ঢাকা ০২:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সীমান্ত হাটে গরু কেনাবেচায় চুক্তি চায় বাংলাদেশ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৩৮:০০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫
  • ৪০৪ বার

সীমান্ত হাটে গরু কেনাবেচায় ‘গবাদিপশু বাণিজ্য উন্নয়নবিষয়ক একটি প্রস্তাব’ ভারতকে দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
গ্লোবাল মিট নিউজ নামে একটি বার্তা সংস্থা বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে। এই বার্তা সংস্থা বিশ্বের মাংসবাজার বিষয়ে খবর প্রকাশ করে।
গত এপ্রিলে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফকে বাংলাদেশে গরু পাচারের ওপর কঠোর নজরদারির নির্দেশ দেয়। বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সালে ভারত থেকে বাংলাদেশে ২২ লাখ গরু আসে। বিজেপি সরকারের এই কঠোর অবস্থানের কারণে গত কয়েক মাসে ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু আসা প্রায় বন্ধ আছে। এর ফলে বাংলাদেশে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ।
এদিকে মাত্র তিন সপ্তাহ পরে উদ্‌যাপিত হতে যাচ্ছে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। ঈদে কোরবানির জন্য বাংলাদেশে প্রায় ২০ লাখ গরুর চাহিদা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু আসা প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মনোজ কুমার রায় জানান, আগামী বছর গবাদিপশু বাণিজ্য চুক্তি নবায়নের উদ্দেশ্যে একটি খসড়া সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে কাজ চলছে। নতুন চুক্তিতে চারটি সীমান্ত হাটে গবাদিপশু কেনাবেচার অনুমতি চাইবে বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে সীমান্ত হাটে বাণিজ্য পণ্য তালিকায় গবাদিপশু অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে এটি ভারতে বাণিজ্যিক পণ্য নয়। এটা খুবই স্পর্শকাতর বিষয়।’
এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বিজিবির হিসাব অনুসারে, প্রতিবছর গড়ে ২০ লাখ গরু ভারত থেকে আনা হয়। এ খাতে লেনদেনের পরিমাণ ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি।
সরকারি হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ২০১৪ সালে গরু আসে ২০ লাখ ৩২ হাজার আর ২০১৩ সালে ২৩ লাখ ৭৪ হাজার গরু আসে। অর্থাৎ মাসে প্রায় ২ লাখ করে গরু আসে। এর বাইরেও ভুটান, নেপাল ও মিয়ানমার থেকে বিভিন্নভাবে গরু-মহিষ আসে।
এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পরিদর্শনের পর হঠাৎ করে বাংলাদেশে গরু আসা কমে যায়। যেখানে জানুয়ারি মাসে ১ লাখ গরু আসে, সেখানে ফেব্রুয়ারি মাসে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৮ হাজার ৪৫০টিতে। মার্চ মাসে আসে ৪৪ হাজার ৯৪৫টি গরু।
সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এপ্রিল, মে, জুন ও জুলাই- এই চার মাসের কোনো মাসে ২০ হাজারের বেশি গরু আসেনি। আগস্ট মাসে প্রতিদিন ২ হাজারের মতো গরু এসেছে। আগে যেখানে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার গরু আসত।
অন্যদিকে ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে দেশে গরুর সংকট তৈরি হতে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অজয় কুমার রায় সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেন, সরকার ইতিমধ্যে বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা নিয়েছে। কোরবানির পশুর বাজারে কোনো ঘাটতি হবে না। কারণ, এখনো কৃষকের ঘরে বিক্রির উপযোগী ৩৪ লাখ গরু-মহিষ ও ৭৯ লাখ ভেড়া-ছাগল আছে। এগুলো কোরবানির বাজারের জন্য প্রস্তুত আছে।
ভারতের সঙ্গে গরু আমদানি বা সীমান্ত হাটে গরু কেনাবেচার একটি সুনির্দিষ্ট চুক্তি থাকলে তাতে উভয় দেশই উপকৃত হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে দূরদর্শী নীতি গ্রহণ করে এগোতে হবে- সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এমনটিই মনে করেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

সীমান্ত হাটে গরু কেনাবেচায় চুক্তি চায় বাংলাদেশ

আপডেট টাইম : ১২:৩৮:০০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫

সীমান্ত হাটে গরু কেনাবেচায় ‘গবাদিপশু বাণিজ্য উন্নয়নবিষয়ক একটি প্রস্তাব’ ভারতকে দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
গ্লোবাল মিট নিউজ নামে একটি বার্তা সংস্থা বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে। এই বার্তা সংস্থা বিশ্বের মাংসবাজার বিষয়ে খবর প্রকাশ করে।
গত এপ্রিলে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফকে বাংলাদেশে গরু পাচারের ওপর কঠোর নজরদারির নির্দেশ দেয়। বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সালে ভারত থেকে বাংলাদেশে ২২ লাখ গরু আসে। বিজেপি সরকারের এই কঠোর অবস্থানের কারণে গত কয়েক মাসে ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু আসা প্রায় বন্ধ আছে। এর ফলে বাংলাদেশে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ।
এদিকে মাত্র তিন সপ্তাহ পরে উদ্‌যাপিত হতে যাচ্ছে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। ঈদে কোরবানির জন্য বাংলাদেশে প্রায় ২০ লাখ গরুর চাহিদা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু আসা প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মনোজ কুমার রায় জানান, আগামী বছর গবাদিপশু বাণিজ্য চুক্তি নবায়নের উদ্দেশ্যে একটি খসড়া সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে কাজ চলছে। নতুন চুক্তিতে চারটি সীমান্ত হাটে গবাদিপশু কেনাবেচার অনুমতি চাইবে বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে সীমান্ত হাটে বাণিজ্য পণ্য তালিকায় গবাদিপশু অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে এটি ভারতে বাণিজ্যিক পণ্য নয়। এটা খুবই স্পর্শকাতর বিষয়।’
এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বিজিবির হিসাব অনুসারে, প্রতিবছর গড়ে ২০ লাখ গরু ভারত থেকে আনা হয়। এ খাতে লেনদেনের পরিমাণ ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি।
সরকারি হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ২০১৪ সালে গরু আসে ২০ লাখ ৩২ হাজার আর ২০১৩ সালে ২৩ লাখ ৭৪ হাজার গরু আসে। অর্থাৎ মাসে প্রায় ২ লাখ করে গরু আসে। এর বাইরেও ভুটান, নেপাল ও মিয়ানমার থেকে বিভিন্নভাবে গরু-মহিষ আসে।
এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পরিদর্শনের পর হঠাৎ করে বাংলাদেশে গরু আসা কমে যায়। যেখানে জানুয়ারি মাসে ১ লাখ গরু আসে, সেখানে ফেব্রুয়ারি মাসে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৮ হাজার ৪৫০টিতে। মার্চ মাসে আসে ৪৪ হাজার ৯৪৫টি গরু।
সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এপ্রিল, মে, জুন ও জুলাই- এই চার মাসের কোনো মাসে ২০ হাজারের বেশি গরু আসেনি। আগস্ট মাসে প্রতিদিন ২ হাজারের মতো গরু এসেছে। আগে যেখানে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার গরু আসত।
অন্যদিকে ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে দেশে গরুর সংকট তৈরি হতে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অজয় কুমার রায় সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেন, সরকার ইতিমধ্যে বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা নিয়েছে। কোরবানির পশুর বাজারে কোনো ঘাটতি হবে না। কারণ, এখনো কৃষকের ঘরে বিক্রির উপযোগী ৩৪ লাখ গরু-মহিষ ও ৭৯ লাখ ভেড়া-ছাগল আছে। এগুলো কোরবানির বাজারের জন্য প্রস্তুত আছে।
ভারতের সঙ্গে গরু আমদানি বা সীমান্ত হাটে গরু কেনাবেচার একটি সুনির্দিষ্ট চুক্তি থাকলে তাতে উভয় দেশই উপকৃত হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে দূরদর্শী নীতি গ্রহণ করে এগোতে হবে- সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এমনটিই মনে করেন।