ঢাকা ০২:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাতীয় পার্টির রাজত্বে ভাগ বসাতে চায় আ’লীগ ও বিএনপি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১৯:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ নভেম্বর ২০১৭
  • ২৯২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলা নিয়ে কুড়িগ্রাম-১ আসনটি আগাগোড়াই জাতীয় পার্টির দখলে। স্বাধীনতার পর প্রথম দফা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শামছুল হক চৌধুরী জয়লাভ করেন। ১৯৮৬ সাল থেকে আসনটি জাতীয় পার্টির দখলে। সেই থেকে অন্য কোনো দল বিজয়ী হতে পারেনি এ আসনে।

মাঝে ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী জয়লাভ করেন। এর বাইরে প্রায় ৩৩ বছর ধরে আসনটিতে জাতীয় পার্টির রাজত্ব চলছে। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে চায়। সে লক্ষ্যে নির্বাচনী মাঠে সরব হয়ে উঠেছেন তাদের প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের অন্তত ৮ প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। তবে দীর্ঘদিনের কোন্দল নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে আওয়ামী লীগে।

বিএনপিরও একমাত্র প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। মঙ্গা অতীত হলেও অভাব রয়েছে ঘরে ঘরে। বন্যা ও খরা এদের জীবনের নিত্যসঙ্গী। প্রতিটি নির্বাচনে প্রার্থীরা আসেন নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে। ভোটের পর সেই আগের অবস্থা।

১৯৭৩ সালের নির্বাচনে এমপি হন আওয়ামী লীগের শামছুল হক চৌধুরী। ১৯৮৬ থেকে এবং ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তিন দফায় জাতীয় পার্টির আ.খ.ম শহিদুল ইসলাম বাচ্চু এমপি হন।

তার মৃত্যুর পর ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৪ পর্যন্ত সব নির্বাচনে তার ভাগ্নে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি একেএম মোস্তাফিজুর রহমান এমপি হন। আগামী নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী। এরই সম্ভাব্য প্রার্থীরাই যোগ দিচ্ছেন স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে। প্রার্থীদের ছবির সঙ্গে নেতানেত্রীর ছবিসহ বিল বোর্ড পোস্টারে ছেয়ে গেছে হাট-বাজার ও গ্রামগঞ্জ। আওয়ামী লীগ জোটগতভাবে আসনটি দখলে নিতে লবিং অব্যাহত রেখেছে। বিএনপিও জয়ের স্বপ্নে এলাকায় প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।

আগামী নির্বাচনেও আসনটি ধরে রাখতে মরিয়া জাতীয় পার্টি। তবে টিআর-কাবিখা ও জিআর প্রকল্পে অনিয়ম নিয়ে দুর্নীতির বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। নেতাকর্মীরা বলছেন, এলাকায় এমপি মোস্তাফিজুর রহমানের বিকল্প নেই। তারা বলছেন, এমপির কল্যাণেই পৌর নির্বাচনে একটিমাত্র পৌরসভায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবদুুর রহমান জয়লাভ করেন।

ইউপি নির্বাচনেও ভালো ফল আসে। তবে দলের বিকল্প প্রার্থী হিসেবে নাগেশ্বরী পৌর মেয়র আবদুর রহমানের নাম আলোচনায় আছে। যদিও জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি জোটগত নির্বাচন হলে এবারেও তারই মহাজোটের প্রার্থী হবার কথা।

বক্তব্য জানতে এমপি মোস্তাফিজুর রহমানকে ফোন করলে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে কথা হয় এমপির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব রেজাউল করিম রেজার সঙ্গে। তিনি হাওর বার্তাকে বলেন, ৩০ বছর থেকে আসনটি জাতীয় পার্টির দখলে।

এর নেপথ্যে একটি কারণ তা হল-জনপ্রিয়তা এবং এলাকার উন্নয়ন। পক্ষান্তরে অন্য দলগুলোর অন্তরকলহ এবং জনবিচ্ছিন্নতা। বর্তমান এমপি মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলার গ্রামগঞ্জ, চরাঞ্চল সর্বত্র দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির সর্বক্ষেত্রে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। বন্যাসহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে পাশে থেকে মানুষের সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেয়ায় তিনি এখন গণমানুষের নেতা। তার জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া।

