ঢাকা ০৯:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এমপিও ভুক্ত ৯ স্কুল যাচ্ছে তাই শিক্ষার মান

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৩৪:২০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ মে ২০১৮
  • ৪১৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সবার জন্য শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকার বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোকে জাতীয়করণ করছে। কিন্তু বর্তমানে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে গেজেটভুক্ত ৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিবেশ ও শিক্ষার মান অত্যন্ত বেহাল। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকারের আমলে প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য প্রথম ধাপে ৮৪টি দ্বিতীয় ধাপে ৮টি ও তৃতীয় ধাপে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও আরো ১৫টি রেজিস্ট্রার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করার জন্য সুপারিশ করে অনুমোদনের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদুল হাসান।

সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের  নামে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ জমিতে নিজস্ব ঘর, পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ (ক্লাসরুম) আসবাবপত্র, খেলার সরঞ্জাম, রেজিস্ট্রেশন বা জাতীয়করণ হতে কমপক্ষে ১৫০ জন শিক্ষার্থী প্রয়োজন অথচ বিদ্যালয়গুলোতে এর সবই অনুপস্থিত। গত বৃহস্পতিবার ও শনিবার দুই দিনে উপজেলার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে জাতীয় করণ হওয়া বিদ্যালয়গুলোতে সরজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যালয়গুলোতে নেই ভালো অবকাঠামো, আকর্ষণীয় বা শিশুবান্ধব শ্রেণিকক্ষ। বেশির ভাগ বিদ্যালয়ে কাগজে-কলমে ১শ থেকে ১৩০ জনের উপরে শিক্ষার্থী থাকলে বাস্তবে কোনো কোনো স্কুলে ২০ থেকে ৩০ জন আবার কোনো কোনো স্কুলে কোনো শিক্ষার্থী চোখে পড়েনি।

সবচেয়ে মজার বিষয় হলো কোনো কোনো বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী থাকলেও উপস্থিত নেই শিক্ষক। আবার কিছু কিছু বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা আসেন নিজেদের ইচ্ছামতো। এসবের পিছনে সরকারিভাবে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরালো না হওয়া, টাকার বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ দায়ী বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। গত বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটায় উপজেলার রণচন্ডী ইউনিয়নে বদি শিশু কল্যাণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়েছে ২০০৮ সালে, জাতীয়করণ হয়েছে ২০১৩ সালের ১লা জুলাই। শিক্ষক সংখ্যা ৪ জন। ছাত্রছাত্রী কাগজে কলমে ১০৪ জন। এ সময় কোনো ছাত্রছাত্রীর দেখা না মিললে একটি বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা টিনশেড ঘরে বসে আসেন তিনজন মহিলা শিক্ষক।

এ সময় ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামাক্ষাচরণ বিদ্যালয়ে না থাকায় সহকারী শিক্ষক নারগিস আক্তারের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, বর্তমানে স্কুলে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা চলছে বাচ্চারা পরীক্ষা দিয়ে চলে গেছে। এ ব্যাপারে বদি শিশু কল্যাণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামাক্ষাচরণ বলেন, আমি ট্রেনিংয়ে আছি। তবে স্কুলে পরীক্ষা চলছে। তাই বাচ্চারা পরীক্ষা দিয়ে একটু আগেই চলে গেছে। গত শনিবার বেলা ১২টার দিকে গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের দলিরাম দোলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, ওই বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়েছে ২০০৭ সালে। এ সময় বিদ্যালয়টির তিনটি কক্ষে মোট ২৩টি শিশু আলাদা আলাদাভাবে খাতা কলম নিয়ে বসে আছে। বিদ্যালয়টিতে মোট চারজন শিক্ষক থাকলেও কোনো শিক্ষককে বিদ্যালয়ে উপস্থিত পাওয়া যায়নি।

বিদ্যালয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকলে লিমন ইসলাম নামে এক কিশোর নিজেকে ওই স্কুলের শিক্ষক বলে জানান, তবে পরে তিনি জানান আমি এবারে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। বর্তমানে প্যারা শিক্ষক হিসেবে বাচ্চাদের পরীক্ষা নিচ্ছি। এর কিছুক্ষণ পরে গোলাম রব্বানী নামে এক শিক্ষক এসে বলেন, ভাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন চন্দ্র রায় ট্রেনিংয়ে আছে। আমি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছি আর বাকি দুজনের মধ্যে একজন ছুটিতে অপরজনও ট্রেনিংয়ে আছে। পুটিমারী ইউনিয়নের পুটিমারী সাতপাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, সাতপাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়েছে ২০১২ সালে জাতীয়করণ ২০১৪ সালে। অথচ স্কুলে একটি টিনের ঘর ছাড়া আর কোনো অবকাঠামো চোখে পড়েনি।

সাতপাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুন্নাহার বলেন, আমি ২০১১ সালে বিদ্যালয়ে নিয়োগ পেয়েছি। আগের প্রধান শিক্ষক মারা যাওয়ায় আমি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছি। আমাদের বিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রছাত্রী আছে কিন্তু আজ একটু কম এসেছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদুল হাসান বলেন, আমি বর্তমানে একটি প্রোগ্রামে আছি। আপনার সঙ্গে এ বিষয়ে পরে কথা বলবো বলে তিনি লাইন কেটে দেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মেহেদী হাসানের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বলবো-যে সমস্ত বিদ্যালয়ে কাম্যসংখ্যক ছাত্রছাত্রী নেই সেসব বিদ্যালয়ের তালিকা করে ব্যবস্থা নিতে। পাশাপাশি বিদ্যালয়ে শিক্ষক উপস্থিত না থাকলে কেউ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

এমপিও ভুক্ত ৯ স্কুল যাচ্ছে তাই শিক্ষার মান

আপডেট টাইম : ০৯:৩৪:২০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ মে ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সবার জন্য শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকার বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোকে জাতীয়করণ করছে। কিন্তু বর্তমানে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে গেজেটভুক্ত ৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিবেশ ও শিক্ষার মান অত্যন্ত বেহাল। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকারের আমলে প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য প্রথম ধাপে ৮৪টি দ্বিতীয় ধাপে ৮টি ও তৃতীয় ধাপে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও আরো ১৫টি রেজিস্ট্রার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করার জন্য সুপারিশ করে অনুমোদনের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদুল হাসান।

সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের  নামে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ জমিতে নিজস্ব ঘর, পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ (ক্লাসরুম) আসবাবপত্র, খেলার সরঞ্জাম, রেজিস্ট্রেশন বা জাতীয়করণ হতে কমপক্ষে ১৫০ জন শিক্ষার্থী প্রয়োজন অথচ বিদ্যালয়গুলোতে এর সবই অনুপস্থিত। গত বৃহস্পতিবার ও শনিবার দুই দিনে উপজেলার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে জাতীয় করণ হওয়া বিদ্যালয়গুলোতে সরজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যালয়গুলোতে নেই ভালো অবকাঠামো, আকর্ষণীয় বা শিশুবান্ধব শ্রেণিকক্ষ। বেশির ভাগ বিদ্যালয়ে কাগজে-কলমে ১শ থেকে ১৩০ জনের উপরে শিক্ষার্থী থাকলে বাস্তবে কোনো কোনো স্কুলে ২০ থেকে ৩০ জন আবার কোনো কোনো স্কুলে কোনো শিক্ষার্থী চোখে পড়েনি।

সবচেয়ে মজার বিষয় হলো কোনো কোনো বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী থাকলেও উপস্থিত নেই শিক্ষক। আবার কিছু কিছু বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা আসেন নিজেদের ইচ্ছামতো। এসবের পিছনে সরকারিভাবে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরালো না হওয়া, টাকার বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ দায়ী বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। গত বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটায় উপজেলার রণচন্ডী ইউনিয়নে বদি শিশু কল্যাণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়েছে ২০০৮ সালে, জাতীয়করণ হয়েছে ২০১৩ সালের ১লা জুলাই। শিক্ষক সংখ্যা ৪ জন। ছাত্রছাত্রী কাগজে কলমে ১০৪ জন। এ সময় কোনো ছাত্রছাত্রীর দেখা না মিললে একটি বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা টিনশেড ঘরে বসে আসেন তিনজন মহিলা শিক্ষক।

এ সময় ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামাক্ষাচরণ বিদ্যালয়ে না থাকায় সহকারী শিক্ষক নারগিস আক্তারের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, বর্তমানে স্কুলে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা চলছে বাচ্চারা পরীক্ষা দিয়ে চলে গেছে। এ ব্যাপারে বদি শিশু কল্যাণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামাক্ষাচরণ বলেন, আমি ট্রেনিংয়ে আছি। তবে স্কুলে পরীক্ষা চলছে। তাই বাচ্চারা পরীক্ষা দিয়ে একটু আগেই চলে গেছে। গত শনিবার বেলা ১২টার দিকে গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের দলিরাম দোলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, ওই বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়েছে ২০০৭ সালে। এ সময় বিদ্যালয়টির তিনটি কক্ষে মোট ২৩টি শিশু আলাদা আলাদাভাবে খাতা কলম নিয়ে বসে আছে। বিদ্যালয়টিতে মোট চারজন শিক্ষক থাকলেও কোনো শিক্ষককে বিদ্যালয়ে উপস্থিত পাওয়া যায়নি।

বিদ্যালয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকলে লিমন ইসলাম নামে এক কিশোর নিজেকে ওই স্কুলের শিক্ষক বলে জানান, তবে পরে তিনি জানান আমি এবারে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। বর্তমানে প্যারা শিক্ষক হিসেবে বাচ্চাদের পরীক্ষা নিচ্ছি। এর কিছুক্ষণ পরে গোলাম রব্বানী নামে এক শিক্ষক এসে বলেন, ভাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন চন্দ্র রায় ট্রেনিংয়ে আছে। আমি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছি আর বাকি দুজনের মধ্যে একজন ছুটিতে অপরজনও ট্রেনিংয়ে আছে। পুটিমারী ইউনিয়নের পুটিমারী সাতপাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, সাতপাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়েছে ২০১২ সালে জাতীয়করণ ২০১৪ সালে। অথচ স্কুলে একটি টিনের ঘর ছাড়া আর কোনো অবকাঠামো চোখে পড়েনি।

সাতপাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুন্নাহার বলেন, আমি ২০১১ সালে বিদ্যালয়ে নিয়োগ পেয়েছি। আগের প্রধান শিক্ষক মারা যাওয়ায় আমি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছি। আমাদের বিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রছাত্রী আছে কিন্তু আজ একটু কম এসেছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদুল হাসান বলেন, আমি বর্তমানে একটি প্রোগ্রামে আছি। আপনার সঙ্গে এ বিষয়ে পরে কথা বলবো বলে তিনি লাইন কেটে দেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মেহেদী হাসানের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বলবো-যে সমস্ত বিদ্যালয়ে কাম্যসংখ্যক ছাত্রছাত্রী নেই সেসব বিদ্যালয়ের তালিকা করে ব্যবস্থা নিতে। পাশাপাশি বিদ্যালয়ে শিক্ষক উপস্থিত না থাকলে কেউ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।