অপি মানেই ছিল ছোটপর্দায় ভিন্ন ধরনের অভিনয় আর লাস্যময়ী হাসি। নাটক, টেলিছবি, উপস্থাপনা, এমনকি নাচ_ সব ক্ষেত্রেই ছিল তার দ্যুতিছড়ানো প্রতিভা। রিকশায় বসে আইসক্রিম খেতে খেতে বুয়েটে পড়তে যাওয়া অপি করিমের দিন আগের চেয়ে অনেক বদলে গেছে। বুয়েটে যে মেয়েটি একদিন শিক্ষা গ্রহণ করতেন, এখন সেই মেয়েটিই পুরোদস্তুর শিক্ষক। শিক্ষাদান করছেন অন্যদের। আইইউবির [আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ] প্রভাষক তিনি। কিন্তু তিনি আমাদের কাছে পরিচিত চিরচেনা অপি।
কিন্তু এখন আর আগের মতো দিন-রাত শুটিং করতে পারেন না অপি। অভিনয় পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছা নেই তার। শিক্ষকতার পাশাপাশি অভিনয়টাও ধীরেসুস্থে চালিয়ে যেতে চান তিনি। তবে এখন থেকে বেছে বেছে গুটিকয়েক নাটক-টেলিছবিতে কাজ করবেন মাত্র।অভিনয় জীবনের ব্যস্ত সময়ের শূন্যতা অনুভব করেন না? ‘অভিনয়ের কারণে নতুন নতুন কিছু গল্প পড়া হতো।
শিক্ষকতা পেশার ব্যস্ততার কারণে এখন আর তা হয় না। বলা যায়, পড়ার সেই মুহূর্তগুলোকে খুব মিস করি।’ অভিনয় কি ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন? ‘আমার এখনকার যে ব্যস্ততা তার অবসরে যে সময়টুকু পাওয়া যাবে সে সময়টাতে অবশ্যই অভিনয় করব। ব্যক্তিগত জীবনের পাশাপাশি শিক্ষকতা নিয়েও প্রচণ্ড ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। তাই হরহামেশা কাজের সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে যারা আমার ছুটির সময়টুকুর জন্য অপেক্ষা করে থাকেন, তাদের কাজগুলো করা হয়।’
গত রোজার ঈদে শাহরিয়ার শাকিলের পরিচালনায় ‘পিছুটান’ নামের একটি টেলিছবিতে অভিনয় করেছিলেন। টেলিছবিটিতে ব্যাপক সাড়া পাওয়ায় গত কোরবানির ঈদে বেশ কয়েকটি নাটক ও টেলিছবির কাজ করেছেন। কিন্তু সেটা নিয়ে তার গলায় আফসোস, ‘গত রোজার ঈদের টেলিছবিটি নিয়ে দর্শকদের কাছে সাড়া পাওয়ার পর ভেবেছিলাম কোরবানির ঈদে আরও কিছু ভালো কাজ করব। সেই চিন্তা থেকে বেশ কয়েকটি কাজও করেছিলাম। কিন্তু সেগুলোর মধ্যে দুটো কাজ ছাড়া বাকিগুলোতে আমার অভিনয় আমার কাছে কেমন যেন মনে হয়েছে। আরেকটু জুতসই হওয়ার দরকার ছিল। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি কাজ আরও কমিয়ে দেব।’ এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ কী? একে তো সময় দিতে পারি না।
তারপর এখন নাটক ও টেলিছবিতে অভিনয়ের সময় অনেক তাড়াহুড়া করতে হয়। যার কারণে সবাই সবার জায়গা থেকে প্রপার সময়টা দিতে পারে না। ফলে আরও কম কাজ করব।’
সম্প্রতি গাজী টিভিতে [জিটিভি] ‘অপি’স গ্রোয়িং চেয়ার’ নামে একটি টক শোর বদৌলতে নিয়মিতভাবে আবার পর্দায় ফিরেছেন তিনি। এই শোটি নিয়ে অপি বলেন, ‘আমাকে নাটক বা টেলিছবিতে কম দেখা যায়। আমি কেন নিয়মিত পর্দায় নেই। শিক্ষকতা কাজের সূত্রে যেখানেই যাই না কেন সবার একটা প্রশ্ন, তোমাকে দেখতে পাই না কেন? তাই মনে হলো, এ কাজের মাধ্যমে দর্শকতো নিয়মিত আমাকে টিভি পর্দায় দেখতে পাবেন। একসঙ্গে ২৪ পর্বের কাজ করেছি। তাই অত বেশি সময় লাগেনি। আর অনুষ্ঠানের প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল দীর্ঘদিন ধরে লেগে ছিলেন। অনুষ্ঠানটি করে ভালো লেগেছে। শুরুতে অনুষ্ঠানটি নিয়ে খুব একটা সাড়া না পেলেও এখন আমি এ অনুষ্ঠানটি নিয়ে বেশ সাড়া পাচ্ছি। সবাই বেশ প্রশংসাও করছেন।’
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নির্মিত ‘ব্যাচেলর’ ছবিতে দূর্দান্ত অভিনয়ের জন্য পেয়েছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলচ্চিত্রের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেকের সঙ্গেই চলচ্চিত্র নিয়ে কথা হচ্ছে। কিন্তু সময়ের অভাবে করা হচ্ছে না। তবে চলচ্চিত্রে অভিনয় করব।’
মঞ্চ দর্শকদের মাঝেও অপি সমানভাবে আলোচিত ‘রক্তকরবী’ নাটকে নন্দিনী চরিত্রটির জন্য।