ঢাকা ০৬:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রভুর প্রকৃতি সাজে শরতের রূপে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:২৪:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮
  • ৪০০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ এরশাদ হয়েছে, দয়াময় স্রষ্টার সৃষ্টিতে তুমি কোনো খুঁত দেখতে পাবে না। তোমার দৃষ্টি প্রসারিত করে দেখ, কোনো ত্রুটি দেখতে পাও কি? আবার দেখ; আবারও। তোমার দৃষ্টি ব্যর্থ ও ক্লান্ত হয়ে আমারই দিকে ফিরে আসবে (সূরা মুলক ৩-৪)। সারি সারি কাশবনে নদীর পাড়ে রুপালি ঢেউ খেলতে থাকে। আকাশে পেঁজা তুলার মতো সাদা মেঘমালা ওড়ে। ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘগুলো ঘুরঘুর করে ভাসতে থাকে সারা দিন, সারা বেলা।

আবার হঠাৎ কখনও মুখ গোমড়া হয়ে আসে আকাশের। শরৎ আসে মূলত মেঘ-রৌদ্রের লুকোচুরির ভেতর। কখনও ধুমধাম বৃষ্টি, কখনও কাঠফাটা রোদ্দুর।

শরতের আকাশ কখনও ধোয়া-মোছা, পরিচ্ছন্ন হয় না। সে তার নীলচে বুকে ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘের আবরণকে ঢেকে রাখতে চায়। এক কথায়-স্বচ্ছ, নির্মল এক ঋতুর নাম শরৎ। তার চোখে কোনো হিংস্রতা নেই। কোমল। মায়াবি। কোথাও কোনো খুঁত নেই। মহিমাময় প্রভুর সৃষ্টি কতই না সুন্দর। হৃদয়চক্ষু দিয়ে যা দেখা হয় তা আরও বেশি স্ন্দুর ও কান্তিময়।

শরৎ মূলত শুভ্রতার প্রতীক। পবিত্রতার চিহ্ন। বর্ষাকালের লাগাতার বৃষ্টি প্রকৃতিকে ধুয়ে-মুছে সাফ করে দেয়। শরৎ তাই একটু বেশি পূত-পবিত্র অন্যান্য ঋতু থেকে। দেখলে মনে হয় ঝকঝকে ও তকতকে।

সকলবেলা দূর্বাঘাসের ডগায় জমে বিশুদ্ধ শিশির জল। বাতাশ হয়ে যায় দূষণহীন। চিত্তে বাজে আলাদা গন্ধ, ছন্দ ও রং। ব্যাকুল হয়ে যায় মন। স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে রবিঠাকুরের সেই কবিতা, শরৎ এসেছে-

আজি কি তোমার মধুর মুরতি/ হেরিনু শারদ প্রভাতে,

হে মতবঙ্গ, শ্যামল অঙ্গ/ ঝলিছে অমল শোভাতে।

পারে না বহিতে নদী জলধার/ মাঠে মাঠে ধান ধরে না কো আর/ ডাকিছে দোয়েল, গাহিছে কোয়েল/তোমার কানন শোভাতে।

মাথার ওপর সুনীল আকাশ, রং-বেরঙের পাখির কলতান, নিরবধি বয়ে চলা খাল-বিল, নদ-নদী সবই বান্দার প্রতি আল্লাহর বিশেষ দান ও নেয়ামত। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ এরশাদ করেছেন, তারা কি নভোমণ্ডলের প্রতি দেখে না, কীভাবে তিনি তা বানিয়েছেন, সুশোভিত করেছেন? আর নেই তাতে কোনো স্তম্ভ (সূরা কাহাফ ৬)।

শরতের আকাশ ফকফকে জোছনায় ভরে যায়। শুভ্র মেঘরাশি চাঁদের জোছনায় কেমন দুধেলা হয়ে ওঠে। রাতের রুপালি আলোয় শরৎ নিয়ে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে পৃথিবী। আনন্দে দোল খেয়ে যায় মন। যুগযুগ ধরে হাজারও কবি মহাকবি, শিল্পী-সাহিত্যিক শরৎ নিয়ে রচনা করেছে হাজারও পদাবলি।

শরতের এ স্নিগ্ধ শোভাকে মোহময় করে এ মৌসুমের বিচিত্র ফুলেরা। নদীর পাড়ে কিংবা জলার ধারে ফোটে রকমারি কাশ ফুল। বাড়ির আঙিনাজুড়ে ফোটে শিউলি বা শেফালি, খাল-বিল-পুকুর-ডোবায় ভাসতে থাকে অসংখ্য জলজ ফুল।

প্রভাতের শিশিরভেজা শিউলি, ঝিরিঝিরি বাতাসে দোল খাওয়া ধবধবে কাশবন, পদ্ম-শাপলা-শালুকে আচ্ছন্ন জলাভূমি শরতের চিরকালীন রূপ। গাছে গাছে শিউলি ফোটার দিন। নানারকমের ফুল দলের মধুগন্ধ বিলানোর দিন।