তাই আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর বিজয় সুনিশ্চিত বলে আমি মনে করি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নাগেশ্বরী পৌরসভাসহ সর্বাধিক বেশি ইউনিয়ন পরিষদে বিজয় আসে এ আসন থেকে, যা বাংলাদেশে রেকর্ড। আমাদের সাংগঠনিক ভিতও মজবুত।

আওয়ামী লীগের অন্তত ৮ প্রার্থী মাঠে রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন-দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি শিল্পপতি গোলাম মোস্তফা ও নাগেশ্বরী উপজেলা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান আসলাম হোসেন সওদাগর।

আওয়ামী লীগ ভুরুঙ্গামারী উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুন্নবী চৌধুরী খোকন। ষাটের দশকের ছাত্রনেতা জেলা কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শিল্পপতি আখতারুজ্জামান মণ্ডল। আওয়ামী লীগের ভুরুঙ্গামারী উপজেলা কমিটি সদস্য সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ডের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গণি।

নাগেশ্বরী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজাম্মেল হক প্রধান, কৃষক নেতা মজিবর রহমান বীরবলের পুত্র মাজহারুল ইসলাম মাজু, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ডা. মাহফুজার রহমান উজ্জ্বল।

২০০৮ সালে এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করেন শিল্পপতি গোলাম মোস্তফা। তবে মহাজোটের কারণে আসনটি ছেড়ে দিতে হয় তাকে।

২০১৪ সালে অবশ্য প্রার্থী বদল করে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আসলাম হোসেন সওদাগরকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। পরে মহাজোটের কারণে তখনও আসনটি ছেড়ে দিতে হয় জাতীয় পার্টিকে।

তবে উপজেলা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান আসলাম সওদাগর। পরে তাকে বহিষ্কার করার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদটি হারিয়ে দলে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। তিনি নিজের অবস্থান পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছেন। জানতে চাইলে আসলাম হোসেন সওদাগর বলেন, ‘আমাকে বহিষ্কার করার এখতিয়ার নেই স্থানীয় আওয়ামী লীগের। গঠনতন্ত্র মোতাবেক এ ক্ষমতা কেন্দ্রের। মূলত আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি ছোট গ্রুপ এসব অপতৎপরতা চালাচ্ছে।

নির্বাচনী এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখে থাকার কারণে মানুষ চায় আমাকে মনোনয়ন দেয়া হোক। বাকিটা দলীয় নেত্রীর বিবেচনা।’ তবে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, মাঠ পর্যায়ে পরিচিতি এবং জনপ্রিয়তার দিক থেকে আসলাম সওদাগর এগিয়ে রয়েছেন। বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে তাকে মানুষের পাশে দেখা যায়।

অপরদিকে শিল্পপতি গোলাম মোস্তফা সোনাহাট স্থলবন্দর, কচাকাটা থানা, নাগেশ্বরী পৌরসভা, কর্মসংস্থান ব্যাংক, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, কুড়িগ্রাম-ভুরুঙ্গামারী বাস সার্ভিস চালু, ব্যক্তিগত চেষ্টায় শিল্পকারখানা ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার কারণে আলোচনায় আছেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমি জন্মগতভাবে অনুন্নত এলাকার বাসিন্দা। তাই এলাকার উন্নয়নের জন্য, কর্মসংস্থানের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। কোনো পদের লোভে নয়। তবে মহাজোট না হলে আমিই দলের প্রার্থী- এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।’

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রার্থী ব্ল–মিং নিটওয়ার লিমিটেডের পরিচালক শিল্পপতি মাজহারুল ইসলাম মাজু। মনোনয়নের দৌড়ে এবারই প্রথম তিনি। তার বাবা মজিবুর রহমান বীরবল একবার এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। জয় দিয়ে পরাজয়ের সে গ্লানি ভুলতে চান তার উত্তরসূরি মাজহারুল ইসলাম মাজু।

ভুরুঙ্গামারী উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুন্নবী চৌধুরী খোকন বলেন, আমি আমার বাবা সাবেক এমপি শামছুল হক চৌধুরীর মতো জনগণের পাশে থাকতে চাই।

