হাওর বার্তা ডেস্কঃ বেজি চেনেন না বা দেখেননি এমম মানুষ খুজে খুব কম পাওয়া যাবে। আফ্রিকা ও এশিয়ার পল্লী ও শহর উভয় এলাকাতেই বেজির দেখা পাওয়া যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটিকে সাধারণ অন্য দশটি প্রাণীর মতো মনে করা হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েলসের বিখ্যাত প্রাণী গবেষক অধ্যাপক মাইকেল ক্যান্ট বলেছেন, বেজি মোটেও অন্য প্রাণীদের মতো নয়। এটি অনেক বুদ্ধিমান এবং সাহসী তো বটেই, এর বাইরে এদের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা রীতিমতো বিস্ময়কর।
সাম্প্রতিক একটি গবেষণা নিবন্ধে ক্যান্ট লিখেছেন, বেজিরা দলগত প্রাণী। একটি দলের সদস্য নির্দিষ্ট এবং সবাই একসাথে ঘুরে বেড়ায়। সবচে মজার ব্যাপার হচ্ছে দলের সব নারী সদস্য একই দিনে একই স্থানে সন্তান জন্ম দেয়! তারা কেন এই কাজটি করে এবং দলবদ্ধ হয়ে কেন ঘুরে বেড়ায় তা নিয়ে গবেষণা করেছেন অধ্যাপক ক্যান্ট। তিনি কারণও খুঁজে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তার মতে, বেজিরা একই সঙ্গে ভীতু এবং হিংস্র প্রাণী। যত বিষধর সাপ তাদের সামনে আসুক না কেন, নির্ভয়ে লড়াই করে সাপকে তাড়িয়ে কিংবা হারিয়ে দিতে পারে।
যে কারণে একই দিনে: ক্যান্ট জানান, তিনি বেজি নিয়ে টানা ২৩ বছর গবেষণা করেছেন। একটি দলের সব প্রসূতি বেজি একই দিনে এবং একই স্থানে কেন বাচ্চা জন্ম দেয় সেটি তিনি জানার চেষ্টা করছিলেন দীর্ঘদিন ধরে। তারা এটি করে আসলে নবজাতকদের নিরাপত্তার স্বার্থে। কারণ তাদের সমাজে একজনের সন্তানকে অন্যজন ভালো চোখে দেখতে পারে না। নবীন মায়েদের সদ্যজাত বাচ্চাদের হত্যা করে প্রবীণ ও শক্তিশালী মা বেজিরা।
এই সমস্যা সমাধানের জন্যই ‘গণপ্রসব’ ব্যবস্থার প্রচলন হয়েছে তাদের সমাজে। একই সাথে একই স্থানে সবার বাচ্চা হবার কারণে কোনটা কার সেটা তারা আলাদা করে চিনতে পারে না। তাই কোনো সদ্যজাতকে মেরে ফেললে ভুলবশত সেটা নিজের বাচ্চাও হয়ে যেতে পারে; একারণে ঝুঁকি নিতে রাজি হয় না কোনো মা বেজি। নবজাতকদের বাঁচানোর জন্য এই ব্যবস্থা বেজি সমাজের ‘সেরা উদ্ভাবন’ বলে গবেষণায় মন্তব্য করেছেন মাইকেল ক্যান্ট।
গুরুকে অনুসরণ: ক্যান্ট আরো বলেছেন, বেজির বাচ্চারা একজন পুরুষ সদস্যকে ‘গুরু’ হিসেবে নেয়। এভাবে একজন গুরুর অনেক অনুসারী তৈরি হয়। একারণেই দেখা যায়, দলের একটি বেজি যখন আগে দৌড়ায় তখন পেছন পেছন এক ঝাঁক দৌড়ায়। প্রথমজন দাঁড়িয়ে গেলে পেছনের সবাই দাঁড়িয়ে যায়। সে খাবারের সন্ধান শুরু করলে অন্যরাও তাই করে।
আগে দৌড়ানো এই বেজিটি আসলে তাদের ‘গুরু’। অন্য দলের সদস্যদের হাতে মারা পড়ার ভয়েই আসলে তাদের মধ্যে এই গুরু-শিষ্য ব্যবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে ক্যান্ট তার গবেষণার ফলাফলে লিখেছেন। এছাড়া তার কাছেই নবীন সদস্যরা শিকার এবং খাবার অনুসন্ধানের প্রশিক্ষণ পায়। কারণ, নিজের সন্তানকে চিনতে না পারায় জন্মের পর মা বেজিরা বাচ্চাদের দায়িত্ব নেয় না।
সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক