তারেককে ফেরাতে ব্রিটিশ হোম অফিসকে বাংলাদেশের চিঠি : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী বলেছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন ও দুই মামলায় দণ্ডিত তারেক রহমানকে লন্ডন থেকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পত্র যোগাযোগ চলছে।

আজ বৃহস্পতিবার (০৩মে) এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি ‘প্রক্রিয়ার মধ্যে’ আছে। “আমরা বেশ কয়েকটি চিঠি দিয়েছি, ভবিষ্যতেও দেব। ইতোমধ্যে তারা (ব্রিটিশ হোম অফিস) আমাদের চিঠির জবাবও দিয়েছে।”

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আগেও একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। আবার চিঠি দেওয়া হচ্ছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটি চলছে।

তিনি বলেন, “এই সাজাপ্রাপ্ত আসামি বিদেশের মাটিতে। আবার বিদেশের মাটিতে বসে প্রতিদিন সে আন্দোলন করে। ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। তার সম্পর্কে আলোচনা করছি।”

যে পাসপোর্ট নিয়ে তারেক লন্ডন গিয়েছিলেন, তার মেয়াদ ২০১৩ সালে ফুরিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গত ২৩ এপ্রিল বলেছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে তার পাসপোর্ট যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে ‘সারেন্ডার’ করেছেন। এর মধ্য দিয়ে তারেক বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন বলেই তিনি মনে করেন।

প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৪ এপিল যে সংবাদ সম্মেলন করেন, সেখানে প্রথমবারের মত দলটি স্বীকার করে নেয় যে, তারেক তার পাসপোর্ট ব্রিটিশ হোম অফিসে জমা দিয়েছেন রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য। ফখরুলের দাবি, তারেক নাগরিকত্ব ত্যাগ করেননি।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সে সময় বলেছিলেন, বাংলাদেশের নাগরিকত্ব না থাকলেও ‘মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিটেন্স অ্যাক্টের’ আওতায় তারেক রহমানকে দেশে ফেরাতে কোনো সমস্যা নেই।

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালে গ্রেপ্তার হন তারেক। পরের বছর চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়ে যুক্তরাজ্যে যান তিনি। কিন্তু জামিনের মেয়াদ শেষ হলেও দেশে ফেরেননি বিএনপি নেতা।

এর মধ্যে বিদেশে অর্থপাচারের এক মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড ও ২০ কোটি টাকা জরিমানা এবং যে মামলায় মা খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে, সেই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তারেকের ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং দুই কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা হয়েছে তারেক রহমানের।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেকের মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। এছাড়াও ইতিহাস বিকৃতি এবং মানহানির একাধিক মামলার আসামি বিএনপি নেতা। এর মধ্যেই গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানোর পর তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন করেছে বিএনপি।

সম্প্রতি কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগ দিতে যুক্তরাজ্যে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে দেশে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, তারেক রহমানকে অবশ্যই দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের মুখোমুখি করতে হবে।

ঢাকায় ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলন ৫-৬ মে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী:
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, চলতি বছর টেকসই শান্তি সম্প্রীতি ও উন্নয়নের স্লোগান নিয়ে ইসলামি সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ৪৫তম সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে ঢাকা।সম্মেলন আগামী ৫-৬ মে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। ওআইসি মুসলিম দেশগুলোর সর্ববৃহৎ জোট। প্রায় সাড়ে তিন দশক পর এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ ওআইসির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কোন সম্মেলনের আয়োজন করতে চলেছে।এই সম্মেলন সামনে রেখে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানান, সম্মেলনে ৪০ জন মন্ত্রী ও সহকারী মন্ত্রী, ওআইসির সব সদস্য রাষ্ট্র, পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানসহ পাঁচশ’রও বেশি প্রতিনিধি অংশ নেবেন।

এদিকে ওআইসির সহকারী মহাসচিব পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন সামনে রেখে এই পদে নির্বাচিত হওয়ার জন্য বাংলাদেশ জোর তৎপরতা চালাচ্ছে। ১৯৮৩ সালে ঢাকায় প্রথমবারের মতো ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় আসন্ন এ সম্মেলন থেকে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদারে দেশের মাটিতে বড় ধরনের সুযোগ পাবে বাংলাদেশ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওআইসি সম্মেলনের জন্য রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র (বিআইসিসি) নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রটোকল সেবা এবং থাকার জন্য অভিজাত বেশ কয়েকটি হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে রেখেছে মন্ত্রণালয়। সম্মেলনের জন্য কমপক্ষে ২২০ গাড়ি লাগবে। এর মধ্যে ১০ কোস্টার, পাঁচটি বাস ও পর্যাপ্ত মাইক্রোবাসের প্রয়োজন হবে। তবে উন্নতমানের ৪০টি দামি গাড়ি এবং ১০ কোস্টার প্রতিবেশী কয়েকটি দেশ থেকে অনুদান হিসেবে সংগ্রহ করা হবে।

গত বছর মে মাসে আইভরি কোস্টের আবিদজানে ৪৪তম সম্মেলনে ওআইসিভুক্ত সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশে ৪৫তম সম্মেলন হওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সদস্য রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র, ওআইসির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ওআইসি ট্রয়কার অংশ এবং আগামী তিন বছরের ওআইসির ৮ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাহী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য হয়।

এবারের ওআইসির সম্মেলন ঢাকায় হওয়ায় এর গভীর তাৎপর্য রয়েছে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকার্তারা। তারা বলেছেন, সম্মেলনে রোহিঙ্গাদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করবে ওআইসি। আন্তর্জাতিক ফোরামগুলো রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় যেভাবে সোচ্চার রয়েছে, ঠিক এমন সময়ে এই ধরনের বড় আয়োজন বাংলাদেশকে আরও একধাপ এগিয়ে নেবে। সম্মেলন থেকে বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা নিজ নিজ দেশের অবস্থান আরও দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করবেন এবং সেখান থেকেও একটি রেজ্যুলেশন পাস হবে। এতে করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আরও সহজতর হবে। সব মিলিয়ে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা ঘনীভূত হবে।

সম্মেলন থেকে বাংলাদেশের প্রস্তাবিত ইসলামিক কমন মার্কেটের গন্তব্যে পৌঁছার লক্ষ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য ও এফটিএ বাস্তবায়ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া সম্মেলনে উন্নয়ন ও ইসলামী সংহতির গুরুত্বের ওপর জোর দেয়া, বৃহত্তর আন্তঃওআইসি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম প্র্যাকটিস বিনিময়, দারিদ্র্য বিমোচন, আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি, শান্তিরক্ষা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়ন, সন্ত্রাস ও উগ্রপন্থা দমন এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উপরে গুরুত্বারোপ করবে বাংলাদেশ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর