ঢাকা ০৫:৩১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাওরে ৮টি রোগে হাঁস মারা যাচ্ছে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৪৫:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ জানুয়ারী ২০১৯
  • ২৯৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ হাওর-বাঁওড়ে হাঁস পালন খুবই জনপ্রিয়। দেশের প্রায় সোয়া কোটি হাঁস পালন করা হয় এ হাওরাঞ্চলে। প্রকৃতি থেকে ৭০-৮০ শতাংশ খাবার সংগ্রহ করে বলে হাঁস লালন-পালনে খরচ হয় না খুব বেশি। ফলে হাওরাঞ্চলের অনেকেই হাঁস পালনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। অনেকে স্বাবলম্বীও হয়েছেন এর মাধ্যমে। কিন্তু হাঁস পালনে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হচ্ছে রোগবালাই। সাম্প্রতিক সময়ে রোগাক্রান্ত হয়ে মহামারী আকারে মরছে হাঁস। এর সঙ্গে মিইয়ে যাচ্ছে খামারিদের স্বপ্ন। ২০১৮ সালে হাওরে অকাল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা। কী কারণে এসব হাঁস মারা যায়, সে বিষয়ে জানা নেই তাদের। সম্প্রতি হাঁস মারা যাওয়ার কারণ নিয়ে গবেষণা করেছেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) একদল গবেষক। গবেষণায় আটটি রোগের কথা জানা গেছে। সমন্বিত টিকা প্রদান ও সচেতনতার মাধ্যমে মারা যাওয়া রোধ করা যাবে বলে মনে করছেন গবেষকরা।

প্রান্তিক খামারিদের হাঁস পালনে উৎসাহিত করতে সিভাসুর অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের অর্থায়নে ‘হাকালুকি ও টাঙ্গুয়ার হাওরাঞ্চলে হাঁসের রোগ-ব্যাধি পর্যবেক্ষণ এবং সময়োপযোগী রোগ প্রতিরক্ষা ও টিকাদান সময়সূচির উন্নয়ন’ শীর্ষক এ গবেষণা করা হয়।

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুজ্জামান বলেন, হাঁস মারা যাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে ‘ডাক প্লেগ’। এ ছাড়া কলেরার কারণেও অনেক হাঁস মারা যায়। সাধারণত হাঁস পচা ও নষ্ট খাবার খাওয়ার কারণে বিভিন্ন ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। নিয়মিত টিকা ও সচেতনতার মাধ্যমে হাঁসের মারা যাওয়া রোধ করা সম্ভব হবে। অনেকেই জানেন না হাঁসের টিকা আছে। তাই এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়েও বিভিন্ন ধরনের সচেতনতা প্রয়োজন।

২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়। এক বছরে তিনটি ধাপে হাকালুকি ও টাঙ্গুয়ার হাওর ও হাওর সংলগ্ন এলাকা থেকে ৬০০ হাঁসের নমুনা সংগ্রহ করে বিভিন্ন রোগের উপস্থিতি ও বিস্তৃতি শনাক্ত করা হয় সিভাসুর ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি ল্যাবরেটরিতে। গবেষণায় হাওরের হাঁসের বিভিন্ন সংক্রামক প্রাণঘাতী রোগ-ব্যাধির চিত্র শনাক্ত করা হয়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-ডাক প্লেগ, ডাক হেপাটাইসিস, কলিব্যাসিলোসিস, সালমোনেলসিস, নিউ ডাক ডিজিসসহ অনেক ভাইরাল, ব্যাক্টেরিয়া ও পরজীবীঘটিত রোগ। খামারিদের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ ও তথ্য সংগ্রহের ভিত্তিতে হাঁস পালনের ক্ষয়ক্ষতির প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়- সময় মতো টিকা না দেওয়া, হাঁস পরিচর্যায় অজ্ঞতা ও অসচেতনতা।

জানা যায়, সারাদেশে রয়েছে প্রায় চার শতাধিক হাওর। দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সাতটি জেলার প্রায় দুই কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হাওরের ওপর নির্ভরশীল। বোরো মৌসুমের ধান আবাদ শুরু হওয়ার পর থেকে হাওরাঞ্চলের সম্পদের তালিকায় ধান আর মাছ চাষের পর আসে হাঁস চাষ। বাংলাদেশের এক-চতুর্থাংশ হাঁস (১২ মিলিয়ন) হাওর এলাকায় প্রতিপালিত হয়। যদিও আগে হাঁস বাণিজ্যিক ছিল না। নব্বইয়ের দশক থেকে বাণিজ্যিকভাবে দেশের হাওরবেষ্টিত ছয় জেলায় হাঁস পালন শুরু হয়। নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে হাওরকে কেন্দ্র করে রয়েছে কয়েক হাজার হাঁসের খামার।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

হাওরে ৮টি রোগে হাঁস মারা যাচ্ছে

আপডেট টাইম : ১১:৪৫:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ জানুয়ারী ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ হাওর-বাঁওড়ে হাঁস পালন খুবই জনপ্রিয়। দেশের প্রায় সোয়া কোটি হাঁস পালন করা হয় এ হাওরাঞ্চলে। প্রকৃতি থেকে ৭০-৮০ শতাংশ খাবার সংগ্রহ করে বলে হাঁস লালন-পালনে খরচ হয় না খুব বেশি। ফলে হাওরাঞ্চলের অনেকেই হাঁস পালনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। অনেকে স্বাবলম্বীও হয়েছেন এর মাধ্যমে। কিন্তু হাঁস পালনে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হচ্ছে রোগবালাই। সাম্প্রতিক সময়ে রোগাক্রান্ত হয়ে মহামারী আকারে মরছে হাঁস। এর সঙ্গে মিইয়ে যাচ্ছে খামারিদের স্বপ্ন। ২০১৮ সালে হাওরে অকাল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা। কী কারণে এসব হাঁস মারা যায়, সে বিষয়ে জানা নেই তাদের। সম্প্রতি হাঁস মারা যাওয়ার কারণ নিয়ে গবেষণা করেছেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) একদল গবেষক। গবেষণায় আটটি রোগের কথা জানা গেছে। সমন্বিত টিকা প্রদান ও সচেতনতার মাধ্যমে মারা যাওয়া রোধ করা যাবে বলে মনে করছেন গবেষকরা।

প্রান্তিক খামারিদের হাঁস পালনে উৎসাহিত করতে সিভাসুর অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের অর্থায়নে ‘হাকালুকি ও টাঙ্গুয়ার হাওরাঞ্চলে হাঁসের রোগ-ব্যাধি পর্যবেক্ষণ এবং সময়োপযোগী রোগ প্রতিরক্ষা ও টিকাদান সময়সূচির উন্নয়ন’ শীর্ষক এ গবেষণা করা হয়।

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুজ্জামান বলেন, হাঁস মারা যাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে ‘ডাক প্লেগ’। এ ছাড়া কলেরার কারণেও অনেক হাঁস মারা যায়। সাধারণত হাঁস পচা ও নষ্ট খাবার খাওয়ার কারণে বিভিন্ন ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। নিয়মিত টিকা ও সচেতনতার মাধ্যমে হাঁসের মারা যাওয়া রোধ করা সম্ভব হবে। অনেকেই জানেন না হাঁসের টিকা আছে। তাই এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়েও বিভিন্ন ধরনের সচেতনতা প্রয়োজন।

২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়। এক বছরে তিনটি ধাপে হাকালুকি ও টাঙ্গুয়ার হাওর ও হাওর সংলগ্ন এলাকা থেকে ৬০০ হাঁসের নমুনা সংগ্রহ করে বিভিন্ন রোগের উপস্থিতি ও বিস্তৃতি শনাক্ত করা হয় সিভাসুর ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি ল্যাবরেটরিতে। গবেষণায় হাওরের হাঁসের বিভিন্ন সংক্রামক প্রাণঘাতী রোগ-ব্যাধির চিত্র শনাক্ত করা হয়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-ডাক প্লেগ, ডাক হেপাটাইসিস, কলিব্যাসিলোসিস, সালমোনেলসিস, নিউ ডাক ডিজিসসহ অনেক ভাইরাল, ব্যাক্টেরিয়া ও পরজীবীঘটিত রোগ। খামারিদের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ ও তথ্য সংগ্রহের ভিত্তিতে হাঁস পালনের ক্ষয়ক্ষতির প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়- সময় মতো টিকা না দেওয়া, হাঁস পরিচর্যায় অজ্ঞতা ও অসচেতনতা।

জানা যায়, সারাদেশে রয়েছে প্রায় চার শতাধিক হাওর। দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সাতটি জেলার প্রায় দুই কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হাওরের ওপর নির্ভরশীল। বোরো মৌসুমের ধান আবাদ শুরু হওয়ার পর থেকে হাওরাঞ্চলের সম্পদের তালিকায় ধান আর মাছ চাষের পর আসে হাঁস চাষ। বাংলাদেশের এক-চতুর্থাংশ হাঁস (১২ মিলিয়ন) হাওর এলাকায় প্রতিপালিত হয়। যদিও আগে হাঁস বাণিজ্যিক ছিল না। নব্বইয়ের দশক থেকে বাণিজ্যিকভাবে দেশের হাওরবেষ্টিত ছয় জেলায় হাঁস পালন শুরু হয়। নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে হাওরকে কেন্দ্র করে রয়েছে কয়েক হাজার হাঁসের খামার।