হাওর বার্তা ডেস্কঃ সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের নাম দিয়ে গতবছরের আগস্টে রাখাইন রাজ্যে মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এরপর প্রাণ বাঁচাতে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এ ঘটনায় প্রায় ২০ মাস ধরে প্রত্যক্ষদর্শী রোহিঙ্গা, আরসার সদস্য, বাংলাদেশের সামরিক কর্মকর্তা, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে করা প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংগঠন ফোর্টিফাই রাইটস বৃহস্পতিবার। ‘They Gave Them Long Swords’ (ওরা তাদের লম্বা তলোয়ার দিয়েছিল) এই শিরোনামে ১৬২ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, একদল সশস্ত্র রোহিঙ্গারা সেনাবাহিনীর ঘাঁটি আক্রমণের কয়েক মাস আগে থেকেই মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আক্রমণের জন্য ‘বিস্তৃত ও নিয়মতান্ত্রিক প্রস্তুতি’ নেয়।
গতবছরের ২৫ আগস্টের ওই রক্তক্ষয়ী হামলাকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী নিধন অভিযানের উপলক্ষ হিসেবে নেয়। আর্মির হত্যাযজ্ঞের মুখে কয়েক দফায় বিশ্বের ‘সবচেয়ে নির্যাতিত’ জনগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে।
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ কিভাবে রাখাইন রাজ্যের বেসামরিক রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা করে তা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সেখানকার বেসামরিক বৌদ্ধদের হামলা শুরুর পর বাংলাদেশে এসে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের ঘটনাকে রুয়ান্ডার গণহত্যার পর সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকট বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।
ফোর্টিফাই রাইটসের প্রধান ম্যাথু স্মিথ বলেন, ‘মিয়ানমারের সেনাবাহিনী চায় পৃথিবীর মানুষ ভাবুক যে, তারা রাখাইন রাজ্যে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে লড়াই করছে এবং এটা ছিল আরসা’র আক্রমণের জবাব।’
মিয়ানমারের মুসলিম রোহিঙ্গাদের একটি সংগঠনের নাম আরকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসা।
তিনি বলেন, ‘২৫ আগস্ট আরসার হামলার কয়েক সপ্তাহ এমনকি কয়েক মাস আগে থেকেই সেনাবাহিনী কিভাবে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে রোহিঙ্গাদের উৎখাতের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তার দলিল আমরা সংগ্রহ করেছি।’
জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সংঘটিত রোহিঙ্গা নিধনকে ‘জাতিগত নিধনের একটি আদর্শ উদাহরণ’ হিসেবে অভিহিত করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ গতবছরের আগস্টের আগেই রোহিঙ্গাদের নিধনের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। আত্মরক্ষার জন্য বা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে এমন যেকোনো জিনিস বেসামরিক রোহিঙ্গাদের ঘর থেকে বাজেয়াপ্ত করা শুরু করে মিয়ানমার।
কর্তৃপক্ষ রাখাইনে রোহিঙ্গা নয় এমন স্থানীয় লোকদের কর্তৃপক্ষ ‘আঞ্চলিক পুলিশ’ বাহিনী হিসেবে প্রশিক্ষণ দেয় বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
মিয়ানমার সেনাদের হত্যাযজ্ঞ থেকে পালিয়ে আসা মোহাম্মদ রফিক (২৫) নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, রাখাইনের লোকদের লম্বা তলোয়ার দিয়েছিল সৈন্যরা। এমনকি বাচ্চা ছেলেদের হাতেও এমন লম্বা তলোয়ার দেয়া হয়।
স্মিথ বলেন, ‘একটা জিনিস আমরা বিশেষ করে রোহিঙ্গারা, শিখেছি তা হলো অক্টোবর, ২০১৬-এর সহিংসতার পর আন্তর্জাতিক মহল কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় রোহিঙ্গা নিধনের পথ তৈরি হয়।’
অস্ত্র কেনার ব্যাপারে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক অবরোধ আরোপের জন্য জাতিসংঘকে আহ্বান জানানো হয় প্রতিবেদনে। অবশ্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এই প্রতিবেদনের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি।