পুষ্টিহীনতার বিরুদ্ধে শাইখ সিরাজের নয়া চ্যালেঞ্জ

একুশে পদকপ্রাপ্ত কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ কৃষি ও কৃষি উন্নয়নে এবং বিষমুক্ত, ভেজালমুক্ত খাদ্যের নিশ্চয়তা প্রদানে সবসময়ই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন। এবং প্রতিটি চ্যালেঞ্জে সফলও হচ্ছেন। এবার তিনি নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে বেছে নিয়েছেন পুষ্টিহীনতাকে। পুষ্টিহীনতার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তিনি এবার তার সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘কৃষকের ঈদ আনন্দ’ নিয়ে ছুটে গেছেন পূর্ব আফ্রিকার উগান্ডায়। সেখানকার মানুষ প্রতিনিয়তই পুষ্টিহীনতার ভুগছে। পুষ্টি কি জিনিস সে বিষয়ে তারা অজ্ঞ। বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি বাংলা ডিজিটাল টেলিভিশন চ্যানেল আইর ঈদ অনুষ্ঠানমালার সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘ফার্মার্স গেইম শো’ কৃষকের ঈদ আনন্দ- এই প্রথমবারের মতো ধারণ করা হয়েছে দেশের বাইরে পূর্ব আফ্রিকার উগান্ডায়। যে দেশে এখনও মানুষখেকো মানুষ পাওয়া যায়। যে দেশের মানুষ নিজের পা-কে টোপ বানিয়ে বিষধর অজগর সাপ ধরে। বিচিত্র মানুষ, বিচিত্র জীবনধারাকে গুরুত্ব দিয়ে পূর্ব আফ্রিকার নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর দেশ উগান্ডার কৃষক-কৃষাণীরা অংশ নিয়েছেন কয়েকটি মজার প্রতিযোগিতায়। বাংলাদেশে কৃষি উন্নয়নের স্বপ্নদ্রষ্টা মাটি ও মানুষ, হৃদয়ে মাটি ও মানুষ কৃষি দিবানিশি, কৃষিপদক, কৃষকের বিশ্বকাপ ফুটবল, কৃষকের বিশ্বকাপ ক্রিকেট, ইংরেজি মাধ্যমের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ফিরে চল মাটির টানে এবং কৃষকের ঈদ আনন্দ অনুষ্ঠানের পরিচালক, পরিচালক ও উপস্থাপক শাইখ সিরাজ বিশ্ব বাস্তবতায় কৃষি ও পুষ্টির বর্তমান পরিস্থিতিকে গুরুত্ব দিয়ে উগান্ডার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এম বারারা জেলার কাবোহো নামক এলাকার একটি মাঠে আয়োজন করেন ‘ফার্মার্স গেইম শো’ কৃষকের ঈদ আনন্দ। উগান্ডার শতকরা ৩৩ ভাগ মুসলমান বাস করে। তাদের সঙ্গে অন্য ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে ধারণ করা হয় কৃষকের ঈদ আনন্দ। এ উপলক্ষে সেখানে উপস্থিত হন বহুসংখ্যক কৃষক-কৃষাণী। তাদের তাদের জীবনে এমন খেলার উৎসব এ প্রথম। প্রথম উৎসাহ এবং আগ্রহ নিয়ে সকলবয়সী মানুষের উপস্থিতিতে অত্যন্ত আনন্দঘন উৎসবমুখর পরিবেশে কৃষক-কৃষাণীরা অংশ নেন বালিশ লড়াই, কমলার শাসযুক্ত মিষ্টি আলুর গড়া থেকে আয়রন বিন খোঁজা, মা ও ছেলের চামচ মুখে নিয়ে আয়রন বিন দৌড় তৈলাক্ত কলাগাছে ওঠা ইত্যাদি খেলায়। শাইখ সিরাজ জানান, উগান্ডাবাসীর প্রধান খাদ্য কলা, বিন ও মিষ্টি আলু। বর্তমানে সেখানে বায়োফার্টিফিকেশনের মাধ্যমে বিনকে আয়রনসমৃদ্ধ করা হয়েছে। সেগুলোর জনপ্রিয়তাও বেশ। একইভাবে কমলা শাসযুক্ত মিষ্টি আলু চাষ ও খাদ্য হিসেবে ব্যবহারে কৃষকের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। পুষ্টিহীনতার শিকার উগান্ডার জনগণের জন্য আয়োজিত কৃষকের ঈদ অনুষ্ঠানে স্থানীয় প্রভাবশালী জনপ্রিতিনিধি থেকে শুরু করে কৃষিসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্র্যাকের