ঢাকা ০১:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বোরোর চারা কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চাষিরা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:২১:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ জানুয়ারী ২০১৮
  • ৩৭৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শৈত্যপ্রবাহের কারণে বোরো চারা ‘কোল্ড ইনজুরি’তে আক্রান্ত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের বোরো চাষিরা।

গত দুই সপ্তাহ ধরে চলা শৈত্যপ্রবাহের কারণে ঠাকুরগাঁওয়ের পাঁচ উপজেলায় বোরো চারা ‘কোল্ড ইনজুরি’তে আক্রান্ত হয়েছে। ফলে হলুদ রঙ ধারণ করে বোরো চারা শুকিয়ে মরা যাচ্ছে।

অনেক বীজতলার বোরো চারা পোড়া বা ঝলসানো রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তাই চাষিরা তাদের আবাদ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। অনেকে বোরো বীজতলায় পলিথিন ঢেকে দিয়ে কিংবা স্প্রে করেও তেমন কোনো ফল পাচ্ছেন না বলে জানান চাষীরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও জেলায় এ বছর ৬০ হাজার ৩১০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের ১২ হাজার ৯৪ হেক্টর ও উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের ৪৮ হাজার ২১৫ হেক্টর জমি। এ জন্য কৃষকরা তাদের ৪ হাজার ৭৯২ হেক্টর জমিতে বোরো বীজতলা তৈরি করেছেন। কিন্তু গত ১৫ দিন ধরে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার কারণে জেলার অধিকাংশ বীজতলা কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এ জন্য কৃষকরা বীজতলায় পানি সেচ কিংবা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেন অনেকেই। যেসব বীজতলা ঢেকে রাখা হয়নি তার বেশির ভাগই হলুদ রঙ ধারণ করেছে।

সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়নের মিলনপুর গ্রামের ফুরকান আলি বলেন, এবার দুই একর জমিতে বোরো আবাদ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সে মোতাবেক আগাম প্রস্তুতি হিসেবে ১০ শতক জমিতে বীজতলা তৈরি করেছি। কিন্তু দুই দফায় টানা ১০/১২ দিনের শৈত্যপ্রবাহের কারণে ঘন কুয়াশায় বীজতলার সমস্ত চারা বিবর্ণ হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, কৃষি উপ-সহকারীদের পরামর্শ মোতাবেক চেষ্টা করেও বীজতলা ভালো রাখতে পারছি না। চারাগুলো দেখে মনে হচ্ছে আগুনের তাপে ঝলসে গেছে।

একই গ্রামের আরিফ হাসান বলেন, আমি পাঁচ বিঘা জমিতে বোরো চাষের জন্য রেডি করেছি। কিন্তু উচ্চ ফলনশীল ব্রি-২৮ ও ২৯ জাতের ১০ শতক জমির বীজতলার বীজ জ্বলে গেছে। কৃষি অফিসারদের দেয়া পরামর্শও তেমন কোনো কাজ হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ খন্দকার মাওদুদুল ইসলাম বলেন, দুই দফার তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে জেলার কিছু কিছু বোরো বীজতলা কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের ফিল্ড সুপারভাইজারদের চোখ কান খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বোরো বীজতলা বাঁচাতে কৃষকদের করণীয় শীর্ষক লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আক্রান্ত বীজতলায় প্রতিদিন ভোরে পানি পরিবর্তন করতে হবে। চারার আগা থেকে শিশির ফেলে দিতে হবে। রাতে বীজতলা স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। আক্রান্ত বীজতলায় প্রতি লিটার পানিতে দুই মিলি লিটার আজো অক্সিস্ট্রবিন বা পাইরাকোস্ট্রবিন জাতীয় ছত্রাক নাশক মিশিয়ে বীজতলায় দুপুরে স্প্রে করা যেতে পারে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বোরোর চারা কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চাষিরা

আপডেট টাইম : ০৫:২১:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ জানুয়ারী ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শৈত্যপ্রবাহের কারণে বোরো চারা ‘কোল্ড ইনজুরি’তে আক্রান্ত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের বোরো চাষিরা।

গত দুই সপ্তাহ ধরে চলা শৈত্যপ্রবাহের কারণে ঠাকুরগাঁওয়ের পাঁচ উপজেলায় বোরো চারা ‘কোল্ড ইনজুরি’তে আক্রান্ত হয়েছে। ফলে হলুদ রঙ ধারণ করে বোরো চারা শুকিয়ে মরা যাচ্ছে।

অনেক বীজতলার বোরো চারা পোড়া বা ঝলসানো রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তাই চাষিরা তাদের আবাদ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। অনেকে বোরো বীজতলায় পলিথিন ঢেকে দিয়ে কিংবা স্প্রে করেও তেমন কোনো ফল পাচ্ছেন না বলে জানান চাষীরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও জেলায় এ বছর ৬০ হাজার ৩১০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের ১২ হাজার ৯৪ হেক্টর ও উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের ৪৮ হাজার ২১৫ হেক্টর জমি। এ জন্য কৃষকরা তাদের ৪ হাজার ৭৯২ হেক্টর জমিতে বোরো বীজতলা তৈরি করেছেন। কিন্তু গত ১৫ দিন ধরে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার কারণে জেলার অধিকাংশ বীজতলা কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এ জন্য কৃষকরা বীজতলায় পানি সেচ কিংবা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেন অনেকেই। যেসব বীজতলা ঢেকে রাখা হয়নি তার বেশির ভাগই হলুদ রঙ ধারণ করেছে।

সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়নের মিলনপুর গ্রামের ফুরকান আলি বলেন, এবার দুই একর জমিতে বোরো আবাদ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সে মোতাবেক আগাম প্রস্তুতি হিসেবে ১০ শতক জমিতে বীজতলা তৈরি করেছি। কিন্তু দুই দফায় টানা ১০/১২ দিনের শৈত্যপ্রবাহের কারণে ঘন কুয়াশায় বীজতলার সমস্ত চারা বিবর্ণ হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, কৃষি উপ-সহকারীদের পরামর্শ মোতাবেক চেষ্টা করেও বীজতলা ভালো রাখতে পারছি না। চারাগুলো দেখে মনে হচ্ছে আগুনের তাপে ঝলসে গেছে।

একই গ্রামের আরিফ হাসান বলেন, আমি পাঁচ বিঘা জমিতে বোরো চাষের জন্য রেডি করেছি। কিন্তু উচ্চ ফলনশীল ব্রি-২৮ ও ২৯ জাতের ১০ শতক জমির বীজতলার বীজ জ্বলে গেছে। কৃষি অফিসারদের দেয়া পরামর্শও তেমন কোনো কাজ হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ খন্দকার মাওদুদুল ইসলাম বলেন, দুই দফার তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে জেলার কিছু কিছু বোরো বীজতলা কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের ফিল্ড সুপারভাইজারদের চোখ কান খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বোরো বীজতলা বাঁচাতে কৃষকদের করণীয় শীর্ষক লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আক্রান্ত বীজতলায় প্রতিদিন ভোরে পানি পরিবর্তন করতে হবে। চারার আগা থেকে শিশির ফেলে দিতে হবে। রাতে বীজতলা স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। আক্রান্ত বীজতলায় প্রতি লিটার পানিতে দুই মিলি লিটার আজো অক্সিস্ট্রবিন বা পাইরাকোস্ট্রবিন জাতীয় ছত্রাক নাশক মিশিয়ে বীজতলায় দুপুরে স্প্রে করা যেতে পারে।