হাওর বার্তা ডেস্কঃ কৃষি উন্নয়নে প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন প্রযুক্তি। এমন একটি নতুন প্রযুক্তি ব্যবস্থা হলো ড্রাম সিডার। বীজতলা তৈরি না করে সরাসরি খেতে ধান বপনের এ পদ্ধতিটি কৃষকের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগাচ্ছে। ধান চাষে এ পদ্ধতিতে অধিক লাভ দেখে দিন দিন এর প্রতি ঝুঁকছেন কৃষক। শেরপুরের সব উপজেলায় কয়েক বছর ধরে এ প্রযুক্তি ব্যবহারে ধান চাষির আগ্রহ বেড়েই চলছে। যে কোনো ধান চাষে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এ ড্রাম সিডারের ব্যবহার। ড্রাম সিডারে ধান চাষ করায় উৎপাদন খরচ ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কম লাগছে।
নকলার টালকী ইউনিয়নের রুনিগাঁও গ্রামের কৃষক শাহাব উদ্দিন ও গাজী মিয়া, পৌরসভার চরকৈয়া এলাকার কিষানি ইয়াছমিন ও কৃষক ফরিদুল, কুর্শাবাদাগৈড় এলাকার কৃষক লিয়াকত আলী, ভূরদীর কৃষক ছাইদুল ও কামাল, পোলাদেশীর আবদুুল হালিম, মোজার বাজার এলাকার কিতাব আলীসহ অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগের মতো বীজতলায় চারা উৎপাদন করে, পরে ধান খেতে রোপণের চেয়ে ড্রাম সিডারের মাধ্যমে সরাসরি ধান খেতে বীজ বপন করায় শ্রমিক, সময় ও উৎপাদন ব্যয় বহুলাংশে কম লাগে। ফলনও ভালো পাওয়া যায়।
কৃষক শাহাব উদ্দিন ও গাজী মিয়া জানান, এ প্রযুক্তিতে আগের চেয়ে ফলন ভালো হয়, যত্ন করাও সহজ হয়। খরচ কয়েক গুণ কম লাগে। কৃষক লিয়াকত আলী ও ছাইদুল জানান, ড্রাম সিডারে ধান রোপণ করায় কয়েকবার সেচ বেশি দিতে হয়। সেচের খরচ কিছু বাড়বে। তবুও আগের তুলনায় উৎপাদন খরচ অনেক কম থাকবে বলে তারা জানান।
তারা আরও জানান, জমি ও পরিবেশ ভেদে আউশ, আমন ও বোরো তিন মৌসুমেই এ প্রযুক্তিতে ধান চাষ করা যায়, তবে আউশ ও বোরো ধান চাষে এটি বেশি উপযোগী। ধান রোপণের জন্য জমি যেভাবে কাদা করতে হয় সেভাবেই জমি উত্তমরূপে চাষ ও মই দিয়ে কাদাময় করে নিয়ে তারপর ড্রাম সিডারের মাধ্যমে ধান রোপণ করতে হবে। বোরো মৌসুমে নভেম্বরের শেষার্ধ থেকে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে এবং আমন মৌসুমে পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা আছে এমন উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে জুনের শেষার্ধ থেকে জুলাইয়ের প্রথমার্ধে বীজ বপন করা উত্তম। তবে জমির কোনো স্থানে যেন পানি জমে না থাকে। ইউরিয়া এলসিসিভিত্তিক প্রয়োগ করতে পারলে সুফল পাওয়া যায়।
ধানগাছ একটু বড় হলে রোপা পদ্ধতির মতোই পানি সেচ দিতে হয়। বোনা পদ্ধতির খেতে আগাছা সামান্য বেশি হয়। তাই নিড়ানি বা উইডার দিয়ে আগাছা দমন সহজ হয়। এ ক্ষেত্রে ব্রি-উইডার বেশ উপযোগী। তবে উইডার প্রয়োগের পরও হাত দিয়ে অবশিষ্ট আগাছা পরিষ্কার করে দেয়া জরুরি। এ ক্ষেত্রে বোরো বীজ বপনের ৭ থেকে ১০ দিন এবং আমন ও আউশ মৌসুমে ৪ থেকে ৬ দিনের মধ্যে প্রতি ৫ শতাংশ জমিতে ২০ থেকে ২৫ মিলিলিটার রনস্টার বা ১০ থেকে ১২ মিলিলিটার রিফিট ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
আগাছানাশক ব্যবহারের পর ৪ থেকে ৫ দিন খেতে ছিপছিপে দাঁড়ানো পানি থাকতে হবে। সঠিক পরিচর্যায় ড্রাম সিডারে বোনা ধানের ফলন রোপা ধানের তুলনায় শতকরা ১০ থেকে ২০ শতাংশ বেশি হতে পারে। এ পদ্ধতিতে ধান চাষ করলে রোপা পদ্ধতির চেয়ে ১২ থেকে ১৫ দিন আগে পাকে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবদুল ওয়াদুদ জানান, তারা কয়েক বছর ধরে গ্রামে গ্রামে ঘুরে সিডারের মাধ্যমে ধান চাষে কৃষককে পরামর্শ দিয়ে আসছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হুমায়ুন কবীর জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১২ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তার মধ্যে ২৫ হেক্টর জমিতে ড্রাম সিডারের মাধ্যমে ধান চাষ করা হচ্ছে। বাকি আবাদের জন্য ৮০৫ হেক্টর জমিতে বীজতলা করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ড্রাম সিডারের মাধ্যমে ধান চাষের উৎপাদন ব্যয় কম ও উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষক লাভবান হচ্ছেন।
সম্প্রতি নকলার রুনিগাঁও এলাকায় ড্রাম সিডারের মাধ্যমে ধান চাষের এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) গাজীপুরের মহাপরিচালক ড. মোঃ শাহজাহান কবীর এবং বিশেষ অতিথি ব্রি গাজীপুরের এসএসও ড. মোঃ আবদুল কাদের ও ড. বিশ্বজিত কর্মকার এবং শেরপুর খামারবাড়ির উপপরিচালক কৃষিবিদ আশরাফ উদ্দিন তাদের বক্তব্যে জানান, ড্রাম সিডারের মাধ্যমে ধান চাষে কৃষক হবেন অধিক লাভবান, আর কৃষি অর্থনীতি আরও দ্রুত সমৃদ্ধ হবে।