প্রতিনিধিরা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ ও কৃষককে উৎসাহিত করতে কৃষকের ঈদ আনন্দের মতো আয়োজন সত্যিই অনবদ্য। শাইখ সিরাজ জানান, তারা এ আয়োজনের মুগ্ধ হয়ে এ ধরনের আয়োজন তাদের কৃষি আবাদি এলাকাগুলোতে বিশেষ বিশেষ দিনে চালু করবেন। কৃষকের ঈদ আনন্দ উপলক্ষে উগান্ডার প্রত্যন্ত এলাকার এক কৃষি ক্লাবের কৃষক পরিবারের তরুণীরা সদস্যরা বাংলা গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে যা দর্শকদের খুবই আনন্দ দেবে। কৃষকের ঈদ অনুষ্ঠান এবার উগান্ডার বিভিন্ন এলাকা থেকে তুলে আনা হয়েছে বিচিত্র ও চিত্তাকর্ষক তথ্যচিত্র। তুলে আনা হয়েছে সর্ববৃহৎ নীলনদের উৎসস্থল, যা দর্শকদের অবাক করবে। শাইখ সিরাজ জানান, উগান্ডার পাশাপাশি কৃষকের ঈদ আনন্দের একটি অংশে থাকছে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী নবাবগঞ্জের চুরাইন মাঠে কৃষিনির্ভর প্রসিদ্ধ স্থানের কৃষকদের নিয়ে নানা ধরনের প্রতিযোগিতা। থাকছে নবাবগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুর এলাকার ঐতিহ্যহাসিক অজানা কিছু বিষয় নিয়ে প্রামাণ্য প্রতিবেদন। দেশের বাইরে দক্ষিণ আফ্রিকার উগান্ডায় কৃষকের ঈদ আনন্দের আয়োজন করা প্রসঙ্গে শাইখ সিরাজ মানবজমিনকে বলেন, সব দেশের কৃষকই এক। উন্নতশীল দেশে কৃষি বিষয়ে প্রযুক্তিগত জ্ঞান বেশি, অনুন্নত দেশে কম। বিভিন্ন দেশের কৃষকদের মাঝে প্রযুক্তির আদান-প্রদানের লক্ষ্য নিয়ে আমরা এ প্রথমবার দেশের বাইরে পূর্ব আফ্রিকার উগান্ডায় যাই কৃষকের ঈদ আনন্দ অনুষ্ঠান করতে। তিনি বলেন, উগান্ডার জনগণ ভয়াবহ পুষ্টিহীনতার শিকার। তাদের মূল খাদ্য কাঁচাকলা। তাদের ভাষার নাম মাটোকি। কাঁচা কলাতে কার্বোহাইড্রেড আছে কিন্তু নিউট্রেশন নেই। এসব দেশে পুষ্টিহীন তাদের করার জন্য ওয়ার্ল্ড ব্যাংক খাদ্য দেয়ার চেষ্টা করছে। যেমন মিষ্টি আলুতে প্রচুর ভিটামিন আছে। সেখানে মিষ্টি আলু চাষের প্রবণতা তৈরি করা, শিমের বিচিতে ভিটামিন এ যুক্ত করে খাওয়ানো- এই দুটোকে মাথায় রেখে আমরা পুষ্টিহীনতাকে দূর করতে উদ্যমী হয়েছি বলা যায় পুষ্টিহীনতার বিরুদ্ধে একটা চ্যালেঞ্জ। ইনশাআল্লাহ এই চ্যালেঞ্জেও আমরা জয়ী হবো। শাইখ সিরাজ বলেন, উগান্ডায় কৃষকের ঈদ আনন্দ করতে গিয়ে এবার যেমন বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছে তেমনি প্রচুর কষ্ট এবং পরিশ্রম হয়েছে। যেমন বালিশ লড়াইয়ের জন্য সেখানে কোল বালিশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। কারণ তারা কোল বালিশ ব্যবহার করে না। মাথার বালিশ পাওয়া গেল তাও স্পঞ্জের। তারপরও ওই এলাকায় পানির সংকট। শেষ পর্যন্ত খেলাটা মাঠেই করতে হলো। তৈলাক্ত কলাগাছ বেয়ে ওঠার খেলার জন্য বড় কলাগাছ পাওয়া যায়নি। সব ছোট ছোট গাছ। ফলে বড়দের বাদ দিয়ে এবার স্কুলের ছাত্রদের নিয়ে খেলানো হয়েছে। শাইখ সিরাজ বলেন, বাংলাদেশে ছয়টি ক্যামেরা দিয়ে চিত্রায়ণ করি। এবার করতে হয়েছে দুটো ক্যামেরা দিয়ে। অনেক সময় লেগেছে। অনেক কষ্ট হয়েছে। ব্র্যাকের সহযোগিতা ছিল বলে ভাল একটা অনুষ্ঠান করতে পেরেছি। আশা করছি দর্শকদের খুব ভাল লাগবে। ঈদের আনন্দকে পরিপূর্ণ করবে। কৃষকের ঈদ আনন্দ চ্যানেল আইতে প্রচার হবে ঈদের দ্বিতীয় দিন শনিবার বিকাল সাড়ে চারটায়।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর