প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও তার পরিবার সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘কাল্পনিক ও মানহানিকর’ তথ্য দিয়েছেন অভিযোগ করে এজন্য তাকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ক্ষমা না চাইলে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছেন তিনি। আজ সকাল ১১টায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
গতকাল গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলাসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বক্তব্য রাখেন। ওই বক্তব্যের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে সংবাদ সম্মেলন ডাকে বিএনপি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কথিত পাচারকৃত সম্পদের বর্ণনা এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত কথিত সম্পদ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সংবাদ সম্মেলনে যে বক্তব্য রেখেছেন তা সর্বৈব মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। কথিত এই সব দুর্নীতির যে কল্পকাহিনী তার মূল উদ্দেশ্য দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া ও তাঁর পরিবারের ভাবমূর্তি নষ্ট করা এবং রাজনৈতিকভাবে তাকে জনগণের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করা।’

‘আমরা অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিএনপি চেয়ারপারর্সন খালেদা জিয়া ও তার সন্তানদের সম্পর্কে অসত্য তথ্য প্রচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার এবং তার পরিবারকে হেয় প্রতিপন্ন করে ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকুন। মিথ্যা তথ্য প্রচার বন্ধ করুন এবং এই মানহানিকর মিথ্যা তথ্য প্রচারের জন্যে ক্ষমা প্রর্থণা করুন। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমরা বাধ্য হব।’

তিনি বলেন, ‘জিয়া পরিবারের কথিত দুর্নীতি ও দেশের বাইরে অবৈধ সম্পত্তি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য ‘শিষ্টাচার বহির্ভূত’। এই ধরনের মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট বক্তব্য শুধু অশালীন নয়, এটা বেআইনি ও শাস্তিযোগ্য।’

‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বা তার পরিবারের কারো বিরুদ্ধে বিদেশে সম্পদ পাচার অথবা বিনিয়োগ করার কোন অভিযোগ আজ পর্যন্ত প্রমাণিত হয়নি। ফখরুদ্দিন ও মঈনউদ্দিন সরকার এবং শেখ হাসিনার অবৈধ সরকার তন্ন তন্ন করে সারা বিশ্বে খোঁজ করেও আজ পর্যন্ত কোন সম্পদের অস্তিত্ব পায় নি,’ বলেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে দূর্নীতি এবং সম্পদের কল্প কাহিনী তৈরি করে জোর করে গণমাধ্যমকে দিয়ে তা প্রচারের অপচেষ্টা শুধু শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, রাজনৈতিক সংকীর্নতা, অন্তসারশূণ্যতা ও দেউলিয়াপনাই প্রমাণ করে।’

‘প্রধানমন্ত্রীর এই ধরণের কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য শুধু রাজনীতিকে কলুষিত করছে তাই নয়, ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে রাজনীতিবিদ সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি করবে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি ও প্রতিবাদ করছি।’

সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘কাচের ঘরে বসে অন্যের ঘরে ঢিল ছুড়বেন না। উন্নয়ন, মেগা প্রজেক্টের নামে যে মেগা লুট করছেন তা জনগণ জানে। এদেশের পত্র-পত্রিকায়, বিদেশের পত্র-পত্রিকায় আপনাদের দলের মন্ত্রী, নেতা ও পরিবারে সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। আপনাদের মুখে সুনীতি, সুশাসন, সততা শুধু বেমানান নয়, হাস্যকর।’

খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের দুর্নীতি ও বিদেশে সম্পত্তি গড়ার যে তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে বলে বলা হচ্ছে তার কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে জানান মির্জা ফখরুল।

‘অত্যন্ত সুপরিকল্পিকভাবে আমাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন চালানো শুরু হয়েছে। উনি (প্রধানমন্ত্রী) যে তথ্য দিয়েছেন, তা জানতে আমরা গুগল সার্চ করেছি, সৌদি আরবে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু ওই ধরনের কোনো গণমাধ্যমের অস্তিত্ব পাই নি।’

খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলা চলমান থাকা অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এই বক্তব্যে বিচার প্রভাবিত হতে পারে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতির দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এর নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতাদের মধ্যে নজরুল ইসলাম খান, ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুর কবির খান, শামসুদ্দিন দিদার উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর