হাওর বার্তা ডেস্কঃ নেত্রকোনার হাওরঞ্চলে ফসল ডুবিয়েই ক্ষ্যান্ত হয়নি পানি। পুরো দমে বোরো আবাদের মৌসুম চললেও নেত্রকোনার হাওরগুলো থেকে এখনো সরছে না পানি।
জেলার খালিয়াজুরী হাওরের বোরো আবাদ হয়ে পড়েছে অনিশ্চিত। কৃষকরা পড়েছেন দুঃচিন্তায়। এ অঞ্চলের বেশীর ভাগ কৃষক সরকারের দেয়া সার বীজসহ অন্যান্য কৃষি প্রনোদনা পেলেও জমিতে বীজই ফেলতে পারছেন না। যে কারণে আবাদের সময়ও যাচ্ছে পিছিয়ে। এর মধ্যে অনেক কৃষি কার্ডধারীরা বঞ্চিত হচ্ছেন এসব প্রনোদনা থেকে।
এদিকে, স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তায় সরকারিভাবে বিনা মূল্যে কৃষি প্রনোদনা হিসেবে বীজ, সারসহ নগদ টাকা দেয়া হচ্ছে। এতে গত বছরের সমান পরিমান জমিই আবাদ করা সম্ভব। পানি দ্রুত নামছে। ব্রি-২৯ ধান বপনের সময় পার হয়ে গেলেও ব্রি-২৮ জাতের ধান বীজ বপনের সময় এখনও আছে।
এই ব্রি-২৮ জাতের ধান মাত্র তিনমাসে ফলন হয়। তাই এ বছর ব্রি-২৮ জাতের ধান বেশী করে আবাদ করা হবে। অল্প সময়েই এবার ভালো ফসল পাওয়ার আশা ব্যক্ত করেছেন নেত্রকোনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিলাশ চন্দ্র পাল।
সরেজমিন হাওর ঘুরে দেখা গেছে, গত বছর বোরো কাটার মৌসুমে বাঁধ ভাঙ্গা ঢলের পানিতে তলিয়ে যায় হাওরের শত ভাগ ফসল। এসব ফসল মার খাওয়া কৃষক এবার পড়েছে হাওরের পানি না সরার ভিন্ন এক সংকটে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে হাওরে পানি আসলেও আশ্বিন মাসে তা চলে যায়। কার্তিক-অগ্রাহায়নে পুরোদমে বোরো বীজ বপন শুরু হলেও এবার পানি না সরার ফলে হাওর পাড়ে ফসল আবাদে নামতে পারছেনা কৃষকেরা। পানি সরছেনা, ফলে কৃষকের প্রনোদনাও ভেস্তে যাচ্ছে। কিভাবে বপন করা যাবে বোরো বীজ এই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন হাওর পাড়ের কৃষকেরা।
কৃষক জানান, কার্তিক মাসের শেষে এ সকল জমি ভেসে উঠে। এতে বীজতলা ফেলা শেষ হয়ে যায় গ্রাহায়নের শুরুতেই। কিন্তু এবার পানিই নামছে না। অনেক জমির উপর দিয়ে এখনো নৌকা চলে। এমনি করে বীজের সময় চলে যাচ্ছে। আবাদের সময়ে বীজ বপন করে সময় শেষে আবাদ করলে কম সময় পাওয়া যাবে।
এদিকে ধান পাকতে পাকতে স্বাভাবিক নিয়মেও বর্ষাকালের পানিতে তলিয়ে যাবে ফসল। তার উপর আবার আজকাল সময়ের আগেই পানি চলে আসে।
কৃষক স্বস্তি ধর বলেন, এইযে বীজ নিয়ে বাড়ি ফিরছি তা লাগাবো কবে? হাওরের বেরী বাঁধের সুইসগেইটগুলো খোলা হয় না সময়মত। তার উপর বড় সমস্যা হচ্ছে ড্রেজিং ব্যবস্থা। নদীগুলো খনন না করার কারণে এমন সমস্যা হচ্ছে। এগুলো সরকারের ভেবে দেখা উচিৎ। কৃষক না বাঁচলে দেশ কেমন করে বাঁচবে। আর দেশ বাচাঁতে হলে সঠিক স্থানে সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করতে হবে।
আগাম বন্যা হতে ফসল বাঁচাতে হলে গতানুগতিক ধারার বেরী বাঁধে পয়সা খরচ না করে গতিপথ দেখে টেকসই স্থায়ী বাঁধ নির্মান করা হোক। আর বাঁধ নির্মানে দুর্নীতি বন্ধ হোক, তাহলেই কৃষক আর ফসল হারাবে না।
সূত্র: বিডি প্রতিদিন