বৃটেনে তারেকের রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে বিচলিত খালেদা

আগামী ডিসেম্বরে নাহলেও ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় হয়ে যাবে বলে রাষ্ট্রপক্ষের একজন আইনজীবী জানান। এই মামলাকে কেন্দ্র করে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে সরকার। এ নিয়ে গভীর দুর্ভাবনায় আছে জিয়া পরিবার। নিজের জন্য যতটা চিন্তিত বেগম খালেদা জিয়া তার চেয়ে বেশি বিচলিত পুত্র তারেক রহমানকে নিয়ে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানকে আসামী করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা তারেক রহমান এযাবত নিরাপদেই রয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বৃটেনে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকতে পারবেন কিনা সে ভাবনা দুর্ভাবনা হয়ে দেখা দিয়েছে।
বিএনপির একাধিক নেতৃস্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা দ্রুত নিস্পত্তির জন্য রাষ্ট্রপক্ষ যাবতীয় আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে। জঘন্যতম এই ঘটনা একটি ভয়ংকর সন্ত্রাসী, জঙ্গী হামলা। হামলাকারীদের ব্যবহৃত আরজেস গ্রেনেড সাধারণ সন্ত্রাসীদের হাতে থাকার কথা নয়।
এই মামলার প্রধান আসামী মুফতি হান্নানের পাকিস্তান গমন, পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন ও আফগানিস্তানের তালেবান যোদ্ধাদের সাথে যোগাযোগ সংক্রান্ত তথ্য প্রমান সরকারের হাতে রয়েছে। মামলার আসামী জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালামের ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনের পাকিস্তানে জঙ্গীদের সঙ্গে সম্পর্ক, সেখানে যাওয়ার তথ্যও রয়েছে।
২১ আগস্ট হামলার আগে হাওয়া ভবনে একাধিক বৈঠক এবং তাতে তারেক রহমানের উপস্থিত থাকার কথা মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে রয়েছে। বিচারকের কাছে প্রদত্ত জবানবন্দি প্রামান্য দলিল হিসেবে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে উপস্থাপন করা হয়েছে। আইনের বিধান অনুযায়ী বানীবদ্ধ জবানবন্দি আদালতে গ্রহণযোগ্য। জজ মিয়া নাটকও সাজানো হয় জোট সরকারের সময়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যাবতীয় আইনী প্রক্রিয়া ও তথ্যাদির প্রামান্য দলিল যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। তারেককে গ্রেফতার করার জন্য ইন্টারপোলের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য পুলিশের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা একজনকে গ্রেফতার ও হস্তান্তর নাকরার ব্যাপারে যুক্তরাজ্য সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি কঠোর। কিন্তু ২১আগস্টের ঘটনা ভয়াবহ সন্ত্রাসী জঙ্গী হামলা হওয়ায় বিষয়টি তাদের পক্ষে রাজনৈতিক বা মানবিক বিবেচনায় দেখার সুযোগও নেই।
মামলার রায় হওয়ার আগেই তারেক রহমানকে ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়টি সরকারের পক্ষ থেকে জোরালোভাবে তোলা হয়েছে।
অপরদিকে বিএনপির দিক থেকে এই ঘটনায় তারেক রহমান জড়িত নন বলে দেশে-বিদেশে প্রতিষ্ঠার নানামুখী চেষ্টা করা হচ্ছে। মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তি তার স্বেচ্ছাপ্রণোদিত নয় বলেও প্রচার করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হামলা এবং আইভী রহমানসহ বহু সংখ্যকের হতাহতের ঘটনা প্রচার-প্রচারণায় প্রভাবিত করার সুযোগ নেই বলে রাষ্ট্রপক্ষীয় আইনজীবীরা মনে করেন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জঘন্য এই হামলার পরিকল্পনাকারী ও হামলার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যাপারে তারা আস্থাশীল।
তারেক রহমানের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে গভীরভাবে চিন্তিত বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনসমূহের নেতা-কর্মীরা। তারেক রহমানকে হস্তান্তরের জন্য ইন্টারপোলের মাধ্যমে আবারো নোটিশ পাঠানো হবে।
বিএনপির পক্ষ থেকে জোড় তৎপরতা চালানো হলেও আইনের শাসনের প্রতি গভীরভাবে শ্রদ্ধাশীল এবং সন্ত্রাসী, জঙ্গী কার্যক্রমের প্রবল বিরোধী। যুক্তরাজ্য সরকারের সহানুভূতিশীল মনোভাবও পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি হাইকমান্ড।
বিএনপির পরবর্তী কান্ডারি হিসেবে তারেক রহমান নিজেকে যাতে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন সেজন্য দলীয় ও প্রশাসনিকভাবে সর্বাত্মক সুযোগ দেয়া হয়। রাজনৈতিক নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার আগেই তারেক রহমান ভয়ঙ্কর মারাত্মক মামলার আসামী হয়ে দেশের বাইরে আছেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর