ঢাকা ১১:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝুঁকিপূর্ণ স্কুল ভবনে চলছে পাঠদান

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:০৪:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুলাই ২০১৮
  • ৪০২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ চতুর্থ শ্রেণীর স্কুলছাত্রী জান্নাতুল মাওয়া বাবার কর্মস্থলের সূত্রে ঢাকায় মোহাম্মপুরে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করত। বাবা ঢাকায় চাকরি ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসলে শিশু জান্নাতুলকেও বাড়ি ফিরতে হয়। জান্নাতুল গ্রামে ফিরে এবছর জানুয়ারি মাসে নিজ গ্রামের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। কিন্তু গ্রামের স্কুলে এসে মানসিক বিপর্যয়ের শিকার হয় জান্নাতুল। পুরানো ঝুঁকিপূর্ণ স্কুল ভবন, ভাঙাচোরা চেয়ার বেঞ্চ আর খাবার পানির সংকট এবং অস্বাস্থ্যকর শৌচাগার। সেই সাথে কর্দমাক্ত সড়কের দুর্ভোগের ভেতর জান্নাতুল লেখা পড়া করছে। জান্নাতুল বলে, ‘স্কুল ভবন এত খারাপ আগে জানলে এইখানে ভর্তি হইতাম না। ক্লাসে বসলে ভয় লাগে কখন মাথায় ছাদ ভাইঙ্গা পড়ে। এরহম স্কুলে লেখাপড়া যায় না। আমাগো নতুন স্কুল ভবন দরকার।’

শুধু জান্নাতুল না পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার সাপলেজা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত ১৪৩ নম্বর পশ্চিম চড়কগাছিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১২৬ জন শিক্ষার্থী পুরানো বিদ্যালয় ভবন ধসের আতঙ্ক নিয়ে নিয়মিত লেখাপড়া করছে।

ওই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র নাজমুল আহসান ক্ষোভের সাথে বলে, আমাগো দেহার কেউ নাই। সবখানে নতুন স্কুল ভবন অয় আমাগো স্কুল ভাঙাচোরা। স্কুলে আইতে এহন ডর লাগে। বৃষ্টি হইলে ছাদ দিয়া ক্লাসে পানি পড়ে। ছাদ খইসা পড়ে। এই স্কুলে আর আইতে মন চায় না। আপনেরা আমাগো নতুন স্কুল ভবন দ্যান।

বিদ্যালয়টি সজেমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, তিনটি শ্রেণী কক্ষের স্কুল ভবনের সারা ভবন জুড়ে ফাটল। সকল পিলার খসে রড বেড়িয়ে গেছে, ছাদের পলেস্টরা খসে পুরো স্কুল ভবনটির বিপন্ন দশা। শৌচাগারের জীর্ণদশায় ব্যবহার অনুপযোগী। বিদ্যালয়ে পানীয় জলের জন্য কোনো নলকূপও নেই। বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র আর শ্রেণী কক্ষের শিক্ষার্থীর বসার বেঞ্চ ভাঙাচোরা। এখানে কোমলমতি শিশুদের স্কুলভবন ধসের আতঙ্ক বিরাজ করছে। এমন একটি বিদ্যালয় পরিত্যক্ত ঘোষাণাও করছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এমনকি বিদ্যালয়ের পরিদর্শন বহি পর্যক্ষেণ করে দেখা গেছে গত এক বছরে শিক্ষা দপ্তরের কোনো ভিজিটরের তথ্যাদি নেই।

জানা গেছে, বিদ্যালয়টি ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠার পর ১৯৯৫ সালে তিন শ্রেণী কক্ষ বিশিষ্ট একটি পাকা স্কুল ভবন নির্মিত হয়। ওই ভবন নির্মাণের এক বছর পরেই ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে যায়। ২০০৭ সালে সিডরে বিদ্যালয়টি ক্ষতিগ্রস্ত হলে লক্ষাধিক টাকার বরাদ্দে দায়সারা কিছু সংস্কার কাজ করা হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টির ভয়াবহ জীর্ণদশা বিরাজ করলেও কর্তৃপক্ষ ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করছে না। ফলে বাধ্য হয়ে প্রাণ সংশয়ের এমন বিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঠদান চলে আসছে।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. নূরুল আমীন বলেন, স্কুল ভবনের অবস্থা বহুবছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ। বিদ্যালয় ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা জরুরী। ঝুঁকি নিয়ে আমাদের পাঠদান করতে হচ্ছে।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. মোফাজ্জেল হোসেন দর্জি বলেন, স্কুল ভবনটি এখন ধসে পড়ার উপক্রম। কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলেও পরিত্যক্ত ঘোষণা না করায় আমাদের সেখানে শিক্ষার্থীদের পাঠদান অব্যাহত রাখতে হচ্ছে। নতুন স্কুল ভবন ছাড়া এ সংকট কাটবে কি করে।

মঠবাড়িয়া উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. মনিরুজ্জামান বিদ্যালয় ভবন ঝুঁকিপূর্ণ স্বীকার করে বলেন, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। স্কুল ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা জরুরী। স্কুল ভবন নির্মাণের বরাদ্দ অনুমোদন ছাড়া নতুন ভবন নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ঝুঁকিপূর্ণ স্কুল ভবনে চলছে পাঠদান

আপডেট টাইম : ০৩:০৪:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুলাই ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ চতুর্থ শ্রেণীর স্কুলছাত্রী জান্নাতুল মাওয়া বাবার কর্মস্থলের সূত্রে ঢাকায় মোহাম্মপুরে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করত। বাবা ঢাকায় চাকরি ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসলে শিশু জান্নাতুলকেও বাড়ি ফিরতে হয়। জান্নাতুল গ্রামে ফিরে এবছর জানুয়ারি মাসে নিজ গ্রামের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। কিন্তু গ্রামের স্কুলে এসে মানসিক বিপর্যয়ের শিকার হয় জান্নাতুল। পুরানো ঝুঁকিপূর্ণ স্কুল ভবন, ভাঙাচোরা চেয়ার বেঞ্চ আর খাবার পানির সংকট এবং অস্বাস্থ্যকর শৌচাগার। সেই সাথে কর্দমাক্ত সড়কের দুর্ভোগের ভেতর জান্নাতুল লেখা পড়া করছে। জান্নাতুল বলে, ‘স্কুল ভবন এত খারাপ আগে জানলে এইখানে ভর্তি হইতাম না। ক্লাসে বসলে ভয় লাগে কখন মাথায় ছাদ ভাইঙ্গা পড়ে। এরহম স্কুলে লেখাপড়া যায় না। আমাগো নতুন স্কুল ভবন দরকার।’

শুধু জান্নাতুল না পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার সাপলেজা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত ১৪৩ নম্বর পশ্চিম চড়কগাছিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১২৬ জন শিক্ষার্থী পুরানো বিদ্যালয় ভবন ধসের আতঙ্ক নিয়ে নিয়মিত লেখাপড়া করছে।

ওই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র নাজমুল আহসান ক্ষোভের সাথে বলে, আমাগো দেহার কেউ নাই। সবখানে নতুন স্কুল ভবন অয় আমাগো স্কুল ভাঙাচোরা। স্কুলে আইতে এহন ডর লাগে। বৃষ্টি হইলে ছাদ দিয়া ক্লাসে পানি পড়ে। ছাদ খইসা পড়ে। এই স্কুলে আর আইতে মন চায় না। আপনেরা আমাগো নতুন স্কুল ভবন দ্যান।

বিদ্যালয়টি সজেমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, তিনটি শ্রেণী কক্ষের স্কুল ভবনের সারা ভবন জুড়ে ফাটল। সকল পিলার খসে রড বেড়িয়ে গেছে, ছাদের পলেস্টরা খসে পুরো স্কুল ভবনটির বিপন্ন দশা। শৌচাগারের জীর্ণদশায় ব্যবহার অনুপযোগী। বিদ্যালয়ে পানীয় জলের জন্য কোনো নলকূপও নেই। বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র আর শ্রেণী কক্ষের শিক্ষার্থীর বসার বেঞ্চ ভাঙাচোরা। এখানে কোমলমতি শিশুদের স্কুলভবন ধসের আতঙ্ক বিরাজ করছে। এমন একটি বিদ্যালয় পরিত্যক্ত ঘোষাণাও করছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এমনকি বিদ্যালয়ের পরিদর্শন বহি পর্যক্ষেণ করে দেখা গেছে গত এক বছরে শিক্ষা দপ্তরের কোনো ভিজিটরের তথ্যাদি নেই।

জানা গেছে, বিদ্যালয়টি ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠার পর ১৯৯৫ সালে তিন শ্রেণী কক্ষ বিশিষ্ট একটি পাকা স্কুল ভবন নির্মিত হয়। ওই ভবন নির্মাণের এক বছর পরেই ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে যায়। ২০০৭ সালে সিডরে বিদ্যালয়টি ক্ষতিগ্রস্ত হলে লক্ষাধিক টাকার বরাদ্দে দায়সারা কিছু সংস্কার কাজ করা হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টির ভয়াবহ জীর্ণদশা বিরাজ করলেও কর্তৃপক্ষ ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করছে না। ফলে বাধ্য হয়ে প্রাণ সংশয়ের এমন বিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঠদান চলে আসছে।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. নূরুল আমীন বলেন, স্কুল ভবনের অবস্থা বহুবছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ। বিদ্যালয় ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা জরুরী। ঝুঁকি নিয়ে আমাদের পাঠদান করতে হচ্ছে।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. মোফাজ্জেল হোসেন দর্জি বলেন, স্কুল ভবনটি এখন ধসে পড়ার উপক্রম। কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলেও পরিত্যক্ত ঘোষণা না করায় আমাদের সেখানে শিক্ষার্থীদের পাঠদান অব্যাহত রাখতে হচ্ছে। নতুন স্কুল ভবন ছাড়া এ সংকট কাটবে কি করে।

মঠবাড়িয়া উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. মনিরুজ্জামান বিদ্যালয় ভবন ঝুঁকিপূর্ণ স্বীকার করে বলেন, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। স্কুল ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা জরুরী। স্কুল ভবন নির্মাণের বরাদ্দ অনুমোদন ছাড়া নতুন ভবন নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।