ঢাকা ০৪:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শীত ও কুয়াশায় শুকিয়ে বিবর্ণ হচ্ছে বোরো বীজতলা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:৩০:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ জানুয়ারী ২০১৮
  • ৩৪৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রচণ্ড শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে শস্যভাণ্ডার খ্যাত নওগাঁয় এবার ইরি বোরো চাষ থমকে দাঁড়িয়েছে। অব্যাহত শৈত্যপ্রাবাহ আর ঘন কুয়াশায় বোরো বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বীজতলার চারা গাছগুলো লালচে আর হলুদ হয়ে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। ফলে কৃষকেরা সময়মতো বোরো আবাদ করতে পারবে কি না তা নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কৃষিকর্মকর্তারা বলছেন, চলমান শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের পর্যাপ্ত আলো না পাওয়ায় বীজতলার চারা গাছগুলো ‘কোল্ড ইনজুরি’তে আক্রান্ত হয়ে মরে যাচ্ছে। এদিকে তীব্র শীতের কারণে দিনমজুররা মাঠে নামতে পারছেন না। তাই নির্দিষ্ট সময়ে ইরি বোরো রোপণে দিন দিন ভাটা পড়ছে। জেলার আত্রাই, রানীনগর, মান্দাসহ আগাম ইরি-বোরো চাষাবাদ হয়ে থাকে।

প্রতিবছর ঠিক এই সময়ে ইরি বোরো চাষে কৃষকরা বীজতলা থেকে বীজ উত্তোলন, দিনরাত সেচ পাম্প খোলা এবং চারা রোপণে ব্যস্ত দেখা গেলেও এবার মাঠে সে দৃশ্য খুব কম চোখে পড়ছে।

সরেজমিন আত্রাই উপজেলার শাহাগোলা ইউপিসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় ৬০ শতাংশ ইরি বোরো বীজতলা শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বাড়েনি। লালচে হয়ে অনেক ক্ষেত্রেই শুকিয়ে যাচ্ছে। মাঠে কৃষকদের ইরি বোরো রোপণ করতে দেখা যাচ্ছে খুব কমই। সেচ পাম্পগুলো অল্পই চালু রয়েছে। অথচ এ মওসুমে মাঠে মাঠে ইরি বোরো রোপণে কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত কৃষকদের ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। দিন-রাত সেচ পাম্পগুলো খোলা থাকত। ট্রাক্টরে জমি চাষের দৃশ্য ছিল অহরহ। সকালে বীজতলা থেকে চারা ওঠাতে ব্যস্ত থাকত কৃষাণ-কৃষাণীরা।

এ ব্যাপারে উপজেলার শাহাগোলা গ্রামের কৃষক আজাদ আলী সরদার জানান, তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে ইরি বোরোর চারা বড় হচ্ছে না। লালচে রঙ ধরে শুকিয়ে যাচ্ছে। চারাগুলো দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। দুর্বল চারায় ফলন ভালো হবে না।

মহাদেবপুর উপজেলার উত্তরগ্রাম এলাকার কৃষক উজ্জ্বল হোসেন জানান, অন্যান্য বছর এসময় দিনমজুর হিসাবে মাঠে ব্যস্ত থাকলেও শীতের কারণে বর্তমানে ইরি বোরো রোপণ করা যাচ্ছে না। প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারণে কিছুক্ষণ রোপণ করার পর হাতে আর কাজ করার মতো অনুভূতি পাওয়া যায় না। তাই বসে আছি। ওই গ্রামের সেচপাম্পের মালিক মানিক সরকার জানান, কৃষকরা মাঠে নামছেন না। তাই জমির মালিকরাও ইরি বোরো চাষের জন্য জমি তৈরি করছেন খুব কম। এ কারণেই প্রায় সময় সেচপাম্প বন্ধ থাকছে। আগে এই সময়ে দিন-রাত সেচ পাম্প খোলা থাকত।

উপজেলার ভবানীপুর মির্জাপুর বাজারে কালিকাপুর ইউনিয়নের মদনডাঙ্গা ও আহসানগঞ্জ ইউনিয়নের বজ্রপুর গ্রামের মো: আবদুল মজিদ মণ্ডল জানান, বীজতলা লাল এবং শুকিয়ে যাওয়ার কথা। পাশাপাশি জানালেন, তীব্র শীতে মাঠে নামতে পারছেন না দিনমজুররা। তাই ইরি বেরো চাষের গতি থমকে গেছে। শীত না কমলে মাঠে নামতে পারবেন না কৃষকরা।

এ ব্যাপারে জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ঘন কুয়াশা আর শীতের কারণে সূর্যের আলো না থাকায় বীজতলাগুলো লালচে হচ্ছে। এখনো বীজতলায় বড় ধরনের তেমন ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে না। আবহাওয়া কয়েক দিনের মধ্যে ভালো হয়ে গেলে যেসব বীজতলার চারাগাছ হলুদ ও লালচে হয়ে গেছে, সেগুলো আবারো স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু শৈত্যপ্রবাহ দীর্ঘস্থায়ী হলে বীজতলার চারাগাছ নষ্ট হয়ে কিছুটা ক্ষতি হতে পারে। তবে মাঠকর্মীরা মাঠপর্যায়ে থেকে বীজতলাসহ আক্রান্ত রবিশস্য নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও কৃষকদের করণীয় বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

শীত ও কুয়াশায় শুকিয়ে বিবর্ণ হচ্ছে বোরো বীজতলা

আপডেট টাইম : ০৩:৩০:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ জানুয়ারী ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রচণ্ড শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে শস্যভাণ্ডার খ্যাত নওগাঁয় এবার ইরি বোরো চাষ থমকে দাঁড়িয়েছে। অব্যাহত শৈত্যপ্রাবাহ আর ঘন কুয়াশায় বোরো বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বীজতলার চারা গাছগুলো লালচে আর হলুদ হয়ে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। ফলে কৃষকেরা সময়মতো বোরো আবাদ করতে পারবে কি না তা নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কৃষিকর্মকর্তারা বলছেন, চলমান শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের পর্যাপ্ত আলো না পাওয়ায় বীজতলার চারা গাছগুলো ‘কোল্ড ইনজুরি’তে আক্রান্ত হয়ে মরে যাচ্ছে। এদিকে তীব্র শীতের কারণে দিনমজুররা মাঠে নামতে পারছেন না। তাই নির্দিষ্ট সময়ে ইরি বোরো রোপণে দিন দিন ভাটা পড়ছে। জেলার আত্রাই, রানীনগর, মান্দাসহ আগাম ইরি-বোরো চাষাবাদ হয়ে থাকে।

প্রতিবছর ঠিক এই সময়ে ইরি বোরো চাষে কৃষকরা বীজতলা থেকে বীজ উত্তোলন, দিনরাত সেচ পাম্প খোলা এবং চারা রোপণে ব্যস্ত দেখা গেলেও এবার মাঠে সে দৃশ্য খুব কম চোখে পড়ছে।

সরেজমিন আত্রাই উপজেলার শাহাগোলা ইউপিসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় ৬০ শতাংশ ইরি বোরো বীজতলা শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বাড়েনি। লালচে হয়ে অনেক ক্ষেত্রেই শুকিয়ে যাচ্ছে। মাঠে কৃষকদের ইরি বোরো রোপণ করতে দেখা যাচ্ছে খুব কমই। সেচ পাম্পগুলো অল্পই চালু রয়েছে। অথচ এ মওসুমে মাঠে মাঠে ইরি বোরো রোপণে কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত কৃষকদের ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। দিন-রাত সেচ পাম্পগুলো খোলা থাকত। ট্রাক্টরে জমি চাষের দৃশ্য ছিল অহরহ। সকালে বীজতলা থেকে চারা ওঠাতে ব্যস্ত থাকত কৃষাণ-কৃষাণীরা।

এ ব্যাপারে উপজেলার শাহাগোলা গ্রামের কৃষক আজাদ আলী সরদার জানান, তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে ইরি বোরোর চারা বড় হচ্ছে না। লালচে রঙ ধরে শুকিয়ে যাচ্ছে। চারাগুলো দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। দুর্বল চারায় ফলন ভালো হবে না।

মহাদেবপুর উপজেলার উত্তরগ্রাম এলাকার কৃষক উজ্জ্বল হোসেন জানান, অন্যান্য বছর এসময় দিনমজুর হিসাবে মাঠে ব্যস্ত থাকলেও শীতের কারণে বর্তমানে ইরি বোরো রোপণ করা যাচ্ছে না। প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারণে কিছুক্ষণ রোপণ করার পর হাতে আর কাজ করার মতো অনুভূতি পাওয়া যায় না। তাই বসে আছি। ওই গ্রামের সেচপাম্পের মালিক মানিক সরকার জানান, কৃষকরা মাঠে নামছেন না। তাই জমির মালিকরাও ইরি বোরো চাষের জন্য জমি তৈরি করছেন খুব কম। এ কারণেই প্রায় সময় সেচপাম্প বন্ধ থাকছে। আগে এই সময়ে দিন-রাত সেচ পাম্প খোলা থাকত।

উপজেলার ভবানীপুর মির্জাপুর বাজারে কালিকাপুর ইউনিয়নের মদনডাঙ্গা ও আহসানগঞ্জ ইউনিয়নের বজ্রপুর গ্রামের মো: আবদুল মজিদ মণ্ডল জানান, বীজতলা লাল এবং শুকিয়ে যাওয়ার কথা। পাশাপাশি জানালেন, তীব্র শীতে মাঠে নামতে পারছেন না দিনমজুররা। তাই ইরি বেরো চাষের গতি থমকে গেছে। শীত না কমলে মাঠে নামতে পারবেন না কৃষকরা।

এ ব্যাপারে জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ঘন কুয়াশা আর শীতের কারণে সূর্যের আলো না থাকায় বীজতলাগুলো লালচে হচ্ছে। এখনো বীজতলায় বড় ধরনের তেমন ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে না। আবহাওয়া কয়েক দিনের মধ্যে ভালো হয়ে গেলে যেসব বীজতলার চারাগাছ হলুদ ও লালচে হয়ে গেছে, সেগুলো আবারো স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু শৈত্যপ্রবাহ দীর্ঘস্থায়ী হলে বীজতলার চারাগাছ নষ্ট হয়ে কিছুটা ক্ষতি হতে পারে। তবে মাঠকর্মীরা মাঠপর্যায়ে থেকে বীজতলাসহ আক্রান্ত রবিশস্য নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও কৃষকদের করণীয় বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করছেন।