ঢাকা ১১:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এক কলেজে ৩ শিক্ষার্থী, ১ শিক্ষক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৪৮:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ অক্টোবর ২০১৫
  • ৩৮৪ বার

শিরোনাম দেখে হয়তো অনেকেই ভাবছেন-এটা কীভাবে সম্ভব? হ্যাঁ, সেটাই সম্ভব হয়েছে ভারতের ভিজিয়ানাগারাম জেলার ১৫৫ বছরের পুরাতন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এম আর গভারনমেন্ট সংস্কৃত কলেজে।

কলেজটি ১৮৬০ সালে প্রাকৃতিক সবুজে সজ্জিত এক মনোরম পরিবেশে প্রাচীন সংস্কৃত ভাষা শিক্ষার জন্য ভিজিয়ানাগারামের মহারাজারা প্রতিষ্ঠা করেন।

এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ভারত সরকার ১৯৫০ অধিগ্রহণ করে। পরে ২০০৪ সালে সংস্কৃত হাই স্কুল এবং এম আর গভারনমেন্ট সংস্কৃত কলেজে নামে একীভূত করা হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি গভারনমেন্ট সংস্কৃত স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে পরিচিত।

ওই কলেজে ৩৭১ শিক্ষার্থী ও ১৩ জন শিক্ষক নিয়ে প্রাণবন্ত এক স্কুল সেকশন চালু করা হয়। তবে কলেজ পর্যায়ে গিয়ে শিক্ষার্থী কমতে থাকে। বর্তমানে তিন শিক্ষার্থী ও এক শিক্ষক নিয়েই চলছে কলেজটি। ওই শিক্ষকই কলেজটির অধ্যক্ষ এবং অনুষদ প্রধান।

কলেজের জরা-জীর্ণ একতলা ভবনটির ২০০৩ সালের পরে কোনো অবকাঠামোগত সংস্কার করা হয়নি। অতিরিক্ত বিষয় হিসেবে স্থানীয় তেলুগু এবং ইংরেজি ভাষার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিতে একদাশ শ্রেণি থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি প্রাচীন সংস্কৃত ভাষার ওপর সমন্বিত গ্রাজুয়েশন কোর্স করানো হয়।

কলেজটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা বি রামা রাও বলেন, প্রতিটি বিষয়ে ৩০ জন শিক্ষার্থী পড়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু প্রতিবছর শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এক দশক আগে এখানে সংস্কৃত বিভাগে ২০ শিক্ষার্থী ছিল। গত বছর পাঁচ জন থেকে চলতি বছর তিন জনে নেমে এসেছে। বর্তমানে কলেজটিতে বিএ প্রথম বর্ষের দুই শিক্ষর্থী এবং স্নাতক শেষ বর্ষের এক শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে।

স্কুল ও কলেজটির কর্মচারীদের ভাষ্যমতে, জেলার বেশির ভাগ শিক্ষার্থী অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল নয়। তাই যেসব বিষয় পেশাগত ক্ষেত্রে ভালো চাকরির দিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে, শিক্ষার্থীরা সেসব বিষয়ে পড়তে বেশি আগ্রহী হয়। চাকরির ক্ষেত্রে সংস্কৃত বিষয়টি অবহেলিত, তাই তারা এ বিষয়ে পড়তে আগ্রহ দেখায় না। যেসব শিক্ষার্থীদের অন্য কোথাও লেখাপড়ার করা উপায় থাকে না, তারাই এই সংস্কৃত কলেজে ভর্তি হয়।

২০০৪ সাল থেকে অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকা কলেজটির একমাত্র শিক্ষক সোয়াপনা হেইনদাভি শিক্ষার্থী সংকট প্রসঙ্গে বলেন, প্রাচীন ও বৈজ্ঞানিক এই ভাষা শিক্ষায় সরকার কোনো সহযোগিতা করে না, বৃত্তি দেয় না, চাকরি দেয় না, এমন কী স্বীকৃতিও দেওয়া হয় না। তাই কেউ এই ভাষা শিক্ষা ও উন্নয়নে কাজ করতে আগ্রহ দেখায় না। ফলে অভিভাবকরা তাদের ছেলেমেয়েদের সংস্কৃত কলেজে পাঠান না।

কলেজটির হাইস্কুল অংশে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার সুযোগ রয়েছে। হাই স্কুলটির প্রধান শিক্ষক এম ভানুপ্রকাশ বলেন, ঐতিহ্য রক্ষায় শিক্ষার্থীদের ২শ’ মার্কসের সংস্কৃত ভাষা শেখাই। সেই সঙ্গে ইংরেজি, হিন্দি, তেলুগু, গণিত, জীববিজ্ঞান এবং সামজিক শিক্ষার মতো বিষয় পড়ানো হয়।

তিনি বলেন, আমরা নতুন ভবন নির্মাণ করতে চাই। সরকারের বাজেটও বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু কলেজ এবং স্কুল এক সঙ্গে থাকায় তহবিল ব্যবহার করা যাচ্ছে না। স্কুলের ভবন সম্প্রসারণে কলেজের পক্ষ থেকে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।

ভিজিয়ানাগারাম জেলার ডিপুটি কালেক্টর এস ডি অ্যানিতা বলেন, যদিও কলেজটির অস্তিত্ব টিকেয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে, তবুও আমরা সংস্কৃত কলেজটি অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করতে নির্দেশনা পাইনি।

এক সময়ের তুমুল জনিপ্রিয়, প্রচলিত ও আভিজাত্যের প্রতীক সংস্কৃত ভাষার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই বিশ্বজুড়ে এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সংশ্লিষ্টদের কার্যকর কোনো ভূমিকা নেই।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

এক কলেজে ৩ শিক্ষার্থী, ১ শিক্ষক

আপডেট টাইম : ১১:৪৮:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ অক্টোবর ২০১৫

শিরোনাম দেখে হয়তো অনেকেই ভাবছেন-এটা কীভাবে সম্ভব? হ্যাঁ, সেটাই সম্ভব হয়েছে ভারতের ভিজিয়ানাগারাম জেলার ১৫৫ বছরের পুরাতন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এম আর গভারনমেন্ট সংস্কৃত কলেজে।

কলেজটি ১৮৬০ সালে প্রাকৃতিক সবুজে সজ্জিত এক মনোরম পরিবেশে প্রাচীন সংস্কৃত ভাষা শিক্ষার জন্য ভিজিয়ানাগারামের মহারাজারা প্রতিষ্ঠা করেন।

এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ভারত সরকার ১৯৫০ অধিগ্রহণ করে। পরে ২০০৪ সালে সংস্কৃত হাই স্কুল এবং এম আর গভারনমেন্ট সংস্কৃত কলেজে নামে একীভূত করা হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি গভারনমেন্ট সংস্কৃত স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে পরিচিত।

ওই কলেজে ৩৭১ শিক্ষার্থী ও ১৩ জন শিক্ষক নিয়ে প্রাণবন্ত এক স্কুল সেকশন চালু করা হয়। তবে কলেজ পর্যায়ে গিয়ে শিক্ষার্থী কমতে থাকে। বর্তমানে তিন শিক্ষার্থী ও এক শিক্ষক নিয়েই চলছে কলেজটি। ওই শিক্ষকই কলেজটির অধ্যক্ষ এবং অনুষদ প্রধান।

কলেজের জরা-জীর্ণ একতলা ভবনটির ২০০৩ সালের পরে কোনো অবকাঠামোগত সংস্কার করা হয়নি। অতিরিক্ত বিষয় হিসেবে স্থানীয় তেলুগু এবং ইংরেজি ভাষার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিতে একদাশ শ্রেণি থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি প্রাচীন সংস্কৃত ভাষার ওপর সমন্বিত গ্রাজুয়েশন কোর্স করানো হয়।

কলেজটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা বি রামা রাও বলেন, প্রতিটি বিষয়ে ৩০ জন শিক্ষার্থী পড়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু প্রতিবছর শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এক দশক আগে এখানে সংস্কৃত বিভাগে ২০ শিক্ষার্থী ছিল। গত বছর পাঁচ জন থেকে চলতি বছর তিন জনে নেমে এসেছে। বর্তমানে কলেজটিতে বিএ প্রথম বর্ষের দুই শিক্ষর্থী এবং স্নাতক শেষ বর্ষের এক শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে।

স্কুল ও কলেজটির কর্মচারীদের ভাষ্যমতে, জেলার বেশির ভাগ শিক্ষার্থী অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল নয়। তাই যেসব বিষয় পেশাগত ক্ষেত্রে ভালো চাকরির দিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে, শিক্ষার্থীরা সেসব বিষয়ে পড়তে বেশি আগ্রহী হয়। চাকরির ক্ষেত্রে সংস্কৃত বিষয়টি অবহেলিত, তাই তারা এ বিষয়ে পড়তে আগ্রহ দেখায় না। যেসব শিক্ষার্থীদের অন্য কোথাও লেখাপড়ার করা উপায় থাকে না, তারাই এই সংস্কৃত কলেজে ভর্তি হয়।

২০০৪ সাল থেকে অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকা কলেজটির একমাত্র শিক্ষক সোয়াপনা হেইনদাভি শিক্ষার্থী সংকট প্রসঙ্গে বলেন, প্রাচীন ও বৈজ্ঞানিক এই ভাষা শিক্ষায় সরকার কোনো সহযোগিতা করে না, বৃত্তি দেয় না, চাকরি দেয় না, এমন কী স্বীকৃতিও দেওয়া হয় না। তাই কেউ এই ভাষা শিক্ষা ও উন্নয়নে কাজ করতে আগ্রহ দেখায় না। ফলে অভিভাবকরা তাদের ছেলেমেয়েদের সংস্কৃত কলেজে পাঠান না।

কলেজটির হাইস্কুল অংশে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার সুযোগ রয়েছে। হাই স্কুলটির প্রধান শিক্ষক এম ভানুপ্রকাশ বলেন, ঐতিহ্য রক্ষায় শিক্ষার্থীদের ২শ’ মার্কসের সংস্কৃত ভাষা শেখাই। সেই সঙ্গে ইংরেজি, হিন্দি, তেলুগু, গণিত, জীববিজ্ঞান এবং সামজিক শিক্ষার মতো বিষয় পড়ানো হয়।

তিনি বলেন, আমরা নতুন ভবন নির্মাণ করতে চাই। সরকারের বাজেটও বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু কলেজ এবং স্কুল এক সঙ্গে থাকায় তহবিল ব্যবহার করা যাচ্ছে না। স্কুলের ভবন সম্প্রসারণে কলেজের পক্ষ থেকে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।

ভিজিয়ানাগারাম জেলার ডিপুটি কালেক্টর এস ডি অ্যানিতা বলেন, যদিও কলেজটির অস্তিত্ব টিকেয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে, তবুও আমরা সংস্কৃত কলেজটি অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করতে নির্দেশনা পাইনি।

এক সময়ের তুমুল জনিপ্রিয়, প্রচলিত ও আভিজাত্যের প্রতীক সংস্কৃত ভাষার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই বিশ্বজুড়ে এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সংশ্লিষ্টদের কার্যকর কোনো ভূমিকা নেই।