ডাক ও টেলিযোগ প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট তারানা হালিম বলেছেন, ভিওআইপি ব্যবসায়ের সঙ্গে যত বড় ভিআইপিরাই জড়িত থাকুক না কেন, এখানে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে কার্য বিধির ৩০০ ধারায় দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি এ হুশিয়ারি দেন।
এর আগে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, দেশে অবৈধভাবে ভিওআইপির ব্যবসা করা হচ্ছে। এর সঙ্গে আমাদের অনেক ভিআইপিও জড়িত রয়েছে। পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, ভিওআইপি দিয়ে যে অর্থ আয় হচ্ছে তা দিয়ে ৪টা পদ্মা সেতু করা যেত। তিনি বলেন, ভিওআইপি ব্যবসার মাধ্যমে একটি সিন্ডিকেট ১৫ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ভর্তুকির জন্য গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে। সেখানে যদি হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয় তাহলে দেশের কি অবস্থা হবে? তিনি আরো বলেন, মন্ত্রীরা বলেন, দেখছি। কিন্তু দেখার শেষ কোথায়? এটা যখন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তেল-গ্যাসের দাম বাড়িয়ে মানুষকে কেন কষ্ট দিচ্ছেন। সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না? গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রভাব আগামী জাতীয় নির্বাচনে পড়বে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ফিরোজ রশীদ বলেন, আইজিডব্লিউ নিয়ে একটা সিন্ডিকেট তৈরি করা হয়েছে। এখান থেকে ১৮ টি কম্পানির মধ্যে ৭টি বেছে নিয়ে একটা সংগঠন তৈরি করেছেন। এখন তারাই সব ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। এরা দেশে এবং বিদেশে প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ, রাজনৈতিক ব্যক্তি, ব্যবসায়ী, বিটিআরসি’র, বিটিসিএল কর্মকর্তা। এদের কারণে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা বন্ধ করা যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে তিনি মন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেন।
পরে এক বিবৃতিতে তারানা হালিম বলেন, বিরোধী দলের সংসদ সদস্য যে অভিযোগ করেছেন সেই অভিযোগ অনুযায়ী যদি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কোনও কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি সংসদ সদস্যর কাছে কারো নাম থাকে তাহলে আমাকে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাবো। প্রয়োজনে ওইসকল কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও তার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন অবৈধ ভিওআইপ শূন্যের কোঠায় আনা হবে। অতএব মনে করি আমার বা আমাদের কারো পিছপা হবার সুযোগ নেই। তিনি আরো বলেন, দেশে ২৯ আইজিডব্লিউ লাইসেন্স আছে। যার মধ্যে ৪টি বন্ধ, ২টি অকার্যকর রয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে অবৈধ ভিওআইপির অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সেক্ষেত্রে কোনও দল কিংবা রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনা করা হচ্ছে না বলেও তিনি দাবি করেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত ১ বছরে ৯৫টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৫টি মামলা করা হয়েছে। গত ৭ মাসে ১৬ হাজার ৩৮০টি সিম বন্ধ করা হয়েছে। ভিওআইপি ব্যবসায়ে ব্যবহারিত অনিবন্ধিত সিম। তাই অনিবন্ধিত সিমগুলো বন্ধ করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসকদের অনুরোধ করা হয়েছে। গতকালও অনিবন্ধিত ৩০টি সিমের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। বকেয় আদায়ে প্রতিটির বিরুদ্ধে ৩টি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে আমরা মামলা দায়ের করেছি, তারা আদালতে স্টে অর্ডার নিয়েছেন। এসব অর্ডার নিষ্পত্তি করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, মামলা করার ক্ষেত্রে কোনও দলীয় পরিচয় দেখা হয়নি। কোনটি কার দেখা হয়নি। সরকার বিশ্বাস করে আইন সকলের জন্য সমান। বাংলাদেশের একটা টাকার রাজস্বও দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার ব্যপারে জিরো টলারেন্স নীতি মানা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আইজিডব্লিউ কম্পানিগুলো বিটিআরসি থেকে অনুমোদন নিয়ে কলরেট ১ দশমিক ৫ সেন্ট থেকে ২ সেন্ট করেছে। আমরা সংবাদ পেয়েছি। অনুমোদনটি বিটিআরসির, মন্ত্রণালয়ের নয়। ১ দশমিক ৫ থেকে ৩ দশমিক ৪ পর্যন্ত কলরেটের অনুমোদন রয়েছে। এরমধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে।