হাওর বার্তা ডেস্কঃ সারা দেশে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নতুন করে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে ১৩৭৮জন শিক্ষক। প্রথমবারের মতো পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) অধীনে এ নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এর ফলে সারা দেশের ৩৪৭ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিনের শিক্ষক সংকট আর থাকছে না। শিক্ষকদের পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদার হবে। চলতি সপ্তাহ সরাসরি ১৩৭৮ জন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে পিএসসি।
এ ছাড়া সহকারী প্রধান শিক্ষক থেকে সহকারী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পদে ৪২৩ জনকে পদোন্নতির তালিকায় প্রায় চূড়ান্ত করেছে কমিশন। মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) প্রফেসর আবদুল মান্নান বলেন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অবসরের পদ হিসাব করে সরাসরি নিয়োগ দিতে মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পাঠিনোর প্রেক্ষিতে ১৩৭৮ জনের চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে। দুই একদিনের মধ্যে পিএসসি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে।
তিনি আরো বলেন, পিএসসি বিএসএস চূড়ান্ত পরীক্ষা উত্তীর্ণদের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করলেও আমাদের চাহিদা পূরণ হয় না। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকও পাওয়া যায় না। নিয়োগ পাওয়া অনেকে পরবর্তীতে অন্য চাকিরতে চলে যায়। শিক্ষক সংকট থেকেই যায়। সংকট কাটিয়ে উঠতে সহকারী শিক্ষক পদে সরাসরি নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে।
মাউশির সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, সদ্য জাতীয়করণসহ সারা দেশে ৩৪৭টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব স্কুলে ৩৪১ জন প্রধান শিক্ষকের পদের বিপরিতে ১০৯টি পদ শূন্য রয়েছে। সহকারী প্রধান শিক্ষক ৪৭১টি পদের মধ্যে ৪৬৩টি পদ শূন্য। ১০ হাজার ৩৪৪টি সহকারী শিক্ষক পদের মধ্যে ১৫৫৬টি পদ শূন্য। শূন্য পদে ৩৬তম বিসিএস চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে ৩৪১ জনকে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের সুপারিশ করছে পিএসসি। বাকি পদে সরাসরি নিয়োগ দিবে পিএসসি। এ ছাড়া ২০১২ সাল থেকে কারিকুলাম ও সিলেবাস পরিবর্তন করা হয়েছে।
তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি), শারীরিক শিক্ষা, কর্মমুখী শিক্ষা, চারু ও কারুকলা-নতুন এ চারটি বিষয় চালু করা হয়েছে। নতুন বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি। ফলে এক বিষয়ের শিক্ষককে পাঠদান করতে হচ্ছে অন্য বিষয়ে। এ ছাড়া গত ছয় বছরে অনেক শিক্ষক মারা গেছেন অথবা অবসরে যাওয়ায় পদশূন্য হয়েছে। শিক্ষক সংকটে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনার মান কমে যাচ্ছে। ক্লাসে ঠিকমত পাঠদান না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা কোচিংমুখী হচ্ছে। অভিভাবকদের পছন্দের শীর্ষে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থাকলেও তারা সন্তানকে বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করেন। এর নেপথ্যে রয়েছে শিক্ষক সংকট।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী ২০১২ সালের ১৫ই মে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড মর্যাদা ঘোষণা করেন। দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড মর্যাদায় উন্নীত হওয়ায় শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা মাউশি থেকে পিএসসিতে চলে যায়। পিএসসিকে শিক্ষক নিয়োগ দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু পিএসসি জানিয়েছে, নিয়োগবিধি গেজেট আকারে জারি ও প্রকাশ না হলে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ সম্ভব নয়।
ফলে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ আটকে যায়। শিক্ষক সংকট কাটিয়ে উঠতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিকল্প হিসেবে বিসিএস চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের প্রস্তাব করে। ৩৫তম বিসিএস থেকে ৭০৭ জন ও ৩৬তম বিসিএস থেকে ৩৪১ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করেছে পিএসসি। মেডিকেল ও পুলিশ ভেরিফিকেশনের কারণে আটকে আছে নিয়োগ প্রক্রিয়া।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে সরাসরি নিয়োগ দিতে গত ১১ই ফেব্রুয়ারি শিক্ষকদের চাকরি বিধিমালার গেজেট জারি করা হয়েছে। অপরদিকে মামলা জটিলতায় ২০১৪ সালের ৬ই জুন থেকে সরকারি হাইস্কুলের শিক্ষকদের পদোন্নতি বন্ধ রয়েছে।