ঢাকা ০৭:৪৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৩৭:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫
  • ৩০৫ বার

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যন্ত্রপাতি ক্রয়সহ বিভিন্ন দুর্নীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করে মন্ত্রীর কাছে ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দাবি করলেন জাসদের কার্যকরী সভাপতি মঈনউদ্দিন খান বাদল।

দশম সংসদের সপ্তম অধিবেশন বৃহস্পতিবার মাগরিবের নামাজের বিরতির পর পয়েন্ট অব অর্ডারে আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এই দাবি করেন।

মঈনউদ্দিন খান বাদল বলেন, দেশে যদি অনেক কিছু ব্যর্থ হয়, দুর্নীতি নিয়ে যাদের কাজ করার কথা সেই দুদক নিয়েও যদি প্রশ্ন ওঠে, তখন আল্টিমেটলি আপনি (স্পিকার) যেখানে নেতৃত্বে দিচ্ছেন মানুষ তখন সেই পার্লামেন্টের দিকেই থাকিয়ে থাকবে। এই যেমন আমাদের স্বাস্থ্য খাত। আমাদের স্বাস্থ্য খাতই সবচেয়ে বেশি অসুস্থ। ওরা মানুষের কি সেবা করবে?

তিনি বলেন, স্বাধীনতার এতদিন পরও স্বাস্থ্য খাতে কোনো কোর কম্পিটেন্ট উন্নয়ন হয়নি। আমাদের রাষ্ট্রপতিও স্বাস্থ্য পরীক্ষায় বাইরে যান। আমরাও যাই, মন্ত্রীরাও যান, স্বাস্থ্যমন্ত্রীও যান। আপনারাই যদি দেশের স্বাস্থ্যসেবার ওপরে বিশ্বাস না করেন তাহলে জনগণ বিশ্বাস করবে কীভাবে?

সরকারি প্রতিষ্ঠান আইএমএডি তার পর্যবেক্ষণে বলছে, দেশের হাসপাতালের ৬৫ ভাগ মেশিন অকেজো। ২২টি জেলা সদরের ৪২ ভাগ এক্সরে মেশিন অচল। মেডিকেল কলেজগুলো ৬০ ভাগ এক্সরে মেশিন অচল। ৫০ ভাগ আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন কাজ করে না। এমনকি প্রয়োজন নেই এমন যন্ত্রপাতি হরহামেশাই কিনছে। ব্যবহারের অভাবে এ সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, এই খাতটি মোটেই মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারছে না। এই খাতটিতে চৌর্যবৃত্তি এত নগ্ন যে, সেটা অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে।

এ সময় মুগদা হাসপাতালসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষেত্রে লুটপাট ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে বলেন, এগুলো নিয়ে অলরেডি প্রশ্ন উঠে গেছে। ৪০০ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মনে করছে। এখানে আমাদের অনেক সঙ্গী-সাথী আছে। তার মধ্যে অনেকেই তো হৃদরোগী কিন্তু আমাদের হৃদরোগ ইনস্টিটিউটটাই তো একটা হৃদরোগী।

তার কারণ হল এই হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে যন্ত্রপাতি আর ওষুধ কেনার নামে ৯৭ কোটি টাকার অনিয়ম আছে বলা হয়েছে। এটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তদন্ত করছে। ১৩ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছে। আমরা বিশ্বাস করতে পারছি না, যেখানে কার্ডিয়াক প্রতিষ্ঠান থেকে ৯৭ কোটি টাকা অনিয়ম হচ্ছে ওই প্রতিষ্ঠান কার পেছনে লাগবে? ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্নকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান সিএমএফজি তাদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকার অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনার অভিযোগ উঠছে।

এই ঢাকা শহরে মহাখালীর কাছে তিনটি সরকারি মেডিকেল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তারা শুধু ফটোকপিতে কোটি কোটি টাকা খরচ করেছে। তারা এক বছরে এক কোটি ৫ লাখ তেত্রিশ হাজার ৩২০ টাকা খরচ করেছে। আপনি দেশের উন্নয়ন করবেন কি করে? আপনি যদি এই চিত্রগুলো বন্ধ করতে না পারেন তাহলে ডিজিটাল বাংলাদেশ কেমনে হবে?

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে আপনি নতুন নতুন যত শ্লোগানই দেন না কেন, এতে জনগণের হৃদয় খুলবে না।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে পদক্ষেপ নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করে মন্ত্রীর কাছে ৩০০ বিধিতে বিবৃতি প্রদান করার প্রত্যাশাও করেন তিনি।

এ সময় স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সরকারের শরিকদলীয় সংসদ সদস্য বলেন, প্রয়োজনে আপনার পক্ষ থেকে পার্লামেন্টের প্র্যাকটিসের মধ্য থেকে পার্লামেন্টারি এ্যাকশন বিবেচনা করুন। তা না হলে যত কথাই বলুন না কেন, যে দেশের রাষ্ট্রপতি হতে শুরু করে পার্লামেন্ট সদস্য পর্যন্ত চিকিৎসা নিতে বিদেশ যায়, সে দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জনগণের কাছে আস্থা অর্জন করবে না।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন

আপডেট টাইম : ১০:৩৭:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যন্ত্রপাতি ক্রয়সহ বিভিন্ন দুর্নীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করে মন্ত্রীর কাছে ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দাবি করলেন জাসদের কার্যকরী সভাপতি মঈনউদ্দিন খান বাদল।

দশম সংসদের সপ্তম অধিবেশন বৃহস্পতিবার মাগরিবের নামাজের বিরতির পর পয়েন্ট অব অর্ডারে আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এই দাবি করেন।

মঈনউদ্দিন খান বাদল বলেন, দেশে যদি অনেক কিছু ব্যর্থ হয়, দুর্নীতি নিয়ে যাদের কাজ করার কথা সেই দুদক নিয়েও যদি প্রশ্ন ওঠে, তখন আল্টিমেটলি আপনি (স্পিকার) যেখানে নেতৃত্বে দিচ্ছেন মানুষ তখন সেই পার্লামেন্টের দিকেই থাকিয়ে থাকবে। এই যেমন আমাদের স্বাস্থ্য খাত। আমাদের স্বাস্থ্য খাতই সবচেয়ে বেশি অসুস্থ। ওরা মানুষের কি সেবা করবে?

তিনি বলেন, স্বাধীনতার এতদিন পরও স্বাস্থ্য খাতে কোনো কোর কম্পিটেন্ট উন্নয়ন হয়নি। আমাদের রাষ্ট্রপতিও স্বাস্থ্য পরীক্ষায় বাইরে যান। আমরাও যাই, মন্ত্রীরাও যান, স্বাস্থ্যমন্ত্রীও যান। আপনারাই যদি দেশের স্বাস্থ্যসেবার ওপরে বিশ্বাস না করেন তাহলে জনগণ বিশ্বাস করবে কীভাবে?

সরকারি প্রতিষ্ঠান আইএমএডি তার পর্যবেক্ষণে বলছে, দেশের হাসপাতালের ৬৫ ভাগ মেশিন অকেজো। ২২টি জেলা সদরের ৪২ ভাগ এক্সরে মেশিন অচল। মেডিকেল কলেজগুলো ৬০ ভাগ এক্সরে মেশিন অচল। ৫০ ভাগ আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন কাজ করে না। এমনকি প্রয়োজন নেই এমন যন্ত্রপাতি হরহামেশাই কিনছে। ব্যবহারের অভাবে এ সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, এই খাতটি মোটেই মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারছে না। এই খাতটিতে চৌর্যবৃত্তি এত নগ্ন যে, সেটা অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে।

এ সময় মুগদা হাসপাতালসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষেত্রে লুটপাট ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে বলেন, এগুলো নিয়ে অলরেডি প্রশ্ন উঠে গেছে। ৪০০ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মনে করছে। এখানে আমাদের অনেক সঙ্গী-সাথী আছে। তার মধ্যে অনেকেই তো হৃদরোগী কিন্তু আমাদের হৃদরোগ ইনস্টিটিউটটাই তো একটা হৃদরোগী।

তার কারণ হল এই হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে যন্ত্রপাতি আর ওষুধ কেনার নামে ৯৭ কোটি টাকার অনিয়ম আছে বলা হয়েছে। এটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তদন্ত করছে। ১৩ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছে। আমরা বিশ্বাস করতে পারছি না, যেখানে কার্ডিয়াক প্রতিষ্ঠান থেকে ৯৭ কোটি টাকা অনিয়ম হচ্ছে ওই প্রতিষ্ঠান কার পেছনে লাগবে? ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্নকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান সিএমএফজি তাদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকার অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনার অভিযোগ উঠছে।

এই ঢাকা শহরে মহাখালীর কাছে তিনটি সরকারি মেডিকেল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তারা শুধু ফটোকপিতে কোটি কোটি টাকা খরচ করেছে। তারা এক বছরে এক কোটি ৫ লাখ তেত্রিশ হাজার ৩২০ টাকা খরচ করেছে। আপনি দেশের উন্নয়ন করবেন কি করে? আপনি যদি এই চিত্রগুলো বন্ধ করতে না পারেন তাহলে ডিজিটাল বাংলাদেশ কেমনে হবে?

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে আপনি নতুন নতুন যত শ্লোগানই দেন না কেন, এতে জনগণের হৃদয় খুলবে না।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে পদক্ষেপ নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করে মন্ত্রীর কাছে ৩০০ বিধিতে বিবৃতি প্রদান করার প্রত্যাশাও করেন তিনি।

এ সময় স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সরকারের শরিকদলীয় সংসদ সদস্য বলেন, প্রয়োজনে আপনার পক্ষ থেকে পার্লামেন্টের প্র্যাকটিসের মধ্য থেকে পার্লামেন্টারি এ্যাকশন বিবেচনা করুন। তা না হলে যত কথাই বলুন না কেন, যে দেশের রাষ্ট্রপতি হতে শুরু করে পার্লামেন্ট সদস্য পর্যন্ত চিকিৎসা নিতে বিদেশ যায়, সে দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জনগণের কাছে আস্থা অর্জন করবে না।