ঢাকা ০৬:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ২৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সারি সারি নানা জাতের শাকসবজির বীজতলা ভাসছে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৩৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৯ নভেম্বর ২০১৮
  • ৩৪০ বার
হাওর বার্তা ডেস্কঃ জলমগ্ন বিস্তীর্ণ ভূমি। সারিতে সারিতে নানা জাতের শাকসবজির বীজতলা ভাসছে। চোখ জুড়ানো সবুজের সমারোহ। কৃষি প্রধান আমাদের দেশে এ দৃশ্য একেবারেই নতুন। ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে ভাসমান পদ্ধতির পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি কৃষির জন্য আশীর্বাদ। দূর থেকে দেখলে মনে হবে বিশাল জলমগ্ন ভূমির মধ্যে একখণ্ড সবুজের হাতছানি। কিন্তু কাছে যেতেই অবাক হতে হবে ভেলায় ভেসে বেড়ানো গাঢ় সবুজের নান্দনিক ভাসমান বীজতলা দেখে। এসব ভাসমান বীজতলায় কোনোটায় লাউ, কুমড়া, শিম, বরবটি, টমেটো, বেগুন, করলা, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা, শসার চারা উৎপাদন এবং লাউশাক, লালশাক, পালংশাকের চাষ।

বন্যাপ্লাবিত বা নিচু অঞ্চলে ভাসমান শাকসবজি চাষ নতুন এক দিগন্তের শুভসূচনা করেছে। বসতবাড়ির পাশেই অল্প পানির পতিত জমিতে শাক সবজি চাষাবাদ করে এখন রংপুরের কৃষকরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন। ভাসমান বীজতলার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে মাটির পরিবর্তে পানিতে সবজি উৎপাদন করা। পানিতে ভাসমান এ পদ্ধতিতে সারা বছরই সবজি উৎপাদন করা সম্ভব। পানির ওপর ভাসমান সবজি চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছে এক সময়ের মঙ্গা অঞ্চল হিসাবে খ্যাত রংপুরের মানুষজন। অদম্য সাহস ও কঠোর পরিশ্রম নিয়ে কৃষিকাজে নেমে পড়েছে এক সময়ের দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলের মানুষগুলো। অধিকাংশ পরিবার আজ তাদের পেশাগত পরিচয় পেয়েছে বিষমুক্ত সবজি চাষি হিসেবে।

পীরগাছা উপজেলার উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হারুনুর রশীদ বলেন, ভাসমান বীজতলা তৈরিতে কৃষকের ব্যয় নেই বললেই চলে। মূলত কচুরিপানাসহ বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদের ওপর মাটি দিয়ে ভাসমান বীজতলা তৈরি করা হয়। ভাসমান বেডে সবজি চাষ দেখে এলাকার অন্য কৃষকরাও বন্যার কবল থেকে বিকল্প পদ্ধতিতে চাষাবাদ করার ওপর আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এ পদ্ধতিতে বন্যা ও অতি বৃষ্টির কারণে বীজতলা ও শাকসবজি তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থেকে রক্ষা পান কৃষকরা। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের কৃষি খাতে যে ক্ষতির সম্ভাবনা আছে তা ভাসমান চাষ পদ্ধতি দিয়েই অনায়াসে মোকাবিলা করা সম্ভব।

রংপুরের পীরগাছা উপজেলার প্রান্তিক কৃষক মারুফ হাসান জানালেন, কচুরিপানার ভাসমান বেডে যে সবজির ফলন হয় তাতে তারা খুবই খুশি। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে সার ও কীটনাশকের কোনো প্রয়োজন নেই। ২০-২৫ দিনের মধ্যেই শাকসবজি স্থানীয় হাটবাজারে বিক্রি করা যাচ্ছে। তাই তারা সহজে লাভবান হচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বন্যার পানিতে ভাসমান আগাম সবজির ও ধানের বীজতলা তৈরি করতে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি না হলে বা কোনো বিপর্যয় না ঘটলে মৌসুমে ৪ থেকে ৫ বার চারা উৎপাদন করে বিক্রি করা সম্ভব।

সরাসরি মাটিতে শাকসবজির বীজ বপন না করে কাঁচা কচুরিপানা ৩ ফুট পরিমাণ উঁচু করে পচিয়ে বেড তৈরি করে অঙ্কুরিত বীজ বুনতে হয় এতে স্বাভাবিক বীজতলার মতো খরচ হয় না। দেশের ৪৫ লাখ হেক্টর জল সীমার মধ্যে অর্ধেক জলসীমাতেও যদি ভাসমান সবজির আবাদ করা যায় তাহলে তা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

সমন্বিত প্রচেষ্টায় ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদে কৃষক অধিকতর সফলতা পেলে ভাসমান চাষ পদ্ধতি বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। জীবনের আর্থসামাজিক পরিবর্তনে আসবে আশা জাগানিয়ার বাস্তব গল্প। যাতে জড়িয়ে আছে প্রযুক্তি দিয়ে প্রাকৃতিক চলমান বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে বেঁচে থাকার অন্যরকম স্বাদ, তৃপ্তি ও অবলম্বন।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

সারি সারি নানা জাতের শাকসবজির বীজতলা ভাসছে

আপডেট টাইম : ১০:৩৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৯ নভেম্বর ২০১৮
হাওর বার্তা ডেস্কঃ জলমগ্ন বিস্তীর্ণ ভূমি। সারিতে সারিতে নানা জাতের শাকসবজির বীজতলা ভাসছে। চোখ জুড়ানো সবুজের সমারোহ। কৃষি প্রধান আমাদের দেশে এ দৃশ্য একেবারেই নতুন। ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে ভাসমান পদ্ধতির পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি কৃষির জন্য আশীর্বাদ। দূর থেকে দেখলে মনে হবে বিশাল জলমগ্ন ভূমির মধ্যে একখণ্ড সবুজের হাতছানি। কিন্তু কাছে যেতেই অবাক হতে হবে ভেলায় ভেসে বেড়ানো গাঢ় সবুজের নান্দনিক ভাসমান বীজতলা দেখে। এসব ভাসমান বীজতলায় কোনোটায় লাউ, কুমড়া, শিম, বরবটি, টমেটো, বেগুন, করলা, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা, শসার চারা উৎপাদন এবং লাউশাক, লালশাক, পালংশাকের চাষ।

বন্যাপ্লাবিত বা নিচু অঞ্চলে ভাসমান শাকসবজি চাষ নতুন এক দিগন্তের শুভসূচনা করেছে। বসতবাড়ির পাশেই অল্প পানির পতিত জমিতে শাক সবজি চাষাবাদ করে এখন রংপুরের কৃষকরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন। ভাসমান বীজতলার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে মাটির পরিবর্তে পানিতে সবজি উৎপাদন করা। পানিতে ভাসমান এ পদ্ধতিতে সারা বছরই সবজি উৎপাদন করা সম্ভব। পানির ওপর ভাসমান সবজি চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছে এক সময়ের মঙ্গা অঞ্চল হিসাবে খ্যাত রংপুরের মানুষজন। অদম্য সাহস ও কঠোর পরিশ্রম নিয়ে কৃষিকাজে নেমে পড়েছে এক সময়ের দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলের মানুষগুলো। অধিকাংশ পরিবার আজ তাদের পেশাগত পরিচয় পেয়েছে বিষমুক্ত সবজি চাষি হিসেবে।

পীরগাছা উপজেলার উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হারুনুর রশীদ বলেন, ভাসমান বীজতলা তৈরিতে কৃষকের ব্যয় নেই বললেই চলে। মূলত কচুরিপানাসহ বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদের ওপর মাটি দিয়ে ভাসমান বীজতলা তৈরি করা হয়। ভাসমান বেডে সবজি চাষ দেখে এলাকার অন্য কৃষকরাও বন্যার কবল থেকে বিকল্প পদ্ধতিতে চাষাবাদ করার ওপর আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এ পদ্ধতিতে বন্যা ও অতি বৃষ্টির কারণে বীজতলা ও শাকসবজি তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থেকে রক্ষা পান কৃষকরা। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের কৃষি খাতে যে ক্ষতির সম্ভাবনা আছে তা ভাসমান চাষ পদ্ধতি দিয়েই অনায়াসে মোকাবিলা করা সম্ভব।

রংপুরের পীরগাছা উপজেলার প্রান্তিক কৃষক মারুফ হাসান জানালেন, কচুরিপানার ভাসমান বেডে যে সবজির ফলন হয় তাতে তারা খুবই খুশি। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে সার ও কীটনাশকের কোনো প্রয়োজন নেই। ২০-২৫ দিনের মধ্যেই শাকসবজি স্থানীয় হাটবাজারে বিক্রি করা যাচ্ছে। তাই তারা সহজে লাভবান হচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বন্যার পানিতে ভাসমান আগাম সবজির ও ধানের বীজতলা তৈরি করতে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি না হলে বা কোনো বিপর্যয় না ঘটলে মৌসুমে ৪ থেকে ৫ বার চারা উৎপাদন করে বিক্রি করা সম্ভব।

সরাসরি মাটিতে শাকসবজির বীজ বপন না করে কাঁচা কচুরিপানা ৩ ফুট পরিমাণ উঁচু করে পচিয়ে বেড তৈরি করে অঙ্কুরিত বীজ বুনতে হয় এতে স্বাভাবিক বীজতলার মতো খরচ হয় না। দেশের ৪৫ লাখ হেক্টর জল সীমার মধ্যে অর্ধেক জলসীমাতেও যদি ভাসমান সবজির আবাদ করা যায় তাহলে তা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

সমন্বিত প্রচেষ্টায় ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদে কৃষক অধিকতর সফলতা পেলে ভাসমান চাষ পদ্ধতি বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। জীবনের আর্থসামাজিক পরিবর্তনে আসবে আশা জাগানিয়ার বাস্তব গল্প। যাতে জড়িয়ে আছে প্রযুক্তি দিয়ে প্রাকৃতিক চলমান বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে বেঁচে থাকার অন্যরকম স্বাদ, তৃপ্তি ও অবলম্বন।