হাওর বার্তা ডেস্কঃ হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ করার সময় বাকী মাত্র ২ দিন। এই ২ দিনের মধ্যে একটি বাঁধের কাজও পুরোপুরি শেষ হবে এমন তথ্য নেই সংশ্লিষ্ট কারো কাছেই। জেলা প্রশাসন, পাউবো, এমনকি পুলিশ সুপারসহ কর্মকর্তারা বাঁধে সরেজমিনে গেলেও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির কাছ থেকে কাজ আদায় করা যাচ্ছে না। বাঁধ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা বললেন,‘বাঁধগুলোর যে অবস্থায় আছে, ১৫ মার্চ পর্যন্ত সময় লাগবে সিডিউল মোতাবেক কাজ শেষ হতে।’
সোমবার জেলার বৃহৎ দেখার হাওরের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ উতারিয়া বাঁধে গিয়ে দেখা গেছে, কোনভাবে দায়সারা ভাবে মাটি ফেলে রাখা হয়েছে। কমপেকশন করা হয়নি, স্লোপ ঠিক হয়নি, সিডিউল মোতাবেক বাঁধের প্রশস্ততা, উচ্চতা কোনটাই হয়নি। পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিকী সকাল থেকেই বাঁধে আছেন জানিয়ে বললেন, ‘এই বাঁধের পিআইসিদের বলা হয়েছে, দিনে-রাতে কাজ করতে হবে। বাঁধের প্রশস্ততা, উচ্চতা, কমপেকশন, স্লোপ, ঘাস লাগানো সবই দ্রুত ঠিক না করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই বাঁধের কাজ শতভাগ আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমি নিজেই মনিটরিং করবো এটি।’
এদিকে, সকাল থেকে পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ্ খান জেলার ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্র সোনার তাল হাওরের ১০ টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির কাজ ঘুরে দেখেছেন। এসময় গণমাধ্যম কর্মীরাও পুলিশ সুপারের সঙ্গে ছিলেন।
গণমাধ্যম কর্মীরা জানান, চন্দ্রসোনার তাল হাওরের ১৯ নম্বর পিআইসি ২০-২৫ শতাংশ কাজ করেছে। এই পিআইসি পুরাতন বাঁধকে কেটে আরও নষ্ট করে দিয়েছে। হাওরের ৭৮ নম্বর পিআইসি প্রকল্প এলাকায় সাইনবোর্ড বসানো ছাড়া আর কোন কাজই করেনি।
পিআইসি সভাপতি আবুল হোসেন বলেন,‘নির্ধারিত সময়ের ২০ দিন পরে তাঁদেরকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ২০ দিনের মধ্যে তারা কাজ শেষ করতে পারবেন।’ ৭৭ নম্বর পিআইসির প্রকল্প এলাকায় সামান্য পরিমাণে কাজ হয়েছে। এই হাওরের ৭৬ নম্বর পিআইসি’র সভাপতি মাসুক মিয়া ও ৮০ নম্বর পিআইসি’র সভাপতি নুরুজ্জামানের কাছ থেকে পুলিশ সুপার বরকতুল্লাহ্ খান দ্রুত কাজ আদায়ের মুচলেকা নিয়েছেন।
পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ্ খান বললেন,‘সোমবার ধর্মপাশার চন্দ্র সোনার তাল হাওররক্ষা বাঁধের ১০ টি পিআইসি’র কাজ দেখার সময় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বাঁধের কাজে অবহেলা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সিডিউল মোতাবেক কাজ করতেই হবে জানিয়ে দুই পিআইসি সভাপতির কাছ থেকে মুচলেকাও আদায় করা হয়েছে।’
শনিবার দিনভর সুনামগঞ্জ পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিকসহ পাউবো’র অন্যান্য প্রকৌশলীরা বিশ্বম্ভরপুরের হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ ঘুরে দেখেন। পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘বিশ্বম্ভরপুরের বৃহৎ করচার হাওরের ১ নম্বর পিআইসি’র বাঁধে স্লোপ তৈরি হয়নি, ঘাস লাগানোও হয়নি। ২, ৩ ও ৪ নম্বর পিআইসি’রও একই অবস্থা। ৫ নম্বর পিআইসি’র কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়, কাজে ত্রুটি ও অনিয়মও আছে।’
এই উপজেলার আঙ্গুরালি হাওরের ৬ নম্বর পিআইসির বাঁধে স্লোপ ও কমপেকশন করেননি। আবু বকর সিদ্দিক বলেন,‘বাঁধের কাজ একেবারে সিডিউল মোতাবেক শেষ হতে ১৫ মার্চ পর্যন্ত সময় লাগবে।’ প্রসঙ্গত. সুনামগঞ্জের ৩৭ টি হাওরে ৫৬৫ টি প্রকল্পের মাধ্যমে এবার হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ করা হচ্ছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি এসব কাজ শেষ করার নির্দেশ রয়েছে।