লেখক : শিক্ষক

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

প্রভুর প্রকৃতি সাজে শরতের রূপে

আপডেট টাইম : ০৬:২৪:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ এরশাদ হয়েছে, দয়াময় স্রষ্টার সৃষ্টিতে তুমি কোনো খুঁত দেখতে পাবে না। তোমার দৃষ্টি প্রসারিত করে দেখ, কোনো ত্রুটি দেখতে পাও কি? আবার দেখ; আবারও। তোমার দৃষ্টি ব্যর্থ ও ক্লান্ত হয়ে আমারই দিকে ফিরে আসবে (সূরা মুলক ৩-৪)। সারি সারি কাশবনে নদীর পাড়ে রুপালি ঢেউ খেলতে থাকে। আকাশে পেঁজা তুলার মতো সাদা মেঘমালা ওড়ে। ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘগুলো ঘুরঘুর করে ভাসতে থাকে সারা দিন, সারা বেলা।

আবার হঠাৎ কখনও মুখ গোমড়া হয়ে আসে আকাশের। শরৎ আসে মূলত মেঘ-রৌদ্রের লুকোচুরির ভেতর। কখনও ধুমধাম বৃষ্টি, কখনও কাঠফাটা রোদ্দুর।

শরতের আকাশ কখনও ধোয়া-মোছা, পরিচ্ছন্ন হয় না। সে তার নীলচে বুকে ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘের আবরণকে ঢেকে রাখতে চায়। এক কথায়-স্বচ্ছ, নির্মল এক ঋতুর নাম শরৎ। তার চোখে কোনো হিংস্রতা নেই। কোমল। মায়াবি। কোথাও কোনো খুঁত নেই। মহিমাময় প্রভুর সৃষ্টি কতই না সুন্দর। হৃদয়চক্ষু দিয়ে যা দেখা হয় তা আরও বেশি স্ন্দুর ও কান্তিময়।

শরৎ মূলত শুভ্রতার প্রতীক। পবিত্রতার চিহ্ন। বর্ষাকালের লাগাতার বৃষ্টি প্রকৃতিকে ধুয়ে-মুছে সাফ করে দেয়। শরৎ তাই একটু বেশি পূত-পবিত্র অন্যান্য ঋতু থেকে। দেখলে মনে হয় ঝকঝকে ও তকতকে।

সকলবেলা দূর্বাঘাসের ডগায় জমে বিশুদ্ধ শিশির জল। বাতাশ হয়ে যায় দূষণহীন। চিত্তে বাজে আলাদা গন্ধ, ছন্দ ও রং। ব্যাকুল হয়ে যায় মন। স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে রবিঠাকুরের সেই কবিতা, শরৎ এসেছে-

আজি কি তোমার মধুর মুরতি/ হেরিনু শারদ প্রভাতে,

হে মতবঙ্গ, শ্যামল অঙ্গ/ ঝলিছে অমল শোভাতে।

পারে না বহিতে নদী জলধার/ মাঠে মাঠে ধান ধরে না কো আর/ ডাকিছে দোয়েল, গাহিছে কোয়েল/তোমার কানন শোভাতে।

মাথার ওপর সুনীল আকাশ, রং-বেরঙের পাখির কলতান, নিরবধি বয়ে চলা খাল-বিল, নদ-নদী সবই বান্দার প্রতি আল্লাহর বিশেষ দান ও নেয়ামত। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ এরশাদ করেছেন, তারা কি নভোমণ্ডলের প্রতি দেখে না, কীভাবে তিনি তা বানিয়েছেন, সুশোভিত করেছেন? আর নেই তাতে কোনো স্তম্ভ (সূরা কাহাফ ৬)।

শরতের আকাশ ফকফকে জোছনায় ভরে যায়। শুভ্র মেঘরাশি চাঁদের জোছনায় কেমন দুধেলা হয়ে ওঠে। রাতের রুপালি আলোয় শরৎ নিয়ে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে পৃথিবী। আনন্দে দোল খেয়ে যায় মন। যুগযুগ ধরে হাজারও কবি মহাকবি, শিল্পী-সাহিত্যিক শরৎ নিয়ে রচনা করেছে হাজারও পদাবলি।

শরতের এ স্নিগ্ধ শোভাকে মোহময় করে এ মৌসুমের বিচিত্র ফুলেরা। নদীর পাড়ে কিংবা জলার ধারে ফোটে রকমারি কাশ ফুল। বাড়ির আঙিনাজুড়ে ফোটে শিউলি বা শেফালি, খাল-বিল-পুকুর-ডোবায় ভাসতে থাকে অসংখ্য জলজ ফুল।

প্রভাতের শিশিরভেজা শিউলি, ঝিরিঝিরি বাতাসে দোল খাওয়া ধবধবে কাশবন, পদ্ম-শাপলা-শালুকে আচ্ছন্ন জলাভূমি শরতের চিরকালীন রূপ। গাছে গাছে শিউলি ফোটার দিন। নানারকমের ফুল দলের মধুগন্ধ বিলানোর দিন।

লেখক : শিক্ষক