মারা যাওয়ার ১১ বছর পরেও আ.লীগ কমিটিতে ১৬ নেতা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে প্রায় ১৪ বছর আগে উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়। ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে ৩ বছরের জন্য ৬৭ সদস্যের একটি উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়।  বর্তমানে ওই কমিটির সভাপতিসহ ১৬ নেতাই মারা গেছেন।  এছাড়া ওই কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে গত ১১ বছর ধরে এখনো সেখানে নতুন কোনো কমিটি গঠিত হয়নি।

এ কারণে গত ১১ বছর ধরে মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে উপজেলা সাংগঠনিক কার্যক্রম। প্রায় ৬ বছর পৌরসহ ওয়ার্ডগুলো মেয়াদ উত্তীর্ণ আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলছে কার্যক্রম।  উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন না হওয়ায় নতুন নেতৃত্ব উঠে আসছে না। আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের নেতা কর্মীদের মাঝে চরম হতাশ ও উদ্বেগ বিরাজ করছে।

অপরদিকে উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের কোনো দলীয় কার্যালয় না থাকায় স্থানীয় ৩ নেতার (উপজেলা সভাপতি অধ্যক্ষ মামুনুর রশিদ, সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র হাজী ইসমাইল খোকন ও পৌর আহ্বায়ক কাজি জামশেদ কবির বাকি বিল্লাহ) নিজস্ব কার্যালয়ে কর্মীরা সময় পার করছে।

গত ১৩ নভেম্বর রায়পুর পাইলট বালিকা বিদ্যালয় মাঠে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক ও সাংসদ হারুনুর রশিদের সংবর্ধনা সভায় নির্বাচনের পরে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হবে বলে চট্টগ্রাম বিভাগী সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম নেতা-কর্মীদের জানান।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে ৪ বার সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেও নেতাদের মাঝে কোন্দলের কারণে শেষ পর্যন্ত সম্মেলন হয়নি। সর্বশেষ গত ৫ সেপ্টেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সভায় রায়পুর আওয়ামী লীগের সম্মেলন না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় রায়পুরের কয়েকজন আওয়ামী লীগ সদস্য সম্মেলন না হওয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং ক্ষুব্ধ হয়ে তারা ওই সভায় আজীবন সম্মেলন না করার দাবিও করেন।

গত ১৪ মে রায়পুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হোসেন দুলাল চৌধুরী মারা যান। এর আগে ৭ জন সহ সভাপতির মধ্যে ৪ জন মারা যান। কমিটির ৪ সম্পাদক সহ ১৬ জন নেতা গত ১৪ বছরে মারা গেছেন।

রায়পুর পৌরসভাসহ উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে লক্ষ্মীপুর-২ আসন গঠিত।

আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতারা জানান, ২০০৮ সালে সংসদ নির্বাচনে বিশিষ্ট ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব হারুনুর রশিদকে মনোনয়ন দেওয়া হলে দলের আরেকটি অংশ বিরোধিতা করে। ওই নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ আলী খোকন নির্বাচন করায় দলের মধ্যে বিভক্তি হয়। আর এই সুযোগেই বিএনপি জয়লাভ করে।

নিয়ম অনুযায়ী ৩ বছর পর পর সম্মেলন করার কথা থাকলেও উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যক্ষ মামুনুর রশিদ জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগে ১৬ নেতা মারা গেছেন। ৬৭ সদস্যের মধ্যে ১৫ জন সক্রিয় থাকলেও অন্যরা নিষ্ক্রিয় রয়েছে। এতে উপজেলা ও পৌর সম্মেলন বা কমিটি না হওয়ায় নেতা কর্মীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান মুন্সি জানান, রায়পুরের আওয়ামী লীগে দীর্ঘদিন ধরে অক্টোপাসের মতো চাপিয়ে থাকা সমাজবিরোধীদের নেতৃত্ব সরিয়ে না দিলে দল গঠন হবে না এবং আগামী সংসদ নির্বাচনে মানুষ নৌকায় ভোট দিবে না। দলের জন্য দুর্নীতিবাজ নেতাই সমস্যা এবং তাদের কারণে সম্মেলন হচ্ছে না।  নেতাদের কারণে মুখ সরিয়ে নিচ্ছে সাধারণ মানুষ।

রায়পুর পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কাজি জামশেদ কবির বাকি বিল্লাহ জানান, পৌর কমিটি সহ ওয়ার্ড কমিটিগুলোর প্রায় ৬ বছর মেয়াদোত্তীর্ণ। ২টি ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক মারা যান এবং ২টি ওয়ার্ডের সভাপতি ও সম্পাদক অসুস্থ। ওয়ার্ড কমিটি পুনর্গঠন এবং পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হলে নতুন নেতৃত্বের সৃষ্টি হলে সংগঠন শক্তিশালী হবে।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিয়া গোলাম ফারুক পিংকু জানান, আগামী ২৮ নভেম্বর রায়পুর উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা হবে।  যদি ওই সভায় বেশির ভাগ সদস্য মত দেন তাহলে ডিসেম্বরের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি দেয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর