হাওর বার্তা ডেস্কঃ সম্প্রতি তিন তালাক নিষিদ্ধ করে আইন পাস হয়েছে ভারতে। তিন তালাকের শিকার নারীরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনের পর আইনটি পাস হয়। নতুন এ আইনকে নারীদের জন্য ইতিবাচকভাবেই ধরে নেওয়া হয়েছিল। তবে ইতোমধ্যেই সেই আইন নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
আগে তিনবার তালাক শব্দটি উচ্চারণের মাধ্যমে স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিতেন স্বামীরা। ভারতে মুসলিমরা দীর্ঘদিন ধরে সেই চর্চা করে আসছিলেন। তিন তালাকের ফলে হাজার হাজার নারী ঘরছাড়া, পরিবারহারা হয়ে পড়েছিলেন।
এমনকি সামান্য ভুলের পরে স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিতেন স্বামী। স্বজনের মুখ দিয়ে তালাক শব্দটি তিনবার বলিয়ে এমনকি ফোনেও তালাক দেওয়ার রেওয়াজ চালু হয়েছে।
কিন্তু ২০১৭ সালের শেষের দিকে এসে পাস হওয়া নতুন আইনের ফলে তিন তালাক শাস্তিযোগ্য অপরাধ হয়ে যায়। তালাক বন্ধে সেই আইন কার্যকর হবে বলেই ভাবা হয়েছিল। নারীবাদীরাও স্বাগত জানিয়েছিলেন সরকারের সিদ্ধান্তকে।
তিন তালাকের শিকার কোনো নারী আইনের আশ্রয় নিলে তার স্বামীর সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়। তবে মুসলমান সমাজে সেই আইন ইতোমধ্যেই সমালোচিত হচ্ছে।
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এ আইনের ফলে মানুষের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। পারিবারিক কলহ কিংবা অন্য কোনো কারণে দাম্পত্য জীবন চালিয়ে যেতে অনিচ্ছুক কেউ এ আইনের ফলে বাধ্য হয়ে সংসার করছেন। সেটা একেবারেই অনুচিত। এতে করে সন্তানদের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
তাছাড়া সেই সম্পর্ক মধুর না হয়ে অন্য কোনো অপরাধ সংঘটিত হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। এ আইনের ফলে পুরুষদের হয়রানি করারও আশঙ্কা রয়েছে। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, নারীরা জেনে গেছেন, চাইলেও তাদের আর তিন তালাক দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিতে পারবেন না। সে কারণে বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারেন তারা।
অন্যদিকে ইসলামি চিন্তাবিদরা বলছেন, আইন করে কখনো তিন তালাক বলা বন্ধ করা যাবে না। অথচ স্বামী-স্ত্রী একত্রে বসবাস করবেন; ফলে তারা হয়তো ভাবতে পারেন, তালাক তো হয়েই গেছে, ফলে তাদের পারিবারিক সম্পর্ক মধুর না হয়ে রূঢ় হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আইনের ফলে তিন তালাক বন্ধ হয়ে গেছে, বিষয়টি সে রকমও নয়। জানা গেছে, এখনো তিন তালাকের শিকার হচ্ছেন অনেক নারীরা। সম্প্রতি তিন তালাকের শিকার নারীরা আদালতে মামলার পর সেই মামলায় তাদের স্বামীরা জামিন নেওয়ারও খবর পাওয়া গেছে।
ভারতের অনেক রাজনীতিবিদই জানিয়েছেন, নারীদের হেয় করে দেখার কিছু নেই। এই আইনের ফলে মনে হচ্ছে, স্বামী সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চান না, অথচ ধরেবেঁধে সংসার করছেন স্ত্রী।
ধর্মীয় নেতারা বলছেন, তিন তালাকের পর স্ত্রী চাইলে মামলা করে স্বামীকে হয়তো তিন বছরের জন্য কারাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারেন, তবে তালাক তো হয়ে যাচ্ছে। তবে সান্ত্বনা হলো, আইনের ফলে তিন তালাকের সংখ্যা কমছে।