আজ ৫ সেপ্টেম্বর। সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম সাইফুর রহমানের ৬ষ্ট মৃত্যুবার্ষিকী। মরহুম এম. সাইফুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষ্যে দলীয় এবং পারিবারিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে।
সকালে মরহুমের কবরে ফাতেহা পাঠ ও পুষ্পস্তবক অর্পন শেষে বিকেলে মরহুমের গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার বাহারমর্দ্দানে পারিবারিকভাবে মিলাদ-মাহফিল, দোয়া ও শিরনী বিতরণ করা হবে। বাদ জোহর সিলেটের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআনে খতম, মিলাদ মাহফিল ও ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।
মরহুম এম. সাইফুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত মিলাদ-মাহফিলে অংশগ্রহণ করার জন্য জেলা ও বিভাগব্যাপী অনুরাগী মহলকে উপস্থিত থাকার জন্য পারিবারিকভাবে আহব্বান জানানো হয়েছে।
এম সাইফুর রহমান ছিলেন মানুষের হৃদয়ের মানুষ। ব্যক্তিগত জীবনেও ছিলেন সাদামাটা। চাওয়া-পাওয়ার দ্বন্দ্বের অস্থিরতা ছিল না তার। উচ্চাকাঙ্খা, উচ্চবিলাসিতা পছন্দ ছিল না একদমই। বলতেন মারপ্যাঁচের জটিলতা ছাড়াই সহজ সরল আর ইংরেজিমিশ্রিত আঞ্চলিক ভাষায় সোজা কথা।
এ কারণেই দেশ-বিদেশে সব শ্রেণীর মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা ছিল তার। তিনি ছিলেন দেশের একমাত্র প্রথম অর্থমন্ত্রী যিনি একনাগাড়ে ১২ বার সংসদে বেশ সফলতার সঙ্গে বাজেট পেশ করেছেন। কর্মে তার অনন্য গুণ তিনি উন্নয়নের যে স্বপ্ন দেখতেন তা বাস্তবায়নও করতেন। এটাই তার অবিচল আস্থা, বিশ্বাস আর কাজের প্রতি নিখাদ আন্তরিকতা ও কর্তব্যকর্মে দায়িত্বশীলতার নজির।
নিজ জন্মস্থান মৌলভীবাজারসহ পুরো সিলেট বিভাগেই রয়েছে তার চোঁখ ধাঁধানো উন্নয়নের ছোঁয়া। কোথায় নেই এই কর্মচঞ্চল মানুষটির কৃতকর্মের বাস্তবতা। কিন্তু তারপরও তার অনেক দেখা স্বপ্ন আজও বাস্তবায়ন হয়নি।
সংক্ষিপ্ত জীবনী: জন্ম ১৯৩২ সালের ৬ইঅক্টোবর, মৌলভীবাজারের বাহারমর্দনে। তাঁর পিতার নাম মোহাম্মদ আবদুল বাছির, মাতার নাম তালেবুন নেছা। ৩ ভাইয়ের মধ্যে বড় তিনি। মাত্র ৬ বছর বয়সে তার পিতা মারা যান। সে সময়ে তার অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেন চাচা মোহাম্মদ সফি। শিক্ষাজীবন, গ্রামের মক্তব ও পাঠশালা শেষ করে তিনি ১৯৪০ সালে জগৎসী গোপালকৃষ্ণ উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এরপর ১৯৪৯ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে মেট্টিকুলেশনে উত্তীর্ণ হন।
সিলেটের এমসি কলেজ থেকে আই কম পাস করে ১৯৫১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য লন্ডনে চলে যান। সেখানে পৌঁছার পর মত পাল্টে যায় তার। ব্যারিস্টারির পরিবর্তে পড়েন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সিতে।
১৯৫৩-৫৮ সময়কালে পড়াশোনার পর ১৯৫৯ সালে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলশ ফেলোশিপ অর্জন করেন। এ ছাড়া তিনি আর্থিক ও মুদ্রানীতি এবং উন্নয়ন অর্থনীতিতে বিশেষায়িত শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৬০ সালের ১৫ জুলাই বেগম দুররে সামাদ রহমানের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ৩ পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক।
২০০৩ সালে তার স্ত্রী ইন্তেকাল করেন। তিনিও ২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার ঢাকা-সিলেট মহা সড়কের খড়িয়ালা নামক স্থানে এক মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হন। তাঁর শেষ ইচ্ছানুযায়ী বাহারমর্দনে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
সাইফুর রহমান দীর্ঘদিন দেশের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন ছাড়াও দেশ-বিদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতেও নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন কৃতিত্বের সঙ্গে। তার জীবদ্দশায় দেশ ও বৃহত্তর সিলেট নিয়ে যে উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা করেছিলেন, তার অনেকগুলো বাস্তবায়ন হলেও পুরোটা বাস্তবায়ন করতে পারেন নি। হঠাৎ এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিভে যায় তার জীবন প্রদীপ, স্তব্ধ হয়ে যায় তার দেখা উন্নয়ন মহাপরিকল্পনার স্বপ্ন। তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র সাবেক এমপি ও মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমান জানান, তার পিতা সব সময়ই মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পছন্দ করতেন। বৃহত্তর সিলেটে তিনি যে দৃষ্টান্তকারী উন্নয়ন করে গেছেন এটিই তার বড় প্রমাণ। তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এবং আমি জনপ্রতিনিধি হলে আমার পিতার দেখা উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করবো।