ঢাকা ০২:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বর্ষায় জমে উঠেছে ডিঙি নৌকার হাট

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৪৯:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুলাই ২০১৮
  • ৪০০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বর্ষা মৌসুম। অঝোরে ঝরছে শ্রাবণ ধারা। সেই সাথে বাড়ছে নদী-খালের পানিও। সর্বত্রই পানি থৈ থৈ করছে। আর এ মৌসুম এলেই ঝালকাঠি সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের জীবিকা অর্জনের অন্যতম বাহন নৌকা। তবে সে নৌকা বড় মালবাহী কোনো নৌকা নয়, সেটি হচ্ছে ডিঙি নৌকা। একদিকে নৌকা বানিয়ে বিক্রি। অপরদিকে যাতায়াত ও উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য ব্যবহার করা হয় নৌকা। ঝালকাঠি সদর উপজেলার কির্ত্তীপাশা, নবগ্রাম ও গাভারামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের চিত্র এটি।

বর্ষা মৌসুম আসায় ঝালকাঠি-স্বরূপকাঠির সীমান্ত আটঘর-কুড়িয়ানা এলাকা পরিণত হয়েছে যেন এক নৌ সাম্রাজ্যে। চলছে জমজমাট নৌকার ব্যবসা। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এ ব্যবসা এলাকার মানুষের কাছে একটি অন্যতম ঐতিহ্য। নয়নাভিরাম নৌকার পসরা চোখে না দেখলে মনেই হবে না জলে-ডাঙায় এক সঙ্গে এতো নৌকার সমারোহ ঘটতে পারে। পিরোজপুরের সুন্দরী কাঠ সমৃদ্ধ এলাকা স্বরূপকাঠি উপজেলা এবং ঝালকাঠি সদর উপজেলার ২০ গ্রামের দেড় হাজারের বেশি পরিবার কয়েক যুগ ধরে নৌকা-বৈঠা তৈরি ও বিক্রি করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন।

জানা যায়, এ অঞ্চলের কৃষিজীবী মানুষের জীবন-জীবিকার প্রধান বাহনই হচ্ছে নৌকা। আর তাই নৌকা বেচা-কেনাকে কেন্দ্র করে সন্ধ্যা নদীর শাখা খালে যুগের পর যুগ বসছে নৌকার হাট। প্রতি শুক্র এবং রোববার বসে এ হাট। স্বরূপকাঠির আটঘর, আদমকাঠি, জিন্দাকাঠি, বাস্তকাঠি, বেঙ্গুলী, দলহার, আতাপাড়া, ইন্দুরকানী, কুড়িয়ানা, ঝালকাঠির ভিমরুলী, শেখেরহাট, শতদশকাঠি, ভিমরুলি, কাপুড়কাঠি, কৃর্ত্তিপাশা, জগদিশপুর, শাখাকাচি, কাচাবালিয়া, পোষণ্ডা, ও গাগর এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে এ নৌ সাম্রাজ্য।

কুড়িয়ানা হাটের ইজারাদার মোস্তফা কামাল জানান, ২ হাজার থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত প্রকার ভেদে নৌকা বিক্রি হয় এ হাটে। জেলার বাইরে থেকে পাইকারদের বড় বড় ট্রলার এসে একসঙ্গে ১৮ থেকে ২০টি নৌকা কিনে তারা অন্য জেলায় নিয়ে বিক্রি করেন। এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা যেহেতু নৌকায় করে খালের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য করেন, সে কারণেই ডিঙি নৌকার চাহিদা বেশি। জ্যৈষ্ঠ থেকে কার্তিক এ ছয় মাস আটঘর খালে প্রতি শুক্র এবং রোববার ক্রেতা-বিক্রেতার নৌকা ও বৈঠা বেচা-কেনা চলে। প্রতি হাটে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার নৌকা বিক্রি হয়। আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে ৩ কোটি টাকারও বেশি নৌকা বিক্রি হয়।

বিক্রেতা নাদিম মিস্ত্রি জানান, প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে নৌকা তৈরির কাজ শুরু করেন যা চলে আশ্বিন মাসের শেষ পর্যন্ত। কিন্তু কাঠ সংকট, কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি ও গ্রামাঞ্চলে নৌকা ব্যবহার কমে যাওয়ার কারণে নৌকা কারিগররা আগের মতো নৌকা তৈরিতে ক্রমশ আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। কুড়িয়ানা বাজারে ঘরের সামনে বসেই নৌকা তৈরী করছেন ষাটোর্ধ্ব মোঃ আজিজুল হক। তাকে সাহায্য করছেন তারই পুত্র মোঃ মাহবুব হক মৃধা (৩০)।

তারা জানান, নৌকা তৈরীর জন্য কাঠ সংকট। স্বমিলে গাছ কাটাতে গেলে সবসময় বিদ্যুত না পাওয়ায় অনেক সময় ধরে অলসভাবে বসে থাকতে হয়। গাছের সিএফটি প্রতি ১০/১২ টাকা বেড়ে গেছে। মিলে কাটাতে গেলে প্রতি কেবি গাছে গত বছরের চেয়ে ৫ টাকা করে বেশি দিতে হয়। এসব কারণে নৌকা তৈরী করে বিক্রি করতে গেলে চাহিদা অনুযায়ী দাম পাওয়া যাচ্ছে না।

আরেক নৌকা ব্যবসায়ী মোঃ মনিরুল ইসলাম জানান, বৈশাখ মাসের দিকে নৌকা তৈরীর মিস্ত্রিদের ঋণ হিসেবে টাকা (দাদন) দেয়া হয়।  মিস্ত্রিদের কাছ থেকে নৌকা নেয়ার সময় বাজারমূল্য থেকে ৪ থেকে ৫শ টাকা কম দেয়া হয়।

বিনয়কাঠি থেকে নৌকা কিনতে আসা মোঃ আইউব আলী তালুকদার বলেন, ২৭শ টাকা দিয়ে একটি ডিঙি নৌকা কিনেছি। গরুকে ঘাস খাওয়ানোর জন্য সংগ্রহ করতে হলে পানির জন্য সমস্যা হয়। তাই নৌকায় করে ঘাস কেটে এনে খাওয়ানো যাবে।

অন্যদিকে ইজারাদারদের অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসার সম্পূর্ণ মুনাফা ভোগ করতে পারছেন না কারিগর ও বিক্রেতারা। এ অঞ্চলের নৌকা ব্যবসায়ীদের দাবি, তাদের যুগ যুগ ধরে চলে আসা ঐতিহ্যবাহী নৌহাট সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে নেয়া হোক সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ।

এ ব্যাপারে ঝালকাঠি বিসিকের উপব্যবস্থাপক জালিছ মাহমুদ বলেন, ঝালকাঠি জেলার আওতায় নৌকা তৈরীর মিস্ত্রীরা ঋণ সহায়তা নিতে এলে নিয়মানুযায়ী তাদের সহয়তা করতে হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বর্ষায় জমে উঠেছে ডিঙি নৌকার হাট

আপডেট টাইম : ১২:৪৯:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুলাই ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বর্ষা মৌসুম। অঝোরে ঝরছে শ্রাবণ ধারা। সেই সাথে বাড়ছে নদী-খালের পানিও। সর্বত্রই পানি থৈ থৈ করছে। আর এ মৌসুম এলেই ঝালকাঠি সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের জীবিকা অর্জনের অন্যতম বাহন নৌকা। তবে সে নৌকা বড় মালবাহী কোনো নৌকা নয়, সেটি হচ্ছে ডিঙি নৌকা। একদিকে নৌকা বানিয়ে বিক্রি। অপরদিকে যাতায়াত ও উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য ব্যবহার করা হয় নৌকা। ঝালকাঠি সদর উপজেলার কির্ত্তীপাশা, নবগ্রাম ও গাভারামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের চিত্র এটি।

বর্ষা মৌসুম আসায় ঝালকাঠি-স্বরূপকাঠির সীমান্ত আটঘর-কুড়িয়ানা এলাকা পরিণত হয়েছে যেন এক নৌ সাম্রাজ্যে। চলছে জমজমাট নৌকার ব্যবসা। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এ ব্যবসা এলাকার মানুষের কাছে একটি অন্যতম ঐতিহ্য। নয়নাভিরাম নৌকার পসরা চোখে না দেখলে মনেই হবে না জলে-ডাঙায় এক সঙ্গে এতো নৌকার সমারোহ ঘটতে পারে। পিরোজপুরের সুন্দরী কাঠ সমৃদ্ধ এলাকা স্বরূপকাঠি উপজেলা এবং ঝালকাঠি সদর উপজেলার ২০ গ্রামের দেড় হাজারের বেশি পরিবার কয়েক যুগ ধরে নৌকা-বৈঠা তৈরি ও বিক্রি করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন।

জানা যায়, এ অঞ্চলের কৃষিজীবী মানুষের জীবন-জীবিকার প্রধান বাহনই হচ্ছে নৌকা। আর তাই নৌকা বেচা-কেনাকে কেন্দ্র করে সন্ধ্যা নদীর শাখা খালে যুগের পর যুগ বসছে নৌকার হাট। প্রতি শুক্র এবং রোববার বসে এ হাট। স্বরূপকাঠির আটঘর, আদমকাঠি, জিন্দাকাঠি, বাস্তকাঠি, বেঙ্গুলী, দলহার, আতাপাড়া, ইন্দুরকানী, কুড়িয়ানা, ঝালকাঠির ভিমরুলী, শেখেরহাট, শতদশকাঠি, ভিমরুলি, কাপুড়কাঠি, কৃর্ত্তিপাশা, জগদিশপুর, শাখাকাচি, কাচাবালিয়া, পোষণ্ডা, ও গাগর এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে এ নৌ সাম্রাজ্য।

কুড়িয়ানা হাটের ইজারাদার মোস্তফা কামাল জানান, ২ হাজার থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত প্রকার ভেদে নৌকা বিক্রি হয় এ হাটে। জেলার বাইরে থেকে পাইকারদের বড় বড় ট্রলার এসে একসঙ্গে ১৮ থেকে ২০টি নৌকা কিনে তারা অন্য জেলায় নিয়ে বিক্রি করেন। এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা যেহেতু নৌকায় করে খালের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য করেন, সে কারণেই ডিঙি নৌকার চাহিদা বেশি। জ্যৈষ্ঠ থেকে কার্তিক এ ছয় মাস আটঘর খালে প্রতি শুক্র এবং রোববার ক্রেতা-বিক্রেতার নৌকা ও বৈঠা বেচা-কেনা চলে। প্রতি হাটে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার নৌকা বিক্রি হয়। আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে ৩ কোটি টাকারও বেশি নৌকা বিক্রি হয়।

বিক্রেতা নাদিম মিস্ত্রি জানান, প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে নৌকা তৈরির কাজ শুরু করেন যা চলে আশ্বিন মাসের শেষ পর্যন্ত। কিন্তু কাঠ সংকট, কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি ও গ্রামাঞ্চলে নৌকা ব্যবহার কমে যাওয়ার কারণে নৌকা কারিগররা আগের মতো নৌকা তৈরিতে ক্রমশ আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। কুড়িয়ানা বাজারে ঘরের সামনে বসেই নৌকা তৈরী করছেন ষাটোর্ধ্ব মোঃ আজিজুল হক। তাকে সাহায্য করছেন তারই পুত্র মোঃ মাহবুব হক মৃধা (৩০)।

তারা জানান, নৌকা তৈরীর জন্য কাঠ সংকট। স্বমিলে গাছ কাটাতে গেলে সবসময় বিদ্যুত না পাওয়ায় অনেক সময় ধরে অলসভাবে বসে থাকতে হয়। গাছের সিএফটি প্রতি ১০/১২ টাকা বেড়ে গেছে। মিলে কাটাতে গেলে প্রতি কেবি গাছে গত বছরের চেয়ে ৫ টাকা করে বেশি দিতে হয়। এসব কারণে নৌকা তৈরী করে বিক্রি করতে গেলে চাহিদা অনুযায়ী দাম পাওয়া যাচ্ছে না।

আরেক নৌকা ব্যবসায়ী মোঃ মনিরুল ইসলাম জানান, বৈশাখ মাসের দিকে নৌকা তৈরীর মিস্ত্রিদের ঋণ হিসেবে টাকা (দাদন) দেয়া হয়।  মিস্ত্রিদের কাছ থেকে নৌকা নেয়ার সময় বাজারমূল্য থেকে ৪ থেকে ৫শ টাকা কম দেয়া হয়।

বিনয়কাঠি থেকে নৌকা কিনতে আসা মোঃ আইউব আলী তালুকদার বলেন, ২৭শ টাকা দিয়ে একটি ডিঙি নৌকা কিনেছি। গরুকে ঘাস খাওয়ানোর জন্য সংগ্রহ করতে হলে পানির জন্য সমস্যা হয়। তাই নৌকায় করে ঘাস কেটে এনে খাওয়ানো যাবে।

অন্যদিকে ইজারাদারদের অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসার সম্পূর্ণ মুনাফা ভোগ করতে পারছেন না কারিগর ও বিক্রেতারা। এ অঞ্চলের নৌকা ব্যবসায়ীদের দাবি, তাদের যুগ যুগ ধরে চলে আসা ঐতিহ্যবাহী নৌহাট সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে নেয়া হোক সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ।

এ ব্যাপারে ঝালকাঠি বিসিকের উপব্যবস্থাপক জালিছ মাহমুদ বলেন, ঝালকাঠি জেলার আওতায় নৌকা তৈরীর মিস্ত্রীরা ঋণ সহায়তা নিতে এলে নিয়মানুযায়ী তাদের সহয়তা করতে হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল