ঢাকা ০৭:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ২৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এমপিওভুক্তিতে নিয়ে নানামুখী প্রতারণা মন্ত্রণালয়ের সতর্কতা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:১৮:৪৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮
  • ৩০৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সারা দেশে নতুন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিতে নানামুখী প্রতারণায় নেমেছে একটি চক্র। এমপিওভুক্ত করে দেয়ার নামে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার প্রমাণ পেয়েছে শিক্ষা  মন্ত্রণালয়। বাধ্য হয়ে সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্তিতে আর্থিক লেনদেন না করতে সর্তক করা হয়েছে। গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আবেদনের নামে একশ্রেণির প্রতারক চক্র অর্থ আদায় করছে।

তাদের থেকে সর্তক থাকতে হবে। নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির লক্ষ্যে একটি প্রতারকচক্র সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্টের ভুয়া স্বাক্ষরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠাচ্ছে। সেই চিঠিতে ডাচং-বাংলা ব্যাংকের (মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট) মো. মনোয়ার হোসেন, হিসাব নং- ৭০১৭০১৯৬২২০৭৮ নম্বরে দুই হাজার টাকা জমা দিয়ে ইউজার আইডি ও পার্সওয়াড সংগ্রহের জন্য বলা হচ্ছে। যার সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। নির্দেশনায় বলা হয়, এ ধরনের প্রতারকচক্র থেকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সাবধান থাকার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। এমপিওভুক্তি সংক্রান্ত সব নির্দেশাবলী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (www.Shed.gov.bd) প্রকাশ করা হয়। এই ওয়েবসাইটে যেসব নির্দেশনা দেয়া হবে তা অনুসরণ করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ বলেন, এমপিওভুক্তি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা শুধু প্রক্রিয়াগুলো করে দিচ্ছি। অর্থাৎ এমপিওভুক্তি নিয়ে এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নন-এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আরও কিছু দাবি-দাওয়া করা হয়েছে। এগুলো আমলে নিয়ে আরও কিছু প্রতিষ্ঠান এ তালিকায় যোগ হবে। অন্যদিকে মাদরাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের আবেদন শেষ হয়েছে। সেগুলোর তালিকা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এ অবস্থায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমপিওভুক্তি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে পারবে না।

জানা গেছে, এমপিওভুক্তির আবেদন নেয়ার পর থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমপিসহ প্রভাবশালীদের তদবির বেড়ে গেছে। চাপের কারণে সংশ্লিষ্ট শাখায় দরজা বন্ধ করে কাজ করতে হচ্ছে। আর এর দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব, অতিথিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে করতে অতিষ্ট। সরকার কত সংখ্যক প্রতিষ্ঠান এমপিও পাবে তা চূড়ান্ত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট এমপিকে গোপন ডিও লেটার চাওয়া হবে। সে ডিও লেটারের ভিত্তিতে এমপিওভুক্তি করা হবে। অর্থাৎ এটাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো কর্তৃত্ব নেই। পুরোটাই হবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও এমপিদের চাহিদার ভিত্তিতে। তার পরও একশ্রেণির প্রতারকচত্রু শিক্ষকদের আবেগের জায়গাকে কাজে লাগিয়ে প্রতারণায় নেমেছে। তারা এমপিওভুক্ত করে দেবে এমন নিশ্চিয়তায় প্রতিষ্ঠান ভেদে ৫ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত দাবি করছে। এমন তথ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নজরে আসলে সর্তক করে এ চিঠি দেয়া হয়েছে।

এদিকে তাড়াহুড়া না করে সত্যতার ভিত্তিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার মন্ত্রিসভায় বৈঠকে, যেসব প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে তাদের যোগ্যতা ও প্রয়োজনীয়তা আছে কি-না, তা সরেজমিন যাচাই করে দেখতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আবেদনের ভিত্তিতে কেবল কাগজে-কলমে যাচাই-বাছাই করলে চলবে না; সরজমিন ওই প্রতিষ্ঠানের বাস্তব অবস্থা দেখে, যাচাই-বাছাই করে এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ কাজের জন্য কোনো সময়সীমা বেঁধে দেয়া হবে না।

সময় যত লাগে লাগুক, তবু উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান বাছাই করেই সেগুলো এমপিওভুক্ত করা হবে। এর আগে গত রোববার সংসদে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছিলেন, নতুন করে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার বিষয়টি আগামী মাসের মধ্যে ফয়সালা হবে। মন্ত্রী আরও বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থ ছাড় না করলে এমপিও দেয়া যায় না।

এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় রাজি হয়েছে এবং কিছু টাকা বরাদ্দও দিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন দিয়েছে, আগ্রহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনে আবেদন করেছে। এসব আবেদন বাছাই করা হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জমা পড়া আবেদনগুলোর মধ্যে ‘এমপিও নীতিমালা-২০১৮’-এর সব শর্ত পূরণ করে ‘যোগ্য তালিকা’য় স্থান পেয়েছে সারা দেশের ১ হাজার ৫৩৭ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এগুলো এমপিওভুক্তির যোগ্য। আবেদন জমা পড়েছিল ৬ হাজার ১৪১ প্রতিষ্ঠানের।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

এমপিওভুক্তিতে নিয়ে নানামুখী প্রতারণা মন্ত্রণালয়ের সতর্কতা

আপডেট টাইম : ১০:১৮:৪৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সারা দেশে নতুন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিতে নানামুখী প্রতারণায় নেমেছে একটি চক্র। এমপিওভুক্ত করে দেয়ার নামে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার প্রমাণ পেয়েছে শিক্ষা  মন্ত্রণালয়। বাধ্য হয়ে সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্তিতে আর্থিক লেনদেন না করতে সর্তক করা হয়েছে। গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আবেদনের নামে একশ্রেণির প্রতারক চক্র অর্থ আদায় করছে।

তাদের থেকে সর্তক থাকতে হবে। নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির লক্ষ্যে একটি প্রতারকচক্র সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্টের ভুয়া স্বাক্ষরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠাচ্ছে। সেই চিঠিতে ডাচং-বাংলা ব্যাংকের (মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট) মো. মনোয়ার হোসেন, হিসাব নং- ৭০১৭০১৯৬২২০৭৮ নম্বরে দুই হাজার টাকা জমা দিয়ে ইউজার আইডি ও পার্সওয়াড সংগ্রহের জন্য বলা হচ্ছে। যার সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। নির্দেশনায় বলা হয়, এ ধরনের প্রতারকচক্র থেকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সাবধান থাকার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। এমপিওভুক্তি সংক্রান্ত সব নির্দেশাবলী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (www.Shed.gov.bd) প্রকাশ করা হয়। এই ওয়েবসাইটে যেসব নির্দেশনা দেয়া হবে তা অনুসরণ করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ বলেন, এমপিওভুক্তি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা শুধু প্রক্রিয়াগুলো করে দিচ্ছি। অর্থাৎ এমপিওভুক্তি নিয়ে এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নন-এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আরও কিছু দাবি-দাওয়া করা হয়েছে। এগুলো আমলে নিয়ে আরও কিছু প্রতিষ্ঠান এ তালিকায় যোগ হবে। অন্যদিকে মাদরাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের আবেদন শেষ হয়েছে। সেগুলোর তালিকা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এ অবস্থায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমপিওভুক্তি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে পারবে না।

জানা গেছে, এমপিওভুক্তির আবেদন নেয়ার পর থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমপিসহ প্রভাবশালীদের তদবির বেড়ে গেছে। চাপের কারণে সংশ্লিষ্ট শাখায় দরজা বন্ধ করে কাজ করতে হচ্ছে। আর এর দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব, অতিথিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে করতে অতিষ্ট। সরকার কত সংখ্যক প্রতিষ্ঠান এমপিও পাবে তা চূড়ান্ত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট এমপিকে গোপন ডিও লেটার চাওয়া হবে। সে ডিও লেটারের ভিত্তিতে এমপিওভুক্তি করা হবে। অর্থাৎ এটাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো কর্তৃত্ব নেই। পুরোটাই হবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও এমপিদের চাহিদার ভিত্তিতে। তার পরও একশ্রেণির প্রতারকচত্রু শিক্ষকদের আবেগের জায়গাকে কাজে লাগিয়ে প্রতারণায় নেমেছে। তারা এমপিওভুক্ত করে দেবে এমন নিশ্চিয়তায় প্রতিষ্ঠান ভেদে ৫ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত দাবি করছে। এমন তথ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নজরে আসলে সর্তক করে এ চিঠি দেয়া হয়েছে।

এদিকে তাড়াহুড়া না করে সত্যতার ভিত্তিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার মন্ত্রিসভায় বৈঠকে, যেসব প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে তাদের যোগ্যতা ও প্রয়োজনীয়তা আছে কি-না, তা সরেজমিন যাচাই করে দেখতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আবেদনের ভিত্তিতে কেবল কাগজে-কলমে যাচাই-বাছাই করলে চলবে না; সরজমিন ওই প্রতিষ্ঠানের বাস্তব অবস্থা দেখে, যাচাই-বাছাই করে এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ কাজের জন্য কোনো সময়সীমা বেঁধে দেয়া হবে না।

সময় যত লাগে লাগুক, তবু উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান বাছাই করেই সেগুলো এমপিওভুক্ত করা হবে। এর আগে গত রোববার সংসদে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছিলেন, নতুন করে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার বিষয়টি আগামী মাসের মধ্যে ফয়সালা হবে। মন্ত্রী আরও বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থ ছাড় না করলে এমপিও দেয়া যায় না।

এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় রাজি হয়েছে এবং কিছু টাকা বরাদ্দও দিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন দিয়েছে, আগ্রহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনে আবেদন করেছে। এসব আবেদন বাছাই করা হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জমা পড়া আবেদনগুলোর মধ্যে ‘এমপিও নীতিমালা-২০১৮’-এর সব শর্ত পূরণ করে ‘যোগ্য তালিকা’য় স্থান পেয়েছে সারা দেশের ১ হাজার ৫৩৭ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এগুলো এমপিওভুক্তির যোগ্য। আবেদন জমা পড়েছিল ৬ হাজার ১৪১ প্রতিষ্ঠানের।