হাওর বার্তা ডেস্কঃ নির্বাচনের আগের দিন (শনিবার, ২৯ ডিসেম্বর) মোবাইল ইন্টারনেটের ফোর জি ও থ্রি জি সেবা ৩৩ ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। আজ বিকেল ৩টায় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
বিটিআরসি এক চিঠিতে শনিবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরের পর থেকে রোববার (৩০ ডিসেম্বর) রাত ১২টা পর্যন্ত এই নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখতে দেশের সব মোবাইল ফোন অপারেটরকে নির্দেশ দিয়েছে।
ইতিমধ্যে বিটিআরসির এ নির্দেশনা কার্যকর করেছে দেশের সকল অপারেটর। দুটি অপারেটরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এই নির্দেশনার ফলে টুজি ইন্টারনেট, ইন্টারনেটে টেক্সট পাঠানো ও গ্রহণ এবং ভয়েস কল সেবা চালু সেবা থাকবে। ইন্টারনেটের গতি কমে যাওয়ার কারণে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করা অনেকটা জটিল হবে।
মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ থাকলেও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট এখনও স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি’র সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক।
তিনি বলেন, আমরা (আইএসপিএবি) ইন্টারনেটের বিষয়ে কোনো ধরনের নির্দেশনা এখনও পাইনি। সেহেতু ধরে নিতে পারি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু থাকবে।
ইমদাদুল হক বলেন, আমাদেরটা (ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট) বন্ধ না হওয়াই উচিত। বন্ধ হলে ব্যবসায়িক এবং অফিসিয়াল যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটা খোলা রাখলে সরকারের কোনো ক্ষতি হবে না বলে আমরা মনে করি।
উল্লেখ্য, আসন্ন সংসদ নির্বাচনের ভোটের আগে ‘অপপ্রচার’ ঠেকাতে গত ১৩ ডিসেম্বর এক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) ইন্টারনেটের গতি কমানোর প্রস্তাবনা দেয় পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ।
ওই বৈঠকে সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশন আয়োজিত আইন-শৃঙ্খলাবিষয়ক সমন্বয়সভায় এই পরামর্শ দেয়া হয়।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। এতে সব বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি, সব রিটার্নিং অফিসার, জেলা পুলিশ সুপার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাসহ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশ নেন।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি বলেন, নির্বাচনে মোবাইল ব্যাংকিং ও বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে টাকার লেনদেন হয়। এসব দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সাংবাদিকদের পরিচয়পত্র দেওয়ার বিষয়ে নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দেন।
ঊর্ধ্বতন একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার ঠেকাতে তিনি নির্বাচনের সময় মোবাইল নেটওয়ার্ক ফোরজি থেকে নামিয়ে টুজি করা এবং ভোটকেন্দ্রে বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর সরাসরি সম্প্রচার নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব দেন।
র্যাবের ডিজি বলেন, ২০১৪ সালের মতো কোনো ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। সাইবার ওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত করে গুজব ছড়িয়ে যাতে নির্বাচনী পরিবেশ বানচাল করতে না পারে, সেদিকে তাঁরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন।
র্যাব বিটিআরসির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানান। তিনিও ভোটের সময়ে তিন দিনের জন্য মোবাইল নেটওয়ার্ক ফোরজি থেকে নামিয়ে টুজিতে আনার প্রস্তাব করেন।
নির্বাচনে মোবাইল নেটওয়ার্ক ফোরজি থেকে টুজিতে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করেন আনসারের মহাপরিচালকও।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব প্রস্তাবনার প্রেক্ষিতে ৭ ডিসেম্বর রাত ১০টা থেকে ২৮ ডিসেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত প্রথমবার দেশের সব মোবাইল ফোনে থ্রিজি ও ফোরজি নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখা হয়েছিল।