ঢাকা ১১:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কিশোরগঞ্জে দীর্ঘদিন ধরে স্কুলের শিক্ষার্থীদের গাছতলায় বসে পাঠদান

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:১৪:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুলাই ২০১৮
  • ৩৩৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হয়ে গেছে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের সাহেবেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন। ফলে দীর্ঘদিন ধরে স্কুলের শিক্ষার্থীদের গাছতলায় বসে পাঠদান দেয়া হচ্ছে। রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। এভাবেই কোনো রকমে চলছে বিদ্যালয়টির কার্যক্রম। নেই প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ। এতে পাঠদান কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দুই শতাধিক ছাত্রছাত্রী নিয়ে বিপাকে পড়েছে এই স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবকরা।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৩৭ সালে উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলে সাহেবেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। নদী ভাঙনে ২০১০ সালে বিদ্যালয়ের প্রথম ভবনটি ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হয়ে যায়। এরপর ২০১৭ সালের ১৮ জুলাই বিদ্যালয় ও আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত ভবনটিও নদে ধসে পড়ে। এ নিয়ে দুইবার বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে গেল।

বিদ্যালয়ে বর্তমান শিক্ষার্থী ২১৫ জন। ভাঙনের কবলে পড়ায় গত এক বছরে প্রায় ১০০ শিক্ষার্থী কমেছে। বিদ্যালয়টিতে পাঁচ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও শূন্য রয়েছে প্রধান শিক্ষকের পদ।

শিক্ষকেরা জানালেন, প্রচন্ড গরম, ঝড়বৃষ্টি ও রোদ উপেক্ষা করে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে নিয়মিত পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হচ্ছে। এই পরিবেশে উপকরণও ব্যবহার করা যায় না। এভাবে পাঠদানে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট হয়। এ অবস্থায় শিক্ষার প্রতি কোমলমতি শিশুদের নেতিবাচক ধারণা জন্ম নিচ্ছে।

পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, বসার জায়গা নেই। সামনে সমাপনী পরীক্ষা। এই পরিস্থিতিতে খুব সমস্যা হচ্ছে। পড়াশোনার খুব ক্ষতি হচ্ছে।

হোসেনপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে ধসে যাওয়ার পর সাময়িকভাবে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য তিন লাখ টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে। নতুন ভবনের জন্য সাহেবেরচর গ্রামে ৩৩ শতক জমি অধিগ্রহণ করা হলেও এখনও ভবন নির্মাণে বরাদ্দ আসেনি।

এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের কষ্টের কথা স্বীকার করে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা ও হোসেনপুর উপজেলার (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাসউদ মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠকে জানান, এভাবে পাঠদান করানোর কারণে মানসম্মত শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে প্রয়োজনীয় নতুন ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিদ্যালয়সহ এক হাজার ফিট প্রশস্ত আড়াই কিলোমিটার জায়গা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে ধসে যাওয়ার পর সাময়িকভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য টিনের চালা তৈরি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সার্বিক খোঁজ খবর নেয়ার জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এছাড়াও ইতোমধ্যে ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৩৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, আরও প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। এসব বিষয় তদারকি করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গকে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

কিশোরগঞ্জে দীর্ঘদিন ধরে স্কুলের শিক্ষার্থীদের গাছতলায় বসে পাঠদান

আপডেট টাইম : ১০:১৪:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুলাই ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হয়ে গেছে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের সাহেবেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন। ফলে দীর্ঘদিন ধরে স্কুলের শিক্ষার্থীদের গাছতলায় বসে পাঠদান দেয়া হচ্ছে। রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। এভাবেই কোনো রকমে চলছে বিদ্যালয়টির কার্যক্রম। নেই প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ। এতে পাঠদান কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দুই শতাধিক ছাত্রছাত্রী নিয়ে বিপাকে পড়েছে এই স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবকরা।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৩৭ সালে উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলে সাহেবেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। নদী ভাঙনে ২০১০ সালে বিদ্যালয়ের প্রথম ভবনটি ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হয়ে যায়। এরপর ২০১৭ সালের ১৮ জুলাই বিদ্যালয় ও আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত ভবনটিও নদে ধসে পড়ে। এ নিয়ে দুইবার বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে গেল।

বিদ্যালয়ে বর্তমান শিক্ষার্থী ২১৫ জন। ভাঙনের কবলে পড়ায় গত এক বছরে প্রায় ১০০ শিক্ষার্থী কমেছে। বিদ্যালয়টিতে পাঁচ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও শূন্য রয়েছে প্রধান শিক্ষকের পদ।

শিক্ষকেরা জানালেন, প্রচন্ড গরম, ঝড়বৃষ্টি ও রোদ উপেক্ষা করে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে নিয়মিত পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হচ্ছে। এই পরিবেশে উপকরণও ব্যবহার করা যায় না। এভাবে পাঠদানে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট হয়। এ অবস্থায় শিক্ষার প্রতি কোমলমতি শিশুদের নেতিবাচক ধারণা জন্ম নিচ্ছে।

পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, বসার জায়গা নেই। সামনে সমাপনী পরীক্ষা। এই পরিস্থিতিতে খুব সমস্যা হচ্ছে। পড়াশোনার খুব ক্ষতি হচ্ছে।

হোসেনপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে ধসে যাওয়ার পর সাময়িকভাবে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য তিন লাখ টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে। নতুন ভবনের জন্য সাহেবেরচর গ্রামে ৩৩ শতক জমি অধিগ্রহণ করা হলেও এখনও ভবন নির্মাণে বরাদ্দ আসেনি।

এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের কষ্টের কথা স্বীকার করে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা ও হোসেনপুর উপজেলার (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাসউদ মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠকে জানান, এভাবে পাঠদান করানোর কারণে মানসম্মত শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে প্রয়োজনীয় নতুন ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিদ্যালয়সহ এক হাজার ফিট প্রশস্ত আড়াই কিলোমিটার জায়গা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে ধসে যাওয়ার পর সাময়িকভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য টিনের চালা তৈরি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সার্বিক খোঁজ খবর নেয়ার জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এছাড়াও ইতোমধ্যে ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৩৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, আরও প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। এসব বিষয় তদারকি করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গকে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।