কোরআন কী? লেখা, উচ্চারণ নাকি অর্থ? লেখা, উচ্চারণ ও অর্থ এ তিনের সম্মিলিত নাম কোরআন।
কোরআন পাকের হক (অধিকার বা কর্তব্য) চারটি হলো- ১. ঈমান বা বিশ্বাস করা। কোরআন আল্লাহ তায়ালার সর্বশেষ কিতাব, যা হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, এতে অনুসরণকারীদের জন্য হেদায়েত তথা দুনিয়ার শান্তি, পরকালের মুক্তি নিহিত রয়েছে। ২. সহিহভাবে তেলাওয়াত করা। ৩. সঠিকভাবে অর্থ বোঝা। ৪. পরিপূর্ণরূপে আমল করা।
তিনটি বস্তু দেখলে সওয়াব হয়- ১. কোরআন শরিফ। ২. কাবা শরিফ। ৩. মা-বাবা।
কালামে পাক তেলাওয়াতের বিশেষ তিনটি ফায়দা হলো- ১. মনের ময়লা দূর ও কলব পরিষ্কার হয়। ২. আল্লাহ তায়ালার মহব্বত বৃদ্ধি পায় ও নৈকট্য লাভ হয়। ৩. প্রতিটি হরফে কমপক্ষে ১০টি করে নেকি বা সওয়াব হয়। (অর্থ না বোঝে পড়লেও নেকি বা সওয়াব হয়, অর্থ বোঝে পড়লে নেকি বা সওয়াবের পরিমাণ অনেক গুণ বৃদ্ধি হয়)।
কোরআন তেলাওয়াতে ফরজ তিনটি- ১. হরফগুলো সঠিকভাবে উচ্চারণ করা। ২. হরকত তাড়াতাড়ি পড়া। ৩. মাদ্দ হলে টেনে পড়া। কোরআন শরিফ পড়তে হলে তিনটি কাজ করতে হয়- ১. পবিত্র হওয়া (ফরজ)। ২. আউজু বিল্লাহ পড়া (ওয়াজিব)। ৩. বিসমিল্লাহ পড়া (সুন্নত)।
পবিত্র কোরআনের বিশেষ আদব- ১. শ্রবণকারী মনে এ খেয়াল রাখবে যে, মহান আল্লাহর পবিত্র কালাম পাঠ করা হচ্ছে, তাই অত্যন্ত ভক্তি ও শ্রদ্ধা সহকারে শুনতে হবে। ২. তেলাওয়াতকারী মনে এ খেয়াল রাখবে যে, মহান আল্লাহ বলছেন, ‘পড় আমার কালাম, দেখি কেমন সুন্দর পড়তে পারো,’ তাই মহান আল্লাহকে শোনানোর জন্য পড়ছো।
তিন ধরনের লোকের ভুল মাফ হয়- ১. যারা সহিহ করার আপ্রাণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন, ২. যারা সহিহ করার চেষ্টায় রত, ৩. যাদের সহিহ শিক্ষার সুযোগ নেই।
হাদিয়ে তেলাওয়াত বা তেলাওয়াত সংক্রান্ত চিহ্ন
গোল চিহ্ন : এটি সর্বসম্মত আয়াত চিহ্ন, এ চিহ্নে ওয়াক্ফ করা সুন্নত, একে ওয়াক্ফে তাম বলে।
আরবি পাঁচ চিহ্ন : এ চিহ্নের সঙ্গে কখনও আয়াত সংখ্যা থাকে এবং কখনও থাকে না। যদি আয়াত সংখ্যা থাকে এর অর্থ হলো আমাদের [আছিম (রহ.) এর] কেরাত- [ও হাফছ (রহ.) এর বর্ণনা] হিসেবে এটি আয়াত, কোনো কোনো কারির মতে এটি আয়াত নয়। আর আয়াত সংখ্যা না থাকলে তার অর্থ হলো আমাদের কেরাতে এটি আয়াত নয়; কিন্তু কোনো কোনো কারির মতে এটি আয়াত। এ চিহ্নেও ওয়াক্ফ করা সুন্নত। যেহেতু রাসুলুল্লাহ (সা.) আয়াতে আয়াতে ওয়াক্ফ করতেন তাই এতদুভয়ের আরেক নাম ওয়াক্ফুন নাবী (সা.)। যেমন-
সাক্তাহ/ওয়াক্ফাহ/কিফ : এ চিহ্নগুলোতে দম (নিশ্বাস) না ছেড়ে অল্প সময় আওয়াজ বন্ধ রেখে ফের পড়া শুরু করতে হয়।
সাক্তাতে সামান্য সময়, ওয়াক্ফাহতে একটু বেশি সময় এবং কিফ এ আরও বেশি সময়।
ওয়াক্ফুন নবী : রাসুলুল্লাহ (সা.) এখানে ওয়াক্ফ করেছেন বলে বর্ণিত আছে।
ওয়াক্ফে গোফরান : এখানে ওয়াক্ফ করলে গোনাহ মাফ হওয়ার কথা বর্ণিত আছে।
ওয়াক্ফে জিবরাঈল/ ওয়াক্ফে নুজুল/ ওয়াক্ফে মানজিল : জিবরাঈল (আ.) এখানে ওয়াক্ফ করেছেন বলে বর্ণিত আছে।
রুকু : সাহাবি (রা.) ও তাবেয়ি (রহ.) এর অনেকেই তারাবি নামাজের একেক রাকাতে এ পরিমাণ পড়তেন। যেহেতু তারাবি নামাজে ২৭ দিনে কোরআন খতম করা হয় এবং প্রতিদিন ২০ রাকাত তারাবি পড়া হয়, সেহেতু কোরআনের রুকু সংখ্যা (২৭ী২০)=৫৪০ হয়েছে।
সাজদা/সিজদা : এ চিহ্নের স্থলে সিজদা করা ওয়াজিব। (মূলত কোরআনে যেসব স্থানে ‘সিজদা করো,’ ‘মোমিনরা সিজদা করে,’ ‘কাফেররা সিজদা করে না’ এ ধরনের উক্তি রয়েছে সেসব স্থানে এ চিহ্ন রয়েছে। হানাফি মাজহাব অনুসারে পবিত্র কোরআনে এরূপ ১৪টি সিজদা রয়েছে।
সূরা : এটি কোরআন কারিমের বিভিন্ন অধ্যায়ের মতো। (কোরআন কারিমে মোট ১১৪টি সূরা আছে। বৃহত্তম হলো সূরা বাকারা এবং ক্ষুদ্রতম হলো সূরা কাউসার।)
মানজিল : বিশিষ্ট সাহাবি (রা.) এর মধ্যে অনেকেই নিয়মিত সাত দিনে কোরআন খতম করতেন, প্রতিদিন যে পরিমাণ পড়তেন তাই মানজিল। সুতরাং কোরআনে সাত মানজিল হয়েছে। বিভিন্ন সাহাবির মানজিলের বিভিন্নতা রয়েছে। (এর সঙ্কেত প্রতি পৃষ্ঠার নিচে লেখা থাকে।)