হাওর বার্তা ডেস্কঃ সারা দেশে শীতের তাপমাত্রার সামান্য উন্নতি হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গা শীতার্ত মানুষকে রক্ষা করতে অভিযান শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ।
ভালুকা (ময়মনসিংহ) : ময়মনসিংহের ভালুকায় উপজেলা উথুরা ইউনিয়নের হাতিবেড় গ্রামের মৃত আব্বাস আলীর স্ত্রী কুশি বেগম (৪৫) শীত নিবারণ করতে গিয়ে আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। জানা গেছে, গত শনিবার কুশি বেগম রাতে ঘুমানোর সময় বিছানার পাশে মাটির পাতিলে কয়লার আগুন জ্বালিয়ে ঘর গরম রাখতে চেয়েছিলেন। ঘুমিয়ে পড়লে তার শরীরের কাপড়ে আগুন লেগে যায়। পরে তিনি জেগে উঠে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন, ততক্ষণে পুরো শরীরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তার শরীরের বেশির ভাগ অংশ পুড়ে যায়। পরে তাকে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল, গত সোমবার রাতে তার মৃত্যু ঘটে।
দিনাজপুর : দিনাজপুরে গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জেলার আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, আগামী দু-এক দিনের মধ্যে এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। দিনাজপুর হাড় কাঁপানো শীতে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীকুলও কাবু হয়ে পড়েছে। কাজকর্ম করতে না পারায় খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে চরম খাদ্য সংকটর রয়েছে এসব মানুষ।
এদিকে, দিনাজপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মকলেছুর রহমান জানান, দিনাজপুর জেলায় এ পর্যন্ত ৬৮ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে আরো এক লাখ কম্বল চেয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে বার্তা পাঠানো হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা : গতকাল চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র শীত ও ঠাণ্ডা বাতাসে ব্যাহত হচ্ছে চুয়াডাঙ্গার সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। এলাকার মোড়ে মোড়ে ও চায়ের দোকানে শীত নিবারণের চেষ্টায় খড়কুটো জ্বালিয়ে উত্তাপ নিতে দেখা গেছে নিম্ন আয়ের মানুষদের। এখন চলছে বোরো মৌসুম। বোরো মৌসুমে কৃষকরা যে বীজতলা তৈরি করেছেন সেই বীজতলা তীব্র কুয়াশায় নষ্ট হতে চলেছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. শামিম কবীর জানান, গত এক সপ্তাহে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ডায়রিয়া ও ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে আট শতাধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে শিশু ও বয়স্ক রোগীই বেশি।
নন্দীগ্রাম (বগুড়া) : পাঁচ দিন ধরে তীব্র শীতে কাঁপছে বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলা। হিমেল হাওয়ায় শীতের তীব্রতা অনুভূত হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি। জবুথবু হয়ে পড়েছে জনজীবন। শিশু ও বৃদ্ধরা শীতবাহিত রোগ ঠাণ্ডা, সর্দি, কাশি শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শীতকে ঘিরে লেপ-তোষকের দোকানগুলো পা ফেলার জায়গা নেই, কারিগররা এখন ব্যস্ত সময় পার করছের। চালকরা বলেন, রাতের ভাগে কুয়াশার মধ্যে দুর্ঘটনার আশঙ্ক বেশি থাকে।
কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ) : গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে তীব্র শীতে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। শৈত্যপ্রবাহ আর কনকনে শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উপজেলার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় নাকাল হয়ে পড়েছে হতদরিদ্র-ছিন্নমূল মানুষ। শীতের কবল থেকে বাঁচার জন্য গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারণে মানুষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না। ফলে সন্ধ্যার পর হাট-বাজার, রাস্তাঘাটে লোকের উপস্থিতি কম।
গৃহপালিত পশুপাখি শীতে কাহিল হয়ে পড়েছে। তবে আগের মতো গাছিদের কর্ম ব্যস্ততা দেখা যায়নি। এদিকে, বোরো ধানের রোপণকৃত চারা লালচে রং ধারণ করতে শুরু করেছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।
মধুপুর (টাঙ্গাইল) : টাঙ্গাইলের মধুপুরে ঠাণ্ডা বাতাসের তীব্র শীতে থরথর করে কাঁপছে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে ছিন্নমূল মানুষ এবং অতি দরিদ্র ও প্রান্তিক পরিবারের বৃদ্ধ ও শিশুরা পড়েছে বিপাকে। মধুপুরে মাঠ-ঘাট ক্ষেত-খামারে শ্রমিকরা পড়েছেন বিপাকে। টানা তিন দিন ধরে শৈতপ্রবাহ বইছে। তীব্র ঠান্ডার ফলে নিম্ন আয়ের লোকজন পড়েছে চরম দুর্ভোগে। ঠাণ্ডা বাতাস ও ঘন কুয়াশায় কাবু করে ফেলেছে সর্ব শ্রেণীর মানুষকে।
রাজশাহী : শীতের কাপুনিতে কাবু হয়ে পড়েছেন পদ্মা পাড়ের মানুষ। টানা শৈত্যপ্রবাহে ছিন্নমূল ও কর্মজীবী মানুষ যারপরনাই দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। গতকাল রাজশাহী অঞ্চলের তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও কমেনি শীতের দাপট।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক শরিফুল ইসলাম জানান, গতকাল সকাল ৬টায় রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১০০ শতাংশ। তবে সকাল সাড়ে ৮টায় তা আরো নেমে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়িয়েছে। এটাই দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর আগের দিন গত সোমবার সকাল ৯টায় রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার আগের দিনও ছিল একই তাপমাত্রা।