মানবপাচার প্রতিরোধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কঠোর অবস্থানে আছে। এসব ঘটনায় যারাই জড়িত আছে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। তাদের মধ্যে যারা বেশি ক্ষমতাধর তাদেরও কিছুতেই ছাড় দেওয়া হবে না। তবে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ না থাকায় রাঘব বোয়ালদের ধরা যাচ্ছে না। মানবপাচারের ঘটনায় পুলিশের কেউ জড়িত নয়। এর পরও বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। গতকাল রবিবার দুপুরে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক এসব কথা বলেন।
পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই মানবপাচারের ঘটনা ঘটছে। পাচার প্রতিরোধে পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড, র্যাবসহ সব কটি গোয়েন্দা সংস্থা বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে। এরই মধ্যে পাচারকারীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাদের ধরতে গিয়ে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। এতে বেশ কয়েকজন পাচারকারী মারা গেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচারকারীদের একাধিক সিন্ডিকেট আছে। এগুলোর মধ্যে দু-তিনটি সিন্ডিকেট আমরা শনাক্ত করেছি। কক্সবাজার, সাতক্ষীরা, সিরাজগঞ্জ, চট্টগ্রাম, বাঁশখালী, ঝিনাইদহসহ দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় মানব পাচারকারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। আমাদের কাছে তথ্য আছে, আন্তর্জাতিক চোরাকারবারিদের সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ আছে।’ তিনি আরো বলেন, মানব পাচারকারীদের যেসব গডফাদার সহায়তা করছে তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ না থাকায় রাঘব বোয়ালদের ধরা যাচ্ছে না। তবে তারা যত শক্তিশালীই হোক না কেন প্রমাণাদি হাতে এলেই তাদের পাকড়াও করা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। তারা নিরীহ লোকজনকে নিয়ে ছেলেখেলায় মেতে উঠেছে। পাচারকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স থাকবেই। তিনি বলেন, এসব সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পাচার হওয়াদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মানবপাচার ও পাচারকারীদের কূটকৌশল সম্পর্কে জনগণকে সচেতন হতে হবে। তাহলে এর প্রবণতা অনেকাংশ কমে আসবে।
এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, ‘মানবপাচারের সঙ্গে পুলিশের কেউ জড়িত থাকার তথ্য নেই। পুলিশ কাজ করে রাষ্ট্রের জন্য। নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে। এর পরও পুলিশের কোনো সদস্যের পাচারকারীদের সঙ্গে আঁতাত থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুই দিন আগে আমি কক্সবাজার গিয়ে পরিস্থিতি দেখে এসেছি। ওই সব এলাকার লোকজন কিন্তু পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেনি। এর পরও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের কঠোর নির্দেশনা দিয়ে এসেছি।’
ব্লগারদের নিরাপত্তা দিতে বদ্ধপরিকর পুলিশ : আইজিপি বলেন, উগ্রবাদীদের হাতে ছয়জন ব্লগার নিহত হওয়ার পর কঠোর অবস্থানে আছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। ঘাতকদের ধরতে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান চলছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন কিলারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, সিলেটে খুন হওয়া অনন্ত বিজয় দাশ যে ব্লগে লেখালেখি করতেন, তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে হুমকি ছিল, সে বিষয়ে কখনো তিনি পুলিশকে জানাননি। এমনকি এ বিষয়ে তাঁর পরিবারের সদস্যরাও কিছু জানতেন না। ব্লগার হত্যার কথিত হিটলিস্টও পুলিশের কাছে নেই। লিস্ট হাতে এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে যেসব ব্লগার শঙ্কা প্রকাশ করছেন তাঁদের বিষয়টি পুলিশ গভীরভাবে দেখবে। জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ নিরসনে পুলিশের পক্ষ থেকে ‘ব্যুরো অব কাউন্টার টেররিজম’ ইউনিট গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। এটি গঠিত হলে জঙ্গিবাদ দমনসহ অপরাধীদের তথ্য সংরক্ষণ, আন্তর্জাতিক যোগাযোগে ব্যাপক সুবিধা পাওয়া যাবে।