শীতের কুয়াশায় অতিথি পাখি হাজির হয়েছে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঋতুর পালাক্রমে হেমন্তের বিদায় নেয়ার পরপরই স্নিগ্ধ সকালের কুয়াশা তার শীতের বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে। ইতোমধ্যে হালকা কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। শুরু হয়েছে শীতের মৌসুম।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিখ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সবুজ ক্যাম্পাসে লেগেছে শুষ্কতার ছোঁয়া। ক্যাম্পাসের লেকগুলো এখন লাল পদ্ম ফুলে ভরে উঠেছে। প্রকৃতির এমন উপযুক্ত পরিবেশ আর নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ আঙ্গিনার লেকগুলোতে আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখি।

প্রতি বছরের মতো এবারও অতিথি পাখিরা রক্তকমল শোভিত এই লেকগুলোতে জড়ো হতে শুরু করেছে। পাখিদের কলরবে ইতোমধ্যে মুখর হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলো। এসব পাখি লাল শাপলার পানিতে কিচিরমিচির ডাকছে, আবার ডুব দিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে শাপলার মাঝে। অতিথি পাখিদের এমন খুনসুঁটি আর ছোটাছুটি যে কারো মনকে মোহনীয় করে তুলেছে।

ষড়ঋতুর এই দেশে শীত উৎসবটা অন্য যেকোনো জায়গার চেয়ে জাবি ক্যাম্পাসে একটু ভিন্ন রকাম। কারণ, শীতের সময়ে অতিথি পাখির কিচিরমিচির আওয়াজের সাথে বসবাসের বিরল সুযোগ মেলে ক্যাম্পাসবাসীর। লাল শাপলার মাঝে দূর থেকে আসা বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির বাহারি খেলায় মেতে ওঠার দৃশ্যে লেকগুলো এখন সেজেছে নতুন সাজে। এমন নতুন সাজে সজ্জিত ক্যাম্পাস আর হাজারো অতিথি পাখির কলকাকলি, জলকেলী, খুনসুঁটি দেখতে দর্শনার্থীরাও আশা শুরু করেছেন। এর সৌন্দর্য নিজ চোখে অবলোকন না করলে উপলব্ধিতেও আসবে না এর মোহনীয় সৌন্দর্য। লাল শাপলার মাঝে ধূসর রঙের হরেক প্রজাতির পাখি মেলে ধরেছে জাবি ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে।

প্রতি বছর উত্তরের শীতপ্রধান সাইবেরিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া, নেপাল, জিনজিয়াং ও ভারতে প্রচুর তুষারপাত হওয়ায় পাখিরা টিকতে না পেরে অতিথি পাখিরা দক্ষিণ এশিয়ার নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল হিসেবে বাংলাদেশে আসে। মূলত এরা অক্টোবরের শেষ ও নভেম্বরের প্রথম দিকে আসে। তবে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক অতিথি পাখি আসে এ ক্যাম্পাসে। এরা অতি শীতপ্রবণ উত্তর মেরু থেকে নিজেদের বাঁচাতে শুধু ডানায় ভর করে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে এখানে আসে। আবার মার্চের শেষ দিকে এরা তাদের আপন ঠিকানায় ফিরে যায়। বাংলাদেশে যে কয়টি অভয়াশ্রমে অতিথি পাখি আসে তার মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট-বড় ১০ থেকে ১২টি লেক থাকলেও পাখি আসে মূলত চারটি লেকে। এ লেকগুলোকে অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের গবেষণা তথ্যমতে, জাবির লেকগুলোতে ১৯৮৬ সালে সর্বপ্রথম অতিথি পাখি আসে। তখন ক্যাম্পাসে ৯৮ প্রজাতির পাখির দেখা মিলেছে। সাধারণ দুই ধরনের পাখির আগমন ঘটে এ ক্যাম্পাসে। এক ধরনের পাখি ডাঙায় বা শুকনো স্থানে বা ডালে বসে বিশ্রাম নেয়। আরেক ধরনের পাখি পানিতে থাকে ও বিশ্রাম নেয়। এদের বেশির ভাগই হাঁস জাতীয়।

Image result for অতিথি পাখির ছবি

বর্তমানে জাবির এ আঙিনায় সরাল, পিচার্ড, গার্গেনি, মুরগ্যাধি, মানিকজোড়, কলাই, নাকতা, জলপিপি, ফ্লাইপেচার, কোম্বডাক, পাতারি, চিতাটুপি, লাল গুড়গুটিসহ সর্বমোট ১৯৫ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। এর মধ্যে ১২৬টি দেশীয় প্রজাতির এবং ৬৯টি বিদেশি। প্রতি বারের মতো এবারো পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জানুয়ারি মাসের প্রথম অথবা ২য় সপ্তাহে পাখি মেলার আয়োজন করা হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে, পাখির বসবাসের উপযোগী ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা, অতিথি পাখি আসা শুরু করলেও এদের নিরাপত্তার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, যে লেকগুলো কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা ছিল সেসবের বেশিরভাগই ছিড়ে গেছে। এখনও পর্যন্ত মেরামত হয়নি। একারণে অনেক দর্শনার্থী লেকের কাছে গিয়ে পাখিকে বিরক্ত করেন, ভয় দেখান। পাখি যেন বিরক্ত না হয় বা উড়ে চলে না যায় সে জন্য লেকগুলোর পাশে হর্ন বাজানো, কোন ধরনের বাঁশি বাজানো, উচ্চ শব্দ করা, মিছিল করাসহ ইত্যাদি বিষয়ে সতর্কীকরণ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দিতে দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর