হাওর বার্তা ডেস্কঃ একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে জেলা কমিটিতে হাত দিচ্ছে না বিএনপি। পুরনো কোন্দল নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার আশঙ্কায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিএনপির এখন মনোযোগ হচ্ছে রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার কারামুক্তি আর সরকারের কাছ থেকে অবাধ ও সুুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি আদায় করা। দলীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
ঢাকা মহানগর বিএনপিসহ অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের জেলা পর্যায়ের কমিটি ঘোষণার পর বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে দলটি। বিশেষ করে উত্তর ও দক্ষিণ শাখায় ঢাকা মহানগরের থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটি গঠনের পর দলের ভিতরে বাইরে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও এক যুগের বেশি সময় পর মহানগরে মাঠ পর্যায়ের কমিটি দিতে পেরেছে বিএনপি। দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপির সাংগঠনিক জেলা ৮১টি।
এর মধ্যে ২৭টিতে পূর্ণাঙ্গ, ২২টিতে আংশিক এবং ২টিতে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার আগ মুহূর্তে ময়মনসিংহ জেলা দক্ষিণ, ময়মনসিংহ জেলা উত্তর ও ময়মনসিংহ মহানগর, গাজীপুর জেলা ও গাজীপুর মহানগর, কুমিল্লা মহানগর ও কুমিল্লা দক্ষিণ, ফেনী জেলা, মাদারীপুর জেলা, ফরিদপুর জেলা, চুয়াডাঙ্গা জেলা, কুষ্টিয়া জেলা কমিটি প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু তিনি জেলে যাওয়ার কারণে কমিটি ঘোষণা করা হয়নি এসব জেলায়।
জানা যায়, কারাবন্দী বেগম জিয়া ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশেই কমিটি গঠনের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। কমিটি পুনর্গঠন নিয়ে কাজ করছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান। দলের হাইকমান্ডের নির্দেশ ছাড়া কমিটির কার্যক্রম বন্ধ রাখতে তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে অঙ্গ সংগঠনের জেলা কমিটি দ্রুত শেষ করতে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়। এ কারণেই জাতীয়তাবাদী যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের জেলা পর্যায়ে সাংগঠনিক কমিটি গঠনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, ‘এ পর্যন্ত ৫১টি জেলা কমিটি দেওয়া হয়েছে। বেশ কয়েকটি জেলা কমিটি প্রস্তুত করা হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে সবুজ সংকেত পেলেই এসব কমিটি ঘোষণা করা হবে।’
বিএনপির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, নতুন করে জেলা পর্যায়ের কমিটি দিলে নির্বাচনের আগে তৃণমূলে কোন্দল বেড়ে যেতে পারে। এতে ভেস্তে যেতে পারে খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন। সুযোগ নেবে সরকার। সম্প্রতি ঢাকা মহানগর ও জেলা পর্যায়ের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠন নিয়েই দলকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাছাড়া যেসব জেলায় কমিটি হয়েছে তাতেও তেমন কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। আন্দোলন সংগ্রামে একটি অংশ মাঠে থাকলেও আরেক অংশ থাকছে নিষ্ক্রিয়। সবাইকে নিয়েই আন্দোলন করতে চায় বিএনপি।
জানা যায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় সারা দেশে শতাধিক নেতার বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সংস্কারপন্থি সব নেতাকেও দলে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকজন নেতা সবুজ সংকেত পেয়ে দলের পক্ষে মাঠে কাজ করছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, বিএনপি এখন তিনটি লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছে। এর মধ্যে প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়ার কারামুক্তি। দ্বিতীয় লক্ষ্য হচ্ছে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে বৃহত্তর ঐক্য। আর তৃতীয় লক্ষ্য, সবার অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে সরকারকে বাধ্য করা।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু কে বলেন, ‘বিএনপি এখন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী। এখন আমরা বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তি আন্দোলনে রয়েছি। এরপর বেগম জিয়ার নেতৃত্বে আমরা আগামী নির্বাচনে অংশ নেব। সেই নির্বাচনে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।’
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন