ঢাকা ০৭:৫৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সৌখিন হিজাবীদের কথা বলছি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:১১:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩১ অগাস্ট ২০১৫
  • ৪৫০ বার

অনেকদিন ধরে ভাবছি হিজাব নিয়ে লিখবো। হিজাব ধর্মপ্রাণ মুসলিম নারীদের অহংকা এবং আভিজাত্যের প্রতীক। তাঁদের আব্রু আর সম্ভ্রমের এক অনন্য বহিঃপ্রকাশ। নিজে হিজাব না পরলেও যখন কোন সম্ভ্রান্ত মহিলাকে হিজাব পরতে দেখি, তাঁদের আদব-লিহাজ,কায়দা-কানুনে শ্রদ্ধায় আপনিতেই মাথা নুয়ে আসে। তাঁরা বংশ পরম্পরায় তাঁদের ঐতিহ্যকে লালন এবং বহন করে আসছে। হিজাব মানেই সম্মান এবং শ্রদ্ধা।

সত্যিকারের হিজাব(দেহ এবং মনের), নারীকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। কিন্তু আমি আজ কিছু সৌখিন হিজাবীদের কথা বলবো। এক পার্টিতে গেছি অনেকেই দেখি হিজাব পরে এসেছে সাথে টিকলি। সাঁজ সজ্জা ফ্যাশানেবল কাপড় পরা সব ঠিক ঠাক আছে বরং সাধারনের থেকে খানিকটা মাত্রাতিরিক্ত।এদের দেখতে ভীষণ ভালোও লাগে, কেমন যেন ধাঁধাঁ, চোখ ফেরানো যায় না। একটু বেশীই বোধ হয় আকর্ষণও করে। চোখ, ঠোঁট, গণ্ডদেশ, কপোল কোথাও তিল পরিমান অযত্ন নেই, অবহেলা নেই, সাঁজ সজ্জায় কোন কার্পণ্যও নেই । শাড়ী কিংবা পোশাকেও আটসাঁট ভাব অক্ষুণ্ণ আছে। তবে চুল বেচারা কি দোষ করলো! আমার ঠিক মাথায় ঢুকে না। ওদের অকাট্য যুক্তি চুল দেখানো পাপ। চুলে কোন স্নায়ুতন্ত্র নেই তাই সংবেদনশীলতাও নেই । কিন্তু শরীরের আর সব অঙ্গ পতঙ্গতো সংবেদনশীল। বিশেষ করে চোখ, ঠোঁট, গণ্ডদেশ ! তবুও সব পাপ তাপ শুধু চুলে এসেই বর্তায় ! অনেক সময় রাস্তায়, মার্কেটে, শপিংমলেও দেখি বৃদ্ধা মা হিজাব পরে আছে, সাথের তরুণী কন্যা জিন্স প্যান্ট ফতুয়া পরে আছে। কেমন যেন বৈসাদৃশ্য, মিলানো যায় না সহজে।

অল্প কিছুদিন আগে অফিসারস ক্লাবের এক বিয়েতে আমার এক পুরনো বান্ধবীর সাথে দেখা। প্রথম দেখায় আমি ঠিক চিনতে পারিনি, কারণ আর কিছু নয়, হিজাব। আমি বেশ খানিকটা অবাক হয়ে বলেই ফেললাম তুমি আবার হিজাব, কিভাবে সম্ভব ! ও’ যা বলল, দারুণ ইন্টারেস্টিং। ভীষণ স্মার্ট আর চটপটে আমার বান্ধবী কোন ভনিতা না করে হাসতে হাসতে উত্তর দিলো, ”সব ফ্যাশানইতো করলাম, এখন চুলে রূপালী আভা, গলায় বয়সের ভাঁজ ঢাকতে পারছি না তাই হিজাবটাকেই বেছে নিলাম”।

এখন থেকে এটা কাজ করবে। একের ভিতর তিন। ফ্যাশানও হবে, চুল কালার করতে হবে না আবার মানুষ ধার্মিকও মনে করবে। চুল কালার করতে যে পরিমাণ টাকা এবং সময় ব্যয় হয় হিজাব তার থেকে ঢের বেশী সাশ্রয়ী। সত্যিই ওর বুদ্ধি আছে, আমি ওর প্রশংসায় মুগ্ধ না হয়ে পারলাম না।

আরেকদিনের কথা, আমি আমার পরম শ্রদ্ধেয় এক নেত্রীর বাসায় দেখা করতে গেলাম, নেত্রী প্রায় আঁতকে উঠে আমাকে বললেন, ”তোমার চুলেও রূপালী আভা”! আমি ভয়ে ভড়কে যেয়ে তাড়াতাড়ি বলে উঠলাম জী আপা, খুব শীঘ্রই হিজাব পরা শুরু করবো। ভাবলাম নেত্রী শুনে খুশী হবেন। কিন্তু আবারও আমাকে চমকে দিয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলেন, বললেন, ” কি হিজাব, জানো দেশের খারাপ মহিলারা হিজাব পরে নষ্টামি করতে যায়, হিজাবকে তাঁরা মুখোশ হিসেবে, ঢাল হিসেবে ব্যাবহার করে মানুষের চোখকে ফাঁকি দেয় ”। আমি মনে মনে বলি,” আস্তাগফিরুল্লাহ”।

কথায় বলে যতো মত ততো পথ। সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে ঠিক করলাম মাথায় ঘোমটা দিবো। এতে করে আব্রুও হবে মাথার সাদা চুলও ঢাকবে। যেদিন আমি ঘোমটা মাথায় অফিসে গেলাম, সবাই বলল,” আপনাকে কেমন যেন বউয়ের মত লাগছে”। সারাদিন বেটাছেলেদের মত কাজ করি বউ বউ ভাব থাকলে চলবে ক্যামনে ! আমি ভীষণ চিন্তায় পরে গেলাম ।
লেখাটি খুজিস্তা নুর-ই-নাহরিন (মুন্নি)-এর ফেসবুক থেকে নেয়া।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

সৌখিন হিজাবীদের কথা বলছি

আপডেট টাইম : ১০:১১:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩১ অগাস্ট ২০১৫

অনেকদিন ধরে ভাবছি হিজাব নিয়ে লিখবো। হিজাব ধর্মপ্রাণ মুসলিম নারীদের অহংকা এবং আভিজাত্যের প্রতীক। তাঁদের আব্রু আর সম্ভ্রমের এক অনন্য বহিঃপ্রকাশ। নিজে হিজাব না পরলেও যখন কোন সম্ভ্রান্ত মহিলাকে হিজাব পরতে দেখি, তাঁদের আদব-লিহাজ,কায়দা-কানুনে শ্রদ্ধায় আপনিতেই মাথা নুয়ে আসে। তাঁরা বংশ পরম্পরায় তাঁদের ঐতিহ্যকে লালন এবং বহন করে আসছে। হিজাব মানেই সম্মান এবং শ্রদ্ধা।

সত্যিকারের হিজাব(দেহ এবং মনের), নারীকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। কিন্তু আমি আজ কিছু সৌখিন হিজাবীদের কথা বলবো। এক পার্টিতে গেছি অনেকেই দেখি হিজাব পরে এসেছে সাথে টিকলি। সাঁজ সজ্জা ফ্যাশানেবল কাপড় পরা সব ঠিক ঠাক আছে বরং সাধারনের থেকে খানিকটা মাত্রাতিরিক্ত।এদের দেখতে ভীষণ ভালোও লাগে, কেমন যেন ধাঁধাঁ, চোখ ফেরানো যায় না। একটু বেশীই বোধ হয় আকর্ষণও করে। চোখ, ঠোঁট, গণ্ডদেশ, কপোল কোথাও তিল পরিমান অযত্ন নেই, অবহেলা নেই, সাঁজ সজ্জায় কোন কার্পণ্যও নেই । শাড়ী কিংবা পোশাকেও আটসাঁট ভাব অক্ষুণ্ণ আছে। তবে চুল বেচারা কি দোষ করলো! আমার ঠিক মাথায় ঢুকে না। ওদের অকাট্য যুক্তি চুল দেখানো পাপ। চুলে কোন স্নায়ুতন্ত্র নেই তাই সংবেদনশীলতাও নেই । কিন্তু শরীরের আর সব অঙ্গ পতঙ্গতো সংবেদনশীল। বিশেষ করে চোখ, ঠোঁট, গণ্ডদেশ ! তবুও সব পাপ তাপ শুধু চুলে এসেই বর্তায় ! অনেক সময় রাস্তায়, মার্কেটে, শপিংমলেও দেখি বৃদ্ধা মা হিজাব পরে আছে, সাথের তরুণী কন্যা জিন্স প্যান্ট ফতুয়া পরে আছে। কেমন যেন বৈসাদৃশ্য, মিলানো যায় না সহজে।

অল্প কিছুদিন আগে অফিসারস ক্লাবের এক বিয়েতে আমার এক পুরনো বান্ধবীর সাথে দেখা। প্রথম দেখায় আমি ঠিক চিনতে পারিনি, কারণ আর কিছু নয়, হিজাব। আমি বেশ খানিকটা অবাক হয়ে বলেই ফেললাম তুমি আবার হিজাব, কিভাবে সম্ভব ! ও’ যা বলল, দারুণ ইন্টারেস্টিং। ভীষণ স্মার্ট আর চটপটে আমার বান্ধবী কোন ভনিতা না করে হাসতে হাসতে উত্তর দিলো, ”সব ফ্যাশানইতো করলাম, এখন চুলে রূপালী আভা, গলায় বয়সের ভাঁজ ঢাকতে পারছি না তাই হিজাবটাকেই বেছে নিলাম”।

এখন থেকে এটা কাজ করবে। একের ভিতর তিন। ফ্যাশানও হবে, চুল কালার করতে হবে না আবার মানুষ ধার্মিকও মনে করবে। চুল কালার করতে যে পরিমাণ টাকা এবং সময় ব্যয় হয় হিজাব তার থেকে ঢের বেশী সাশ্রয়ী। সত্যিই ওর বুদ্ধি আছে, আমি ওর প্রশংসায় মুগ্ধ না হয়ে পারলাম না।

আরেকদিনের কথা, আমি আমার পরম শ্রদ্ধেয় এক নেত্রীর বাসায় দেখা করতে গেলাম, নেত্রী প্রায় আঁতকে উঠে আমাকে বললেন, ”তোমার চুলেও রূপালী আভা”! আমি ভয়ে ভড়কে যেয়ে তাড়াতাড়ি বলে উঠলাম জী আপা, খুব শীঘ্রই হিজাব পরা শুরু করবো। ভাবলাম নেত্রী শুনে খুশী হবেন। কিন্তু আবারও আমাকে চমকে দিয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলেন, বললেন, ” কি হিজাব, জানো দেশের খারাপ মহিলারা হিজাব পরে নষ্টামি করতে যায়, হিজাবকে তাঁরা মুখোশ হিসেবে, ঢাল হিসেবে ব্যাবহার করে মানুষের চোখকে ফাঁকি দেয় ”। আমি মনে মনে বলি,” আস্তাগফিরুল্লাহ”।

কথায় বলে যতো মত ততো পথ। সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে ঠিক করলাম মাথায় ঘোমটা দিবো। এতে করে আব্রুও হবে মাথার সাদা চুলও ঢাকবে। যেদিন আমি ঘোমটা মাথায় অফিসে গেলাম, সবাই বলল,” আপনাকে কেমন যেন বউয়ের মত লাগছে”। সারাদিন বেটাছেলেদের মত কাজ করি বউ বউ ভাব থাকলে চলবে ক্যামনে ! আমি ভীষণ চিন্তায় পরে গেলাম ।
লেখাটি খুজিস্তা নুর-ই-নাহরিন (মুন্নি)-এর ফেসবুক থেকে নেয়া।