মানিসক চাপ এখন আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই চাপ থেকে মুক্তির যেন কোনো উপায়ই নেই। যার ফলে শুধু কর্মক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়া নয় বরং ব্যাক্তিগত জীবনটাও সংকুচিত হয়ে আসে। আবার এ থেকে মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হওয়ার মতো বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিও দেখা দিতে পারে। তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। বিজ্ঞান আমাদেরকে এমন কিছু পথও বাতলে দিয়েছে যার মাধ্যমে আমরা মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকতে পারবো। সুতরাং শান্ত থাকুন এবং উপায়গুলো জেনে নিন…
১. ১০ মিনিটের জন্য হাঁটাহাঁটি করুন: নিরিবিলি ও আয়েশি পায়চারি আপনার দেহ ও মনের উপর বিস্ময়কর প্রভাব ফেলতে পারে। কোনো পার্ক বা খোলা সবুজ মাঠে ১০ মিনিটের হাঁটাহাঁটি আপনার দেহের তাল-লয় ঠিক করে দিতে পারে।
২. গান শুনুন: সঙ্গীত আপনার মনের উপর যে গভীর প্রভাব ফেলবে তা অতুলনীয়। মানসিক চাপ অনুভব করলেই পছন্দের যে কোনো গান বাজিয়ে শুনুন। দেখবেন মুহূর্তেই সব মানসিক চাপ উবে যাবে। গান মানব মস্তিষ্কে ডোপেমিনের মতো স্নায়বিক রাসায়নিক নিঃসরনে সহায়ক। এছাড়া রক্তচাপ কমিয়ে আনা এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক জৈব রাসায়নিক নিঃসরণের মাধ্যমে সঙ্গীত যথার্থভাবেই মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি দেবে আপনাকে। প্রাচীনকাল থেকেই কথিত আছে, সঙ্গীত হল মনের খোরাক।
৩. বুক ভরে শ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগ করুন: আমরা জানি যে শ্বাস-প্রশ্বাস আমাদের দৈহিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার ক্ষেত্রে গরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের মাধ্যমে দেহকে শিথিল ও পরিপুষ্ট করা সম্ভব। এমনকি অল্প কয়েকবার গভীরভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণে মানসিক টেনশন ও চাপ থেকেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
৪. হালকা খাবারের বিরতি নিন: অতিরিক্ত মানসিক চাপের সময় মিষ্টিজাতীয় কোনো ক্যান্ডি বা চকোলেট খেয়ে অথবা পানীয় পান করে আপনি চাইলে কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন। এসব খাবর ও পানীয় তাৎক্ষণিকভাবে আপনার দেহে মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণ কমিয়ে আনবে। তবে এমনটা বেশি বেশি করতে যাবেন না যেন। তাহলে অবসাদের আরেক বড় কারণ স্থুলতায় আক্রান্ত হবেন।
৫. দিবানিদ্রা: দিবানিদ্রা উদ্বেগ এবং রক্তচাপ কমিয়ে এনে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দেয়। গবেষকরা দেখিয়েছেন যে, ছোট্ট একটি দিবানিদ্রার মাধ্যমে আপনি মানসিকভাবে আরো সক্রিয় হয়ে ওঠা, অবসাদ থেকে মুক্তি পাওয়া এবং মানসিক দক্ষতা বাড়াতে পারবেন। সূতরাং প্রতিদিনের দুপুরের খাবার খাওয়ার পর অন্তত ২০ মিনিটের একটি দিবা নিদ্রা যাপন করুন।
৬. চুইংগাম চিবানো: চুইংগাম চিবোলে নিশ্চিতভাবেই আপনার নিশ্বাস সতেজ হবে। কিন্তু এটা যে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতেও সহায়ক তা হয়তো আমাদের জানা নেই। চুইংগাম চিবোলে করটিসলের মাত্রা কমে আসে। যার ফলে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ থেকেও রেহাই পাওয়া যায়।
৭. লেখালেখি করুন: লেখালেখি অনেকটা ধ্যানমগ্নতার মতো। যখন আপনি আপনার কোনো ভাবনা কাগজে লিখেছেন তখন আসলে আপনি অনেকটা মেডিটেশনের মতো তৎপরতায় লিপ্ত হচ্ছেন। এতে মস্তিষ্কে প্রশান্তির ভাব ছড়িয়ে পড়ে।
৮. কল্পনায় চিত্র দৃশ্যায়ন: কল্পনায় মস্তিষ্কের ভেতরে কোনো নীরব, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ দৃশ্যের চিত্রায়ন করুন। দেখবেন তাৎক্ষণিকভাবে মানসকি চাপ ও উদ্বেগ কমে আসবে।
৯. শরীরচর্চা করুন: মানসিক চাপের সময় অল্প কয়েক মিনিটের ব্যায়ামেও দেহে প্রচুর পরিমাণে স্নায়বিক হরমোনগুলোর নিঃসরণ ঘটে যা অবসাদের যন্ত্রণা থেকে মুক্ত রাখতে সহায়ক।
১০. চা পান করুন: বেশ কয়েকটি গবেষণায়ই দেখা গেছে চা পানে মানসিক চাপ কমে আসে।
১১. কাছের কোনো মানুষকে জড়িয়ে ধরুন বা চুমু খান: বৈজ্ঞানিকভাবেই এটা প্রমাণিতে যে, চুমু, জড়িয়ে ধরা বা ছুয়ে দেওয়ার মাধ্যমে দৈহিক সংস্পর্শের ফলে শরীরে প্রচুর পরিমাণে মানসিক চাপ কমিয়ে আনতে সহায়ক রাসায়নিক নিঃসরিত হয়। এমনকি প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে রক্তচাপ কমাতেও সহায়ক এই দৈহিক স্পর্শ। সূতরাং সুখি ও স্বাস্থ্যবান মনের জন্য নিয়মিত দৈহিক স্পর্শের চর্চা করুন।
১২. প্রাণখুলে হাসুন: এমন কিছু করুন যা আপনাকে প্রাণ খুলে হাসতে প্ররোচিত করবে। হাসি আপনার দেহে অক্সিজেনসমৃদ্ধ বাতাস গ্রহণ, হৃদযন্ত্র, ফুসফুস ও মাংসপেশিতে উদ্দীপনা সৃষ্টি এবং মস্তিষ্কে এন্ডোরফিন জাতীয় হরমোন নিঃসরণের হার বাড়িয়ে দিবে। এর সবগুলোই মানসিক চাপ ও অবসাদ থেকে মুক্তির উৎকৃষ্টতম উপায়।
১৩. টবে গাছ লাগিয়ে ঘরে রাখুন: বাতাসকে বিশুদ্ধ করার পাশাপাশি গাছ আপনার মনকে প্রশান্ত করতে এবং মুড ভালো রাখতেও সহায়ক। গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন বসত ঘরের ভেতরে ও আশে-পাশে গাছের উপস্থিতির ফলে উদ্বেগ, অবসাদ ও মানসিক চাপ কমে আসে।