হাওর বার্তা ডেস্কঃ আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার মাত্র পৌনে দুই মাস বাকী। নির্বাচনী আমেজ তৈরি ও ভোটের মাঠ দখলে রাখতে দলীয় সম্ভাব্য সব প্রার্থীকে নির্বাচনী তফসিল পর্যন্ত তাই মাঠে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। তবে দল মনোনীত প্রার্থীকে কিছুটা আগে খুব গোপনে নির্বাচনের ‘সবুজ সংকেত’ দেবে ক্ষমতাসীন দলটি। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্রের সঙ্গে আলাপকালে দলীয় এই কৌশলের কথা জানা গেছে।
মনোনয়নের প্রত্যাশায় ইতোমধ্যে যত প্রার্থী বিভিন্নভাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বারস্থ হয়েছেন, সবাইকে তিনি দলের হয়ে স্ব স্ব এলাকায় কাজ করতে বলেছেন।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র জানিয়েছে, তফসিলের আগে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে নির্বাচনী পরিবেশকে ‘হাল্কা’ করতে চায়না আওয়ামী লীগ। কেননা এতে নির্বাচনের আমেজ নষ্ট হওয়ার শঙ্কা আছে। জাতীয় নির্বাচনের চূড়ান্ত মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মতো তৃণমূলের মতামত নেওয়া হবে। শেষ পর্যন্ত সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করে মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে।
তারা আরো বলেন, এবার আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত মনোনয়ন যিনি পাবেন, তার নাম শেষ সময়ে প্রকাশ্যে আসবে। কারণ চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম আগে থেকে জানা গেলে নির্বাচনী আসন গুলোয় দলীয় বিশৃঙ্খলা বেড়ে যেতে পারে। তাই এই কৌশল নেওয়া হয়েছে। তবে যাকে কেন্দ্র থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়ার কথা ভাবা হবে, তাকে গোপনে সবুজ সংকেত দেওয়া হবে। তা গোপন রাখতে বলা হবে।
এ বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিককে বলেন, ‘আমরা সেপ্টেম্বর মাস থেকে অনুষ্ঠানিক ভাবে, যাদের জাতীয় নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আমরা সম্পূর্ণ আশাবাদী এরকম প্রার্থীতা যাদের আছে তাদের ডেকে ডেকে আমাদের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিনি তাদের বলে দেবেন তুমি প্রস্তুত হও, এরকম। একজন পলিটিশিয়ানের ইমেজ থাকতে হবে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, গোপনে সবুজ দেওয়ার এটিও একটি কারণ হল নির্বাচনের আগে প্রার্থীর কোনও দুর্বলতা থেকে থাকলে, তা যেন তিনি কাটিয়ে তুলতে পারেন।
দলের নেতারা জানান, ভোটের লড়াইয়ে বিএনপি থাকলে তফসিলের পরপর প্রক্রিয়া অনুসরণ করে চূড়ান্ত প্রার্থী জানাবে ক্ষমতাসীনরা। শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে না থাকলে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় অনেক প্রার্থীর কপাল খুলে যেতে পারে। নির্বাচনী আমেজ বজায় রাখা এবং ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে অঘোষিতভাবে প্রার্থিতা ‘উন্মুক্ত’ হতে পারে বিভিন্ন আসনে।
২০১৪ সালের নির্বাচনের মতো বিএনপি যদি এবারও নির্বাচন বর্জন করে তাহলে জাতীয় পার্টিকে নির্দিষ্ট সংখ্যক আসনে ছাড় দিয়ে অন্তত অর্ধশত আসন দলের একাধিক প্রার্থীর জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে ক্ষমতাসীনদের। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য দলীয়ভাবে ১৫১ আসন চূড়ান্ত করবে আওয়ামী লীগ। জোট-মহাজোটের দলগুলোর জন্য ১০০ আসনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ছাড় দিবে আওয়ামী লীগ। আর যেসব আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী আছে এমন প্রায় অর্ধশত আসন দলীয় প্রার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে পারে।
তবে বিএনপি নির্বাচনে এলে মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় বড় পরিবর্তন আসবে। আওয়ামী লীগের মনোনয়নে তখন শুদ্ধি প্রক্রিয়ায় বের হয়ে আসা ‘উইনেবল ক্যান্ডিডেট’র হাতে নৌকা প্রতীক দেওয়া হবে। অন্তত ৬০-৭০টি আসনে নতুন মুখ আনবে আওয়ামী লীগ। নারী প্রার্থীদেরও অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতাকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা মনোনয়ন দেব। আমলনামা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আছে, সব জরিপ দেখেই আমরা বিবেচনা করব, কাকে মনোনয়ন দেওয়া যায়। ধরেন একজায়গায় চারজন প্রার্থী, অধিকতর গ্রহণযোগ্য যে তাকে আমার মনোনয়ন দেব।