গত কয়েক বছর থেকে শুধু পোস্টার ও বিলবোর্ডে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় নাম লিখিয়ে আসছেন ষাটের দশকের ছাত্রনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা শিল্পপতি আখতারুজ্জামান মণ্ডল। দলীয় মনোনয়নের আশায় যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে।

কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সহসাংগঠনিক সম্পাদক ওসমান গণি গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা যাচাই-বাছাইয়ে উৎকোচ নেয়ার অভিযোগে তিনি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন।

তার বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়েছে। মনোনয়ন প্রার্থী কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ডা. মাহফুজার রহমান উজ্জ্বল ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশ করছেন। তিনি ভোটারদের মাঝে পরিচিতি হতে অক্লান্ত চেষ্টা করছেন। তিনি বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত। তার দাবি ক্লিন ইমেজ এবং নতুন ও তারুণ্যদীপ্ত নেতৃত্বের জন্য দল তাকে বিবেচনা করবে।

জাতীয় পার্টির দুর্গে হানা দিতে প্রস্তুত বিএনপির একক প্রার্থী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি সাইফুর রহমান রানা।

তাকে বিজয়ী করতে রণকৌশল নির্ধারণে শহর থেকে তৃণমূল পর্যায়ে ঘন ঘন বৈঠকে বসছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। ’৯৬ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচনে জিতে সাবেক এমপির তকমা গায়ে লাগালে আসল লড়াইয়ে জেতা হয়নি তার। কুড়িগ্রাম-১ আসনের পাশাপাশি কুড়িগ্রাম-২ আসনে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানালেও শেষ পর্যন্ত সাইফুর রহমান রানাকে কুড়িগ্রাম-১ আসনেই হয়তো প্রার্থী হিসেবে দেখা যেতে পারে।

জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) হয়ে গত নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন হাইকোর্টের অ্যাডভোকেট রশীদ আহম্মেদ। এ বছরও তিনি প্রার্থী হচ্ছেন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুড়িগ্রাম জেলার ১ ও ৪নং আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং কুড়িগ্রাম-৪ আসনে বিজয়ী হন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ভুরুঙ্গামারী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই মাস্টার। তিনি গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অভিনব প্রচার কৌশল অনেকেরই দৃষ্টি কাড়ে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জাতীয় পার্টির রাজত্বে ভাগ বসাতে চায় আ’লীগ ও বিএনপি

আপডেট টাইম : ১১:১৯:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ নভেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলা নিয়ে কুড়িগ্রাম-১ আসনটি আগাগোড়াই জাতীয় পার্টির দখলে। স্বাধীনতার পর প্রথম দফা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শামছুল হক চৌধুরী জয়লাভ করেন। ১৯৮৬ সাল থেকে আসনটি জাতীয় পার্টির দখলে। সেই থেকে অন্য কোনো দল বিজয়ী হতে পারেনি এ আসনে।

মাঝে ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী জয়লাভ করেন। এর বাইরে প্রায় ৩৩ বছর ধরে আসনটিতে জাতীয় পার্টির রাজত্ব চলছে। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে চায়। সে লক্ষ্যে নির্বাচনী মাঠে সরব হয়ে উঠেছেন তাদের প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের অন্তত ৮ প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। তবে দীর্ঘদিনের কোন্দল নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে আওয়ামী লীগে।

বিএনপিরও একমাত্র প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। মঙ্গা অতীত হলেও অভাব রয়েছে ঘরে ঘরে। বন্যা ও খরা এদের জীবনের নিত্যসঙ্গী। প্রতিটি নির্বাচনে প্রার্থীরা আসেন নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে। ভোটের পর সেই আগের অবস্থা।

১৯৭৩ সালের নির্বাচনে এমপি হন আওয়ামী লীগের শামছুল হক চৌধুরী। ১৯৮৬ থেকে এবং ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তিন দফায় জাতীয় পার্টির আ.খ.ম শহিদুল ইসলাম বাচ্চু এমপি হন।

তার মৃত্যুর পর ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৪ পর্যন্ত সব নির্বাচনে তার ভাগ্নে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি একেএম মোস্তাফিজুর রহমান এমপি হন। আগামী নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী। এরই সম্ভাব্য প্রার্থীরাই যোগ দিচ্ছেন স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে। প্রার্থীদের ছবির সঙ্গে নেতানেত্রীর ছবিসহ বিল বোর্ড পোস্টারে ছেয়ে গেছে হাট-বাজার ও গ্রামগঞ্জ। আওয়ামী লীগ জোটগতভাবে আসনটি দখলে নিতে লবিং অব্যাহত রেখেছে। বিএনপিও জয়ের স্বপ্নে এলাকায় প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।

আগামী নির্বাচনেও আসনটি ধরে রাখতে মরিয়া জাতীয় পার্টি। তবে টিআর-কাবিখা ও জিআর প্রকল্পে অনিয়ম নিয়ে দুর্নীতির বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। নেতাকর্মীরা বলছেন, এলাকায় এমপি মোস্তাফিজুর রহমানের বিকল্প নেই। তারা বলছেন, এমপির কল্যাণেই পৌর নির্বাচনে একটিমাত্র পৌরসভায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবদুুর রহমান জয়লাভ করেন।

ইউপি নির্বাচনেও ভালো ফল আসে। তবে দলের বিকল্প প্রার্থী হিসেবে নাগেশ্বরী পৌর মেয়র আবদুর রহমানের নাম আলোচনায় আছে। যদিও জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি জোটগত নির্বাচন হলে এবারেও তারই মহাজোটের প্রার্থী হবার কথা।

বক্তব্য জানতে এমপি মোস্তাফিজুর রহমানকে ফোন করলে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে কথা হয় এমপির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব রেজাউল করিম রেজার সঙ্গে। তিনি হাওর বার্তাকে বলেন, ৩০ বছর থেকে আসনটি জাতীয় পার্টির দখলে।

এর নেপথ্যে একটি কারণ তা হল-জনপ্রিয়তা এবং এলাকার উন্নয়ন। পক্ষান্তরে অন্য দলগুলোর অন্তরকলহ এবং জনবিচ্ছিন্নতা। বর্তমান এমপি মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলার গ্রামগঞ্জ, চরাঞ্চল সর্বত্র দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির সর্বক্ষেত্রে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। বন্যাসহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে পাশে থেকে মানুষের সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেয়ায় তিনি এখন গণমানুষের নেতা। তার জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া।

তাই আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর বিজয় সুনিশ্চিত বলে আমি মনে করি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নাগেশ্বরী পৌরসভাসহ সর্বাধিক বেশি ইউনিয়ন পরিষদে বিজয় আসে এ আসন থেকে, যা বাংলাদেশে রেকর্ড। আমাদের সাংগঠনিক ভিতও মজবুত।

আওয়ামী লীগের অন্তত ৮ প্রার্থী মাঠে রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন-দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি শিল্পপতি গোলাম মোস্তফা ও নাগেশ্বরী উপজেলা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান আসলাম হোসেন সওদাগর।

আওয়ামী লীগ ভুরুঙ্গামারী উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুন্নবী চৌধুরী খোকন। ষাটের দশকের ছাত্রনেতা জেলা কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শিল্পপতি আখতারুজ্জামান মণ্ডল। আওয়ামী লীগের ভুরুঙ্গামারী উপজেলা কমিটি সদস্য সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ডের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গণি।

নাগেশ্বরী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজাম্মেল হক প্রধান, কৃষক নেতা মজিবর রহমান বীরবলের পুত্র মাজহারুল ইসলাম মাজু, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ডা. মাহফুজার রহমান উজ্জ্বল।

২০০৮ সালে এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করেন শিল্পপতি গোলাম মোস্তফা। তবে মহাজোটের কারণে আসনটি ছেড়ে দিতে হয় তাকে।

২০১৪ সালে অবশ্য প্রার্থী বদল করে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আসলাম হোসেন সওদাগরকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। পরে মহাজোটের কারণে তখনও আসনটি ছেড়ে দিতে হয় জাতীয় পার্টিকে।

তবে উপজেলা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান আসলাম সওদাগর। পরে তাকে বহিষ্কার করার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদটি হারিয়ে দলে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। তিনি নিজের অবস্থান পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছেন। জানতে চাইলে আসলাম হোসেন সওদাগর বলেন, ‘আমাকে বহিষ্কার করার এখতিয়ার নেই স্থানীয় আওয়ামী লীগের। গঠনতন্ত্র মোতাবেক এ ক্ষমতা কেন্দ্রের। মূলত আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি ছোট গ্রুপ এসব অপতৎপরতা চালাচ্ছে।

নির্বাচনী এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখে থাকার কারণে মানুষ চায় আমাকে মনোনয়ন দেয়া হোক। বাকিটা দলীয় নেত্রীর বিবেচনা।’ তবে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, মাঠ পর্যায়ে পরিচিতি এবং জনপ্রিয়তার দিক থেকে আসলাম সওদাগর এগিয়ে রয়েছেন। বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে তাকে মানুষের পাশে দেখা যায়।

অপরদিকে শিল্পপতি গোলাম মোস্তফা সোনাহাট স্থলবন্দর, কচাকাটা থানা, নাগেশ্বরী পৌরসভা, কর্মসংস্থান ব্যাংক, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, কুড়িগ্রাম-ভুরুঙ্গামারী বাস সার্ভিস চালু, ব্যক্তিগত চেষ্টায় শিল্পকারখানা ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার কারণে আলোচনায় আছেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমি জন্মগতভাবে অনুন্নত এলাকার বাসিন্দা। তাই এলাকার উন্নয়নের জন্য, কর্মসংস্থানের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। কোনো পদের লোভে নয়। তবে মহাজোট না হলে আমিই দলের প্রার্থী- এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।’

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রার্থী ব্ল–মিং নিটওয়ার লিমিটেডের পরিচালক শিল্পপতি মাজহারুল ইসলাম মাজু। মনোনয়নের দৌড়ে এবারই প্রথম তিনি। তার বাবা মজিবুর রহমান বীরবল একবার এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। জয় দিয়ে পরাজয়ের সে গ্লানি ভুলতে চান তার উত্তরসূরি মাজহারুল ইসলাম মাজু।

ভুরুঙ্গামারী উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুন্নবী চৌধুরী খোকন বলেন, আমি আমার বাবা সাবেক এমপি শামছুল হক চৌধুরীর মতো জনগণের পাশে থাকতে চাই।

গত কয়েক বছর থেকে শুধু পোস্টার ও বিলবোর্ডে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় নাম লিখিয়ে আসছেন ষাটের দশকের ছাত্রনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা শিল্পপতি আখতারুজ্জামান মণ্ডল। দলীয় মনোনয়নের আশায় যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে।

কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সহসাংগঠনিক সম্পাদক ওসমান গণি গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা যাচাই-বাছাইয়ে উৎকোচ নেয়ার অভিযোগে তিনি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন।

তার বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়েছে। মনোনয়ন প্রার্থী কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ডা. মাহফুজার রহমান উজ্জ্বল ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশ করছেন। তিনি ভোটারদের মাঝে পরিচিতি হতে অক্লান্ত চেষ্টা করছেন। তিনি বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত। তার দাবি ক্লিন ইমেজ এবং নতুন ও তারুণ্যদীপ্ত নেতৃত্বের জন্য দল তাকে বিবেচনা করবে।

জাতীয় পার্টির দুর্গে হানা দিতে প্রস্তুত বিএনপির একক প্রার্থী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি সাইফুর রহমান রানা।

তাকে বিজয়ী করতে রণকৌশল নির্ধারণে শহর থেকে তৃণমূল পর্যায়ে ঘন ঘন বৈঠকে বসছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। ’৯৬ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচনে জিতে সাবেক এমপির তকমা গায়ে লাগালে আসল লড়াইয়ে জেতা হয়নি তার। কুড়িগ্রাম-১ আসনের পাশাপাশি কুড়িগ্রাম-২ আসনে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানালেও শেষ পর্যন্ত সাইফুর রহমান রানাকে কুড়িগ্রাম-১ আসনেই হয়তো প্রার্থী হিসেবে দেখা যেতে পারে।

জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) হয়ে গত নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন হাইকোর্টের অ্যাডভোকেট রশীদ আহম্মেদ। এ বছরও তিনি প্রার্থী হচ্ছেন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুড়িগ্রাম জেলার ১ ও ৪নং আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং কুড়িগ্রাম-৪ আসনে বিজয়ী হন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ভুরুঙ্গামারী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই মাস্টার। তিনি গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অভিনব প্রচার কৌশল অনেকেরই দৃষ্টি কাড়ে।