ঢাকা ০২:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢাকার চেহারা বদলাতে চার নদীর তীরে হচ্ছে ওয়াকওয়ে ও ইকোপার্ক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৪১:২১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ মে ২০১৮
  • ৪৭৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঢাকার চেহারা বদলাতে চার নদীর তীরে হচ্ছে ওয়াকওয়ে ও ইকোপার্ক। ওয়াকওয়ের রুট চূড়ান্ত হয়েছে। রুটটি হবে আব্দুল্লাহপুর থেকে ধউর-বিরুলিয়া-গাবতলী-রায়েরবাজার-বাবুবাজার-সদরঘাট-ফতুল্লা-চাষাঢ়া-সাইনবোর্ড-শিমরাইল-পূর্বাচল সড়ক হয়ে তেরমুখ পর্যন্ত। প্রাথমিকভাবে ওয়াকওয়ের সঙ্গে তিনটি ইকোপার্ক, বিনোদনকেন্দ্র, বসার বেঞ্চ, ফুডকোর্ট ও টয়লেট নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি সবুজায়নে বৃক্ষরোপণ ও পর্যটনশিল্পের উন্নয়ন করা হবে। সম্প্রতি প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় বিস্তৃত ‘বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীরভূমিতে পিলার স্থাপন, তীররক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ (২য় পর্যায়)’ প্রকল্প হাতে নিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৪৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। প্রকল্পের পুরো অর্থই সরকারের নিজস্ব তহবিল (জিওবি) থেকে জোগান দেওয়া হবে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বাস্তবায়ন করবে। আগামী জুলাইয়ে শুরু হয়ে ২০২২ সালের ৩০ জুন শেষ হবে এর কাজ।

জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় মোট ৫২ কিলোমিটার ওয়াকওয়ের ৩৫ দশমিক ৫১ কিলোমিটারই নির্মিত হবে নদীর নিচু তীরভূমিতে। ১০ দশমিক ২৭ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে নদীর উঁচু তীরভূমিতে। ৫ দশমিক ৯২ কিলোমিটার নদীর তীরভূমিতে কলামের ওপর ওয়াকওয়ে (হাঁটার রাস্তা) নির্মাণ করা হবে। দশমিক ৩০ কিলোমিটার পায়ে হাঁটার সেতু নির্মাণ করা হবে। ৪৪ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার তীররক্ষা কাজ করা হবে। ১ কিলোমিটার ওয়াল নির্মাণ করা হবে। ১ দশমিক ৫০ কিলোমিটার বেড়াসহ সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হবে। ৩টি ইকোপার্ক নির্মাণ করা হবে। ১৯টি জেটি নির্মাণ করা হবে এবং ১ হাজার ৮২০টি সীমানা পিলার স্থাপন করা হবে।

সূত্র জানায়, অভ্যন্তরীণ নৌপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে এ চার নদীর তীরে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও টঙ্গীতে ৩টি অভ্যন্তরীণ নদীবন্দর রয়েছে। কিন্তু এসব নদীর তীরভূমির বিভিন্ন জায়গা অবৈধ দখলদারদের কবলে রয়েছে। অবৈধ দখলদাররা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যবসা পরিচালনার জন্য নদীর তীরে আরসিসি কাঠামো তৈরি করেছে। ফলে নদীগুলোর প্রশস্ততা এবং নৌচলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় গভীরতা দিন দিন কমে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অননুমোদিত ও অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণের ফলে পানির স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। বিআইডব্লিউটিএ বিভিন্ন সময় নদীর তীরভূমির অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে এবং এখনো করছে। কিন্তু দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধার করা তীরভূমি সংরক্ষণ করা কঠিন হয়ে ওঠে।

জানা গেছে, ঢাকা মহানগরীর চারদিকে নদীর তীরে ওয়াকওয়ে নির্মাণে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে ২০১৫ সালের ৯ এপ্রিল একটি সভাও হয়। এ সভায় সিদ্ধান্ত হয় ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর দুপাশ অবৈধ দখলমুক্ত রাখতে তীরভূমিতে ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ চলমান রাখতে হবে। পাশাপাশি তীরের জায়গায় জনগণের জন্য বসার বেঞ্চ, ইকোপার্ক, বৃক্ষরোপণ ইত্যাদি কাজ হাতে নেওয়া যেতে পারে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা শহরের চারদিকে বৃত্তাকার নৌপথের মোট ১২০ কিলোমিটার তীরভূমির মধ্যে ১ম পর্যায়ে ২০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। ২য় পর্যায়ে ৫২ কিলোমিটার অংশ অন্তর্ভুক্ত করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এ প্রকল্পটি প্রস্তাব করেছে। পর্যায়ক্রমে অন্য অংশেও ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে।

৮৫০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন মাসে শেষ করার লক্ষ্যে প্রকল্পটির প্রস্তাব করা হলে ২০১৭ সালের ৫ আগস্ট প্রস্তাবটির ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়। ২০১৭ সলের ৫ ডিসেম্বর পুনর্গঠিত ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে গৃহীত হয়। ডিপিপিতে কিছু অসংগতি থাকায় তা সংশোধন করে গত ১৩ মার্চ পুনর্গঠিত ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে গৃহীত হয়। পুনর্গঠিত ডিপিপি অনুসারে প্রকল্পটির মোট প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৪৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

ঢাকার চেহারা বদলাতে চার নদীর তীরে হচ্ছে ওয়াকওয়ে ও ইকোপার্ক

আপডেট টাইম : ১১:৪১:২১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ মে ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঢাকার চেহারা বদলাতে চার নদীর তীরে হচ্ছে ওয়াকওয়ে ও ইকোপার্ক। ওয়াকওয়ের রুট চূড়ান্ত হয়েছে। রুটটি হবে আব্দুল্লাহপুর থেকে ধউর-বিরুলিয়া-গাবতলী-রায়েরবাজার-বাবুবাজার-সদরঘাট-ফতুল্লা-চাষাঢ়া-সাইনবোর্ড-শিমরাইল-পূর্বাচল সড়ক হয়ে তেরমুখ পর্যন্ত। প্রাথমিকভাবে ওয়াকওয়ের সঙ্গে তিনটি ইকোপার্ক, বিনোদনকেন্দ্র, বসার বেঞ্চ, ফুডকোর্ট ও টয়লেট নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি সবুজায়নে বৃক্ষরোপণ ও পর্যটনশিল্পের উন্নয়ন করা হবে। সম্প্রতি প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় বিস্তৃত ‘বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীরভূমিতে পিলার স্থাপন, তীররক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ (২য় পর্যায়)’ প্রকল্প হাতে নিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৪৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। প্রকল্পের পুরো অর্থই সরকারের নিজস্ব তহবিল (জিওবি) থেকে জোগান দেওয়া হবে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বাস্তবায়ন করবে। আগামী জুলাইয়ে শুরু হয়ে ২০২২ সালের ৩০ জুন শেষ হবে এর কাজ।

জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় মোট ৫২ কিলোমিটার ওয়াকওয়ের ৩৫ দশমিক ৫১ কিলোমিটারই নির্মিত হবে নদীর নিচু তীরভূমিতে। ১০ দশমিক ২৭ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে নদীর উঁচু তীরভূমিতে। ৫ দশমিক ৯২ কিলোমিটার নদীর তীরভূমিতে কলামের ওপর ওয়াকওয়ে (হাঁটার রাস্তা) নির্মাণ করা হবে। দশমিক ৩০ কিলোমিটার পায়ে হাঁটার সেতু নির্মাণ করা হবে। ৪৪ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার তীররক্ষা কাজ করা হবে। ১ কিলোমিটার ওয়াল নির্মাণ করা হবে। ১ দশমিক ৫০ কিলোমিটার বেড়াসহ সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হবে। ৩টি ইকোপার্ক নির্মাণ করা হবে। ১৯টি জেটি নির্মাণ করা হবে এবং ১ হাজার ৮২০টি সীমানা পিলার স্থাপন করা হবে।

সূত্র জানায়, অভ্যন্তরীণ নৌপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে এ চার নদীর তীরে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও টঙ্গীতে ৩টি অভ্যন্তরীণ নদীবন্দর রয়েছে। কিন্তু এসব নদীর তীরভূমির বিভিন্ন জায়গা অবৈধ দখলদারদের কবলে রয়েছে। অবৈধ দখলদাররা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যবসা পরিচালনার জন্য নদীর তীরে আরসিসি কাঠামো তৈরি করেছে। ফলে নদীগুলোর প্রশস্ততা এবং নৌচলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় গভীরতা দিন দিন কমে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অননুমোদিত ও অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণের ফলে পানির স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। বিআইডব্লিউটিএ বিভিন্ন সময় নদীর তীরভূমির অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে এবং এখনো করছে। কিন্তু দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধার করা তীরভূমি সংরক্ষণ করা কঠিন হয়ে ওঠে।

জানা গেছে, ঢাকা মহানগরীর চারদিকে নদীর তীরে ওয়াকওয়ে নির্মাণে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে ২০১৫ সালের ৯ এপ্রিল একটি সভাও হয়। এ সভায় সিদ্ধান্ত হয় ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর দুপাশ অবৈধ দখলমুক্ত রাখতে তীরভূমিতে ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ চলমান রাখতে হবে। পাশাপাশি তীরের জায়গায় জনগণের জন্য বসার বেঞ্চ, ইকোপার্ক, বৃক্ষরোপণ ইত্যাদি কাজ হাতে নেওয়া যেতে পারে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা শহরের চারদিকে বৃত্তাকার নৌপথের মোট ১২০ কিলোমিটার তীরভূমির মধ্যে ১ম পর্যায়ে ২০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। ২য় পর্যায়ে ৫২ কিলোমিটার অংশ অন্তর্ভুক্ত করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এ প্রকল্পটি প্রস্তাব করেছে। পর্যায়ক্রমে অন্য অংশেও ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে।

৮৫০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন মাসে শেষ করার লক্ষ্যে প্রকল্পটির প্রস্তাব করা হলে ২০১৭ সালের ৫ আগস্ট প্রস্তাবটির ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়। ২০১৭ সলের ৫ ডিসেম্বর পুনর্গঠিত ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে গৃহীত হয়। ডিপিপিতে কিছু অসংগতি থাকায় তা সংশোধন করে গত ১৩ মার্চ পুনর্গঠিত ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে গৃহীত হয়। পুনর্গঠিত ডিপিপি অনুসারে প্রকল্পটির মোট প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৪৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।