দেশের অভিনয় মাধ্যমের এক জনপ্রিয় নাম তানিয়া আহমেদ। টিভি নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি চলচ্চিত্রেও রয়েছে তার বিচরণ। তবে চলতি বছর থেকে নামের পাশে জুড়েছেন নতুন তকমা। আর তাহলো চলচ্চিত্র নির্মাতা। ‘গুড মর্নিং লন্ডন’ নামের একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ হয় তার। বর্তমান ব্যস্ততা ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে আজকের ‘আলাপন’-এ কথা বলেছেন তানিয়া আহমেদ। তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মারুফ কিবরিয়া
এখন ব্যস্ত আছেন কি নিয়ে?
এ মুহুর্তে ছবির নির্মাণ পরবর্তী কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছি। নিয়মিত সময় দিতে হচ্ছে সেখানে। নির্মাণ শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এর পেছনে যথেষ্ট পরিশ্রম করে যাচ্ছি।
এটা তো আপনার পরিচালনায় প্রথম চলচ্চিত্র। প্রত্যাশা কতটুকু?
আমি আমার জায়গা থেকে অনেক বেশি আশাবাদি। তবে দর্শক হচ্ছেন এর মূল প্রাণ। আমি যদি তাদের ভাল একটি ছবি উপহার দিতে পারি তবেই বুঝবো কাজটি ভাল হয়েছে। আমি দিনরাত ছবিটির পেছনে সময় দিচ্ছি। একটি পরিপূর্ণ কমার্শিয়াল ছবি নির্মাণ করেছি। যার মধ্যে দর্শক সব ধরণের রসদ খুঁজে পাবেন। তাই সবমিলিয়ে বলবো ছবিটি নিয়ে আমার প্রত্যাশার মাত্রা একটু বেশিই।
প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণের অভিজ্ঞতার কথা শুনতে চাই…
এ এক দারুণ অভিজ্ঞতা। আমরা সাধারণত দেখি ছবির গানের দৃশ্যই দেশের বাইরে নির্মাণ হয়। কিন্তু আমার এ ছবিটির সম্পূর্ণ কাজটাই লন্ডনে হয়েছে। অনেক ভাল সময় কেটেছে সেখানে। আমার ইউনিটে যারা ছিল সবাই অনেক সহযোগী পরায়ন। আমি কাজটি স্বাচ্ছন্দে করতে পেরেছি। আর ভালভাবে কাজটি শেষ করার পেছনে ইমপ্রেস টেলিফিল্মের অবদানটাও কম নয়। তাদের পূর্ণ সহযোগিতা ছিল। সবমিলিয়ে প্রথম হিসেবে কোন ঝাামেলা পোহাতে হয়নি আমাকে।
এ ছবিটির পর নতুন কিছু নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে কি?
চলচ্চিত্র নির্মাণে আসবো অনেকদিনের পরিকল্পনা। অবশেষে সেটা বাস্তবে রূপ দিয়েছি। প্রথম ছবি নির্মাণের পর এখন নির্মাণ ব্যাপারটি নেশায় পরিণত হয়েছে। এখন সামনে আরও কিছু ছবি নির্মাণ করতে চাই। তবে এখনও সব চূড়ান্ত হয়নি।
টিভি নাটকের ব্যস্ততা কি?
চ্যানেল আইতে ‘অর্কিড’ নামের একটি নতুন ধারাবহিক প্রচার হচ্ছে। এছাড়া মাছরাঙায় আরও একটি নতুন ধারাবাহিক প্রচারের অপেক্ষায় রয়েছে। পাশাপাশি প্রচার চলতি অন্য নাটকগুলো তো রয়েছেই।
ঈদের নাটকে কাজ করছেন?
ঈদের জন্য খুব বেশি কাজ করছি না। এরই মধ্যে দুটির কাজ করছি। সামনে ‘সিকান্দার বক্স’-এর শুটিং রয়েছে। আসলে ‘গুডমর্নিং লন্ডন’-এর পোস্ট প্রোডাক্টশনের পেছনেই এখন বেশি সময় দিচ্ছি।
‘সিকান্দার বক্স’-এবারই শেষ হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে সিক্যুয়াল এ নাটকটির সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
আমার কাছে ‘সিকান্দার বক্স’ নাটকটির শুটিং ইউনিটকে কখনোই শুধু শুটিং ইউনিট মনে হয়নি। একটি পরিবার মনে করেছি বরাবর। এ পরিবারের সঙ্গে ছিলাম অনেকদিন। এখানে বিশেষত সাগর জাহানের কথা না বললেই নয়। নির্মাতা হিসেবে যথেষ্ট গুণী সে। যেমন চমৎকার লেখে তেমনি নির্মানশৈলীও অসাধারণ। আর ব্যাক্তি সাগরের কথা তো বলাই হয়নি। খুব ভাল একটি ছেলে। পাশাপাশি মোশাররফ করিম তো আছেই। আমার খুবই ভাল একজন বন্ধুৃ সে। সিকান্দার বক্সের পুরো পরিবারে যারা ছিলেন সবার সঙ্গে আমার সম্পর্কটা দারুণ। তাদের সবাইকে মনে থাকবে অনেকদিন। তবে আমি আশা করবো, ‘সিকান্দার বক্স’ শেষে সাগর জাহান আরও ভিন্নধর্মী কিছু নিয়ে আসুক।
বর্তমান টিভি নাটক নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?
দেখুন, এখন চ্যানেল অনেক হয়েছে। সে সঙ্গে নির্মাণের সংখ্যাও বেড়েছে অনেক। সে জায়গায় কাজের সংখ্যা বাড়লে কোয়ালিটি কিছুটা কমে যাবে সেটা খুব স্বাভাবিক। অনেক ভাল নির্মাতা এসেছে। যারা বয়সে তরুণ। তাদের অনেকেই খুব মেধাবী। কিন্তু ভাল বাজেট না থাকায় তারা নিজেদের মেলে ধরতে পারছেন না। একটা ভাল সুযোগের দরকার। তাহলে কাজের মান নিয়ে যে প্রশ্ন ওঠে মাঝে মাঝে সেটা হয়তো আর শোনা যাবে না।
অতিমাত্রায় বিজ্ঞাপন দর্শক বিরক্তির কারণ বলে একটা বিতর্ক প্রায়ই ওঠে। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কি?
অতিমাত্রায় বিজ্ঞাপন প্রচার না করে কি করবে? বিজ্ঞাপন প্রচার না করলে চ্যানেল চলবে কি করে। বিজ্ঞাপনের দাম এখন আর আগের মতো পাওয়া যায় না। অনেকে এখানে চ্যানেলকে দোষ দিয়ে থাকেন। আসলে এখানে চ্যানেল পুরোপুরি দায়ী নয়। আগে কোম্পানিগুলো বা এজেন্সি থেকে বিজ্ঞাপন নিয়ে চ্যানেল যে আয় করতো এখন সেটা পারছে না। আর যে কারণে তাদের অধিক বিজ্ঞাপন প্রচার করতে হয়।
এমন অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কি বলে মনে হয়?
দেখুন, এটা ঠিক যে, মিডিয়াতে আমরা এখন একটা খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এখান থেকে বেরিয়ে আসতেও হবে। আর সে জন্য সবার একটা সিস্টেমের মধ্যে আসতে হবে। তাহলে হয়তো ইতিবাচক কিছু প্রত্যাশা করা সম্ভব। আর সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে। কারণ খারাপ সময় স্থায়ী হয় না। চলচ্চিত্রে কি একসময় খারাপ অবস্থা ছিল না? সেখান থেকে তো এখন অবস্থা অনেক ভাল হয়েছে। তাই চলচ্চিত্রের মতো নাটকেও একদিন সুসময় আসবে বলে প্রত্যাশা করছি।