মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলায় সাক্ষ্য দিতে চান পাকিস্তানের পাঁচ খ্যাতিমান নাগরিক।
তারা বাংলাদেশের আদালতকে তাদের সাক্ষ্য গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে বলছেন, তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হলে বদলে যেতে পারে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায়।
বুধবার আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনটি লিখেছেন ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান, যিনি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে অনেক সমালোচনামূলক নিবন্ধ লিখেছেন এবং এজন্য ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই পাঁচ পাকিস্তানি নাগরিক হলেন পাকিস্তানের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মিয়া সুমরু, জাতীয় পরিষদের সাবেক সদস্য কর্মকর্তা ইশাক খান খাকওয়ানি এবং প্রভাবশালী ডন মিডিয়া গ্রুপের চেয়ারপারসন আম্বার হারুন সাইগল।
অন্য দুজন ব্যবসায়ী।
তারা সবাই দাবি করেছেন, ১৯৭১ সালের এপ্রিলে সংঘটিত যে চারটি ঘটনার জন্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে সে সময় তিনি করাচিত অবস্থান করছিলেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলাকালে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী একই কথা বললেও তা গ্রহণ করেনি আদালত। আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
এরপর আপিল করা হলেও সর্বোচ্চ আদালতও তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে। সম্প্রতি আপিলের রায় প্রকাশের পর আজ বুধবার রিভিউ আবেদন করেছেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী।
ওই পাঁচ পাকিস্তানি বলছেন, তাদের সাক্ষ্য না শুনেই সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসি দেয়া অন্যায় হবে।
গার্মেন্ট ব্যবসায়ী মুনীব আর্জমান্দ খান বলেন, তার সাক্ষ্য ‘আদালতের পুরো বিচারপ্রক্রিয়াকেই বদলে দেবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে পাকিস্তানের হত্যাযজ্ঞ শুরুর চারদিন পর ২৯ মার্চ তিনি তার স্কুলের বন্ধু সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে করাচি বিমানবন্দর থেকে গ্রহণ করেন এবং আম্বার হারুনের বাসায় নিয়ে যান। এর তিন সপ্তাহ পর তিনি তাকে লাহোরের বিমানে তুলে দেন-যেখানে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী অধ্যয়নের জন্য যান।
তিনি বলেন, ওই তিন সপ্তাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সালাহউদ্দিন কাদেরকে যে অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে তা ১৩-১৭ এপ্রিলের মধ্যে সংঘটিত হয়।
‘আমরা কিছু বাড়িয়ে বলছি না। আমরা সত্যটাই বলছি,’ বলছিলেন মুনীব।
১৯৭১ সালে ২০ বছর বয়সী আম্বার হারুন সাইগল বলেন, তিনি সালাহউদ্দিন কাদেরকে তাদের বাড়িতে আসতে দেখেছেন।
‘সালাহউদ্দিন আমাদের পারিবারিক বাড়িতে (করাচিতে) ১৯৭১ সালের মধ্যএপ্রিল থেকে দুই থেকে তিন সপ্তাহ অবস্থান করেন,’ বলছিলেন আম্বার।
‘রাতের খাবারের টেবিলে আমার বোন ও বাবা-মায়ের সাথে তিনি আলোচনায় যোগ দিতেন।’
‘এটা সত্য। কারো জীবন বাঁচানোর জন্য আদালত অনুমতি দিলে আমি অবশ্যই বাংলাদেশে গিয়ে সাক্ষ্য দিতে চাই,’ বলে আম্বার।
মোহাম্মদ মিয়া সুমরু, যিনি ২০০৭ সালে পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, বলেন, সালাহউদ্দিন কাদের ওই তিন সপ্তাহ করাচিতে ছিলেন এবং তার সাথে নিয়মিত সাক্ষাৎ করতেন…এরপর তিনি লাহোর চলে যান।
‘একজন নিরপরাধ লোকের ওপর এটা চরম এবং ভয়াবহ অবিচার। বিচারের নামে সাক্ষীদের উপস্থিত হওয়ার অনুমতি দেয়া উচিত এবং শপথ নিয়ে আমি যে কোনো সময় সাক্ষী দিতে প্রস্তুত,’ বলছিলেন সুমরু।
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাবা ফখরুল কাদের চৌধুরী পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকার ছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে তিনি কারাগারে মৃত্যবরণ করেন।
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার বিচার চলাকালে তার আইনজীবী ৪১ জন সাক্ষীর তালিকা দিলেও আদালত শুধু ৫ জনকে সাক্ষ্য দেয়ার অনুমতি দেয়।
এরপর তার আইনজীবী বাকি সাক্ষীদের সাক্ষ্য এফিডেভিডসহ জমা দিলেও তা গ্রহণ করেনি ট্রাইব্যুনাল ও আপিল বিভাগ।
ট্রাইব্যুনাল এ পর্যন্ত ২৪ জনকে দণ্ডিত করেছে যাদের বেশিরভাগই জামায়াতে ইসলামীর নেতা। এর মধ্যে আবদুল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজজ্জামেরন ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।
আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, মানবাধিকার সংগঠনগুলো ট্রাইব্যুনালের তীব্র সমালোচনা করেছে।