ভেঙ্গে বিবস্তৃণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

প্রকল্প এলাকার পাহারাদার খলিশাবুনিয়া গ্রামের মো: মোকছেদ আলী গাজীর স্ত্রী পচী বিবি (৫৫) জানান, এই বাগান পাহারা দেয়ার জন্য তিনি দিনে মাত্র ১০০ টাকা পান। অথচ দিনমজুরী করলে কমপক্ষে ২০০ টাকা পাওয়া যেত। তারপর এ কাজ করছি। যাতে রেপণকৃত গাছগুলি বাঁিচয়ে রাখা যায়। যাতে বাঁধটি রক্ষা পায়।

স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, বাঁধের নীচ দিয়ে যখন পাইপ বসানো হত তখন বাঁধের অবস্থা নড়বড়ে হয়ে যেত। সেটি ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু বাঁধের উপর দিয়ে পাইপ বসিয়ে পানি ঊঠালে বাঁধের কোন ক্ষতি হওয়ার কথা নয়।

Gaburaক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ইকোসিস্টেমস এ্যান্ড লাইভলিহুড প্রকল্প মুন্সীগঞ্জ এলাকার (সাইট অফিসার) আবুল হাশেম জানান, মুন্সিগঞ্জের লেবুনিয়া, পারসেমারী ও গাগড়ামারী এলাকায় ৫৪ হাজার ২০০ চারা রোপন করা হয়েছে। সাড়ে ৯ কিলোমিটার বনাঞ্চলে পাহারাদার রয়েছে ১১জন। তিনি বলেন, রোপনকৃত চারা যাতে গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষে খেয়ে ফেলতে বা অন্যরা নষ্ট করতে না পারে এজন্য তারা ২৪ ঘন্টা পাহারা দেয়ার কথা রয়েছে।

তিনি বলেন, বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে পাইপ স্থাপন করে চিংড়ি ঘেরে পানি তোলা হচ্ছে। তারা খুবই প্রভাবশালী তাদেও বিরুদ্ধে আমরা কোন ব্যবস্থা নিতে পারি না।

পানি উন্নয়ন বোর্ডে সাতক্ষীরা-১ অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আব্দুল হামিদ জানান, পোল্ডার এলাকার বেড়িবাঁধের তলদেশ ছিদ্র করে পাইপ বা কাঠের তৈরি চৌকোনা বাক্স বসিয়ে বিল এলাকায় জোয়ারের পানি তোলা বেআইনি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তৎপরতা ও কঠোরতার কারণে বর্তমানে বাঁধ কাটার প্রবণতা কমেছে। তবে এখন বেড়িবাধের উপর দিয়ে পাম্প বসিয়ে বেআইনিভাবে জোয়ারের পানি তোলা হচ্ছে। তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত অভিযোগে এই অঞ্চলে ৪ শতাধিক মামলা করা হয়েছে।