হাওর বার্তা ডেস্কঃ রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আসনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কমান্ড মানছেন না কেউ। এ আসনে তিনি উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি অধ্যাপক আসাদুজ্জামান চৌধুরী সাবলুকে মনোনীত করলেও সাবেক এমপি আনিসুল ইসলাম মণ্ডল ও পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এরশাদের জামাতা জিয়াউদ্দিন বাবলু মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন এ আসনে। বারবার নেতৃত্ব পরিবর্তন, বহিরাগত জাতীয় পার্টির নেতার মনোনয়ন দাখিলকে কেন্দ্র করে উপজেলায় পার্টির মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। পার্টির চেয়ারম্যান উভয় সংকটে পড়েছেন। জাতীয় পার্টি চার ভাগে বিভক্তির কারণে এ আসনটি আওয়ামী লীগের ঘরে চলে যেতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। এদিকে ‘হামার নেতা সাবলু, হঠাও ভাটিয়া বাবলু’ স্লোগান তুলে জিয়াউদ্দিন বাবলুকে বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ আসনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে স্থানীয় নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন।
জানা যায়, রংপুরে এরশাদের জনপ্রিয়তা ও লাঙ্গলের ঘাঁটিকে কাজে লাগিয়ে ২০০১ সালে মোহাম্মদ আলী সরকার বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ আসনে জাতীয় পার্টির এমপি নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮ সালে দলের চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ ব্যবসায়ী আনিসুল ইসলাম মণ্ডলকে মনোনয়ন দিলে তিনি জাতীয় পার্টির এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে বদরগঞ্জ উপজেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাবেক সভাপতি আসদুজ্জামান সাবলু চৌধুরীকে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তৎকালীন জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার নাটকীয়তায় তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক বিনা ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বারবার দলের নেতৃত্ব পরিবর্তনের কারণে এ আসনে জাতীয় পার্টির নেতারা চার ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
উপজেলা সভাপতি আসাদুজ্জামান চৌধুরী সাবলু, সাবেক এমপি আনিসুল ইসলাম মণ্ডল ও জাতীয় আইনজীবী ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির বিভাগীয় যুগ্ম সম্পাদক এ্যাডভোকেট মোকাম্মেল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে চলছে দল। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির কিছু সুবিধাভোগী নেতাকর্মীরা জিয়াউদ্দিন বাবলুর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসাদুজ্জামান চৌধুরী সাবলু, আনিসুল ইসলাম মণ্ডল ও অ্যাডভোকেট মোকাম্মেল হক চৌধুরী দল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে এ আসনের বিভিন্ন হাট-বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ব্যানার-ফেস্টুন লাগিয়ে ছিলেন। ২৮ নভেম্বর এ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে আসাদুজ্জামান চৌধুরী সাবলু, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনিসুল ইসলাম মণ্ডল উপজেলা নির্বাচন রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। সেই সঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য চট্টগ্রাম-৯ আসনের এমপি জিয়াউদ্দিন বাবলু এ আসনে তার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, বারবার নেতৃত্বের পরিবর্তনে দলে বিভক্তি, এ আসন ধরে রাখতে পরিকল্পনা না থাকা, স্থানীয় পর্যায়ে কোন্দলের কারণে দলের প্রতি বিমুখ হয়ে পড়েছেন তৃণমূলের কর্মীরা। এর আগে বদরগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে এরশাদের লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে লড়াই করা উপজেলা জাতীয় পার্টির নেতা লাতিফুল খাবির প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে পারেননি। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের মধ্যে বেশির ভাগ ইউনিয়নে প্রার্থী দিতে পারেনি জাতীয় পার্টি।
সাবেক সংসদ সদস্য আনিসুল ইসলাম মণ্ডল অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় পার্টিতে আসা সাবলু চৌধুরী দলের নেতৃত্ব পাওয়ার পর দল সংগঠিত না হয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তার রাজনৈতিক মতাদর্শের মিল না থাকায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আস্থা রাখতে পারেনি। তাই বেশির ভাগ নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটার আমার সঙ্গে রয়েছে। তাদের কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমি মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নিয়েছি। আমি নির্বাচিত হয়ে বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ আসনের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি দলকে পুনরায় শক্তিশালী